অপহরণ নয় চুয়াডাঙ্গার স্কুলছাত্র সাব্বির আপন মাকে খুঁজতে বেরিয়ে হয় নিরুদ্দেশ

 

ম্যাসেজের সূত্র ধরে নিখোঁজ সন্তানের খোঁজ : ২৮ দিন পর নারায়গঞ্জ থেকে ফেরানো হলো বাড়ি

স্টাফ রিপোর্টার: সাব্বিরকে অবশেষে খুঁজে পাওয়া গেছে। তাকে অপহরণ নয়, সে নিজেই নিরুদ্দেশ হয়ে খুলনা হয়ে ঢাকার নরায়ণগঞ্জে ওঠে। সেখানে এক ব্যক্তির আশ্রয় পেয়ে নিরাপদেই ছিলো। আশ্রয়দাতা বাবুর মোবাইলফোন দিয়ে সাব্বির তার পিতা চুয়াডাঙ্গা পলাশপাড়ার ফেলু শেখের নিকট ম্যাসেজ দেয়। ওই ম্যাসেজের সূত্র ধরেই তার পিতা তাকে খুঁজে পান।

গত বৃহস্পতিবার রাতে তাকে বাড়ি পলাশপাড়ায় ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে। বাড়ি ফেরানোর পর স্থানীয়রা মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছে, পুলিশের ধারণাই শেষ পর্যন্ত সত্যি হলো। সাব্বির চুয়াডাঙ্গা ঝিনুক বিদ্যাপীঠ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র। গত ২০ আগস্ট সে বাড়ি থেকে স্কুলের উদ্দেশে রওনা হয়ে নিখোঁজ হয়। পিতা ফেলু শেখ সদর থানায় জিডি করার পাশাপাশি পত্রিকায় হারানো বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ছেলের সন্ধান চান। বিজ্ঞপ্তিতে দেয়া মোবাইলফোনে চুয়াডাঙ্গা মাখালডাঙ্গার মোক্তার হোসেনের ছেলে জোবায়ের মুক্তিপণ দাবি করে। সে একেক সময় একেক রকম ভীতিকর হুমকি দিয়ে মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টা করতে থাকে। চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অদূরবর্তী মার্কেটের এক বিকাশ এজেন্টের নম্বরও দেয়া হয়। যে মোবাইলফোন থেকে মুক্তিপণ দাবি করা হয়, ওই মোবাইল নম্বরটি আলমডাঙ্গা যাদবপুরের এক নারীর নামে রেজিস্ট্রেশন করা। এসব উদ্ধার করে পুলিশ যেমন পড় ধন্ধে, তেমনই শিশু সাব্বিরের পিতা গুণতে থাকেন অনিশ্চয়তার প্রহর। সাব্বিরের সৎ মাকেও সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখতে শুরু করে প্রতিবেশীসহ অনেকে। পত্রিকায় অপহরণ রহস্য উন্মোচনের দাবি জানিয়ে প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়। মাখালডাঙ্গার জোবায়েরকে চুয়াডাঙ্গা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। সাব্বিরের সৎ মাকেও নেয়া হয় থানায়। সকলের নিকট থেকে তথ্য নিয়ে সদর থানা পুলিশ অনেকটা নিশ্চিত হয়, সাব্বির অপহৃত হয়নি, বরঞ্চ সে নিজেই নিরুদ্দেশ হয়েছে। পুলিশ এ মন্তব্য করলে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচলের সৃষ্টি হয়। সাব্বিরের পিতা ফেলু শেখের সামনে নেমে আসে অজানা অন্ধকার।

অবশেষে সম্প্রতি ফেলু শেখের মোবাইলফোনে আসে একটি ম্যাসেজ। ম্যাসেজটি তার ছেলে সাব্বিরেরই যে পাঠানো তা নিয়ে সন্দেহ থাকে না। এ ম্যাসেজের মোবাইল নম্বর ধরে খুঁজতে গিয়েই মেলে সাব্বিরের সন্ধান। গত পরশু বৃহস্পতিবার তাকে ঢাকা নারায়ণগঞ্জের ওই আশ্রয়দাতা বাবুর নিকট থেকে সাব্বিরকে বাড়ি ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এ সময় সাব্বির বলেছে, ‘বাড়িতে সৎ মা ঠিকমতো খেতে দেয় না। সে কারণে স্কুলের উদ্দেশে বের হয়ে আপন মায়ের সন্ধানে যশোরের উদ্দেশে ট্রেনযোগে রওনা হই। যশোর ছাড়িয়ে নওয়াপাড়ার এক ভিক্ষুকের সাথে দেখা হয়। তিনি নিয়ে যান খুলনার বটিয়াঘাটার বিরেট গ্রামে। সেখানে কয়েকদিন থাকার পর আশ্রয়দাতা ভিক্ষুক যখন আমাকে ভিক্ষে করতে বলে তখন খারাপ লাগে। মারধর শুরু করে। ওই বাড়ির পাশের এক মহিলা ২০ টাকা দেন। সেই টাকা নিয়ে সুযোগ বুঝে চলে যাই স্টেশনে। ট্রেনে উঠি। ঘুমিয়ে পড়ি। ট্রেন যখন থামে তখন দেখি আমি ঢাকায় পৌছে গেছি। স্টেশনেই ঘোরাঘুরির সময় বাবু নামের এক ব্যক্তির সাথে দেখা হয়। তিনিই নিয়ে যান তার বাড়ি নারায়ণগঞ্জে। সেখানে তার কসমেটিক্সের দোকানে কাজ করতাম, খেতাম, ঘুমোতাম। একদিন তার মোবাইল থেকে আব্বুর মোবাইলফোনে ম্যাসেজ দিই। ম্যাসেজের ওই মোবাইলে ফোন করে বিস্তারিত জানার পর আমার আব্বু আমাকে ফিরিয়ে এনেছে।’