আন্তর্জাতিক মাফিয়াদের বাগে পাওয়া কঠিন

 

স্বর্ণ চোরাচালান সংক্রান্ত চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে পুলিশ, এটি আশার কথা। গোয়েন্দা সংস্থা প্রণীত সোনা চোরাচালানে জড়িত মাফিয়াদের তালিকায় নাম থাকা বেশ কয়েকজনকে সম্প্রতি গ্রেফতার করা হয়। এদের কাছ থেকেই মিলেছে নতুন তথ্য। হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বড় বড় সোনার চালান আসছে মল আর ময়লার ট্রলিতে। আর এসবের বেশির ভাগই বহন করছে পরিচ্ছন্নতা এবং মলমূত্র পরিবহনের কাজে নিয়োজিত দুটি বেসরকারি সংস্থার মহিলা ক্যারিয়ার। প্রকৃতপক্ষে বিমানবন্দরে কর্মরত এ রকম ৬টি সংস্থা আন্তর্জাতিক মাফিয়া চক্রের স্থানীয় এজেন্ট ও ক্যারিয়ার হিসেবে কাজ করছে। এদের মদদ দিচ্ছেন বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) একাধিক অসৎ শীর্ষ কর্মকর্তা। অর্থাৎ এদেশীয় এজেন্টদের সহায়তায়ই আন্তর্জাতিক মাফিয়া চক্র বিমানবন্দরে সোনার চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ করছে। আর মাফিয়া চক্রটি গড়ে উঠেছে ৪০টি আন্তর্জাতিক সিন্ডিকেট নিয়ে।

গত প্রায় দুবছর ধরে বিমানবন্দরে ঘন ঘন পাচারকৃত সোনা উদ্ধারের ঘটনা ঘটছে। গত ১১ মাসে ঢাকার শাহজালাল, চট্টগ্রামের শাহ আমানত এবং সিলেটের ওসমানী এ তিন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে প্রায় সোয়া ৪০০ কেজি সোনার বার উদ্ধার করা হয়েছে। এর আগে উদ্ধারকৃত স্বর্ণের পরিমাণ আরও বেশি। ধারণা করা যায়, উদ্ধারকৃত স্বর্ণের চেয়ে অনেক বেশি স্বর্ণ নাগালের বাইরে চলে গেছে। বিপুল অংকের অর্থের বিনিময়েই এ সুযোগ তৈরি করে দেয়া হয়েছে। বস্তুত এ প্রলোভনেই বাংলাদেশ বিমান ও বিমানবন্দরে কর্মরত অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী এ চক্রে জড়িয়ে পড়েছে।

সোনা পাচারের ঘটনায় ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে ৬৯টি মামলা হয়েছে। তবে বেশির ভাগ মামলার তদন্ত নেই বললেই চলে। কোনো অপরাধের বিচার না হলে তা অব্যাহতভাবে চলতে থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। সোনা চোরাচালান অব্যাহত থাকার এটাও একটি কারণ। এ অবস্থায় স্বর্ণ চোরাচালান চক্রের এদেশীয় এজেন্টদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়াটাই বেশি জরুরি। কারণ আন্তর্জাতিক মাফিয়াদের বাগে পাওয়া কঠিন। ইতঃপূর্বে সোনা চোরাচালানে জড়িত দেশীয় কয়েকজনের গ্রেফতারের কথাও আমরা জানি। গত বছর নভেম্বরে দেশে স্বর্ণ চোরাচালানের টপ সিন্ডিকেটের তিনজনসহ পাঁচ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। তখন বলা হয়েছিলো, এদের গ্রেফতার করা হয়েছে সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে। তবে তার ফলোআপ আমাদের অজানা। গর্ষের ভেতর ভূত থাকলে যে কোনো অপরাধই দমন করা কঠিন। এ ভূত তাড়াতে হয় যে কোনো উপায়ে। এজন্য প্রয়োজনে বিশেষ কৌশল অবলম্বন করতে হয়। পুলিশ যেহেতু বিমানবন্দরে স্বর্ণ চোরাচালান সংক্রান্ত নতুন তথ্য পেয়েছে এবং এ চক্রের সাথে জড়িত কয়েকজনকে গ্রেফতারও করেছে, সেহেতু আমরা আশা করব দেশের বিমানবন্দর দিয়ে সোনা পাচারের মূল হোতারা এবার ধরা পড়বে। সিঙ্গাপুরে অবস্থানরত একটি বেসরকারি এয়ারলাইন্সের কথিত পরিচালক নাকি আন্তর্জাতিক মাফিয়াদের নিয়ন্ত্রণ করছেন। বিদেশ থেকে পাঠানো সোনার চালান আসছে তার মাধ্যমেই। দেশে স্বর্ণ পাচারের এ মূল হোতা যত প্রভাবশালীই হোন, তিনি যেন কোনোভাবেই পার পেয়ে না যান। তাকে গ্রেফতারে সর্বাত্মক চেষ্টা নেয়া হোক। স্বর্ণ চোরাচালান রোধ করতে হবে যে কোনো উপায়ে।

Leave a comment