স্টাফ রিপোর্টার: মাধ্যমিক ও নিম্ন মাধ্যমিকের বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হতে এখনও প্রায় তিন মাস বাকি। অথচ গাইড প্রকাশকরা এখনই নতুন শিক্ষাবর্ষকে টার্গেট করে গাইডবই বিক্রিতে উঠে পড়ে লেগেছে। গাইড প্রকাশকের প্রতিনিধিরা চুয়াডাঙ্গার বিদ্যালয়গুলোতে গাইড বই বিক্রি করতে প্রধান শিক্ষকদের সাথে ডোনেশন চুক্তি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
দেশে মাধ্যমিক ও নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ১ জানুয়ারি নতুন শিক্ষবর্ষ শুরু হচ্ছে। নতুন শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে নবপুঁথিঘর, পাঞ্জেরী, নবদূত, বইঘর, অনুপম, গুরুগৃহ, জুপিটার, পপি পাবলিকেশনসহ বেশ কয়েকটি নামী-দামি প্রতিষ্ঠান বিষয়ভিত্তিক ১ম শ্রেণি থেকে ৯ম শ্রেণি পর্যন্ত গাইড প্রকাশ করেছে। বাংলা ব্যাকরণ, ইংরেজি ব্যাকরণ, অর্থনীতি, ধর্ম, সামাজিক বিজ্ঞান, কম্পিউটার শিক্ষা, কৃষি শিক্ষা, ব্যবসায় উদ্যোগ, হিসাব বিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, রসায়ন, পদার্থবিজ্ঞানসহ বিষয়ভিত্তিক এসব গাইড বাজারজাতকরণে প্রকাশকের প্রতিনিধিরা প্রধান শিক্ষকদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন। বিদ্যালয়গুলোতে ডোনেশনের নামে করা হচ্ছে অনৈতিক চুক্তি। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে এ ডোনেশনের টাকা নির্ধারণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বিদ্যালয় প্রতি ২০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে আগাম এক লাখ টাকা পর্যন্ত ডোনেশন দেয়া হচ্ছে। শুধু ডোনেশনই নয়, তার সাথে সারা বছরের সকল পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বিনামূল্যে দেয়ারও চুক্তি হচ্ছে। সৃজনশীল প্রশ্ন তৈরিতে অনেক সময় লাগার কারণে অনেক বিদ্যালয়ই বিনামূল্যের প্রশ্নপত্রের সুবিধা নিচ্ছে। প্রধান শিক্ষকদের সাথে ডোনেশন চুক্তি ছাড়াও বিষয়ভিত্তিক যেসব শিক্ষকের টিউশনি রয়েছে তাদের সাথে গাইড চালানোর শর্তে প্রকাশকরা পৃথক টাকার চুক্তিও করছে বলে অভিযোগ।
আরও জানা যায়, ২শ’ টাকা মূল্যের একটি গাইডের দাম ধরা হয়েছে ৬৫০ টাকা পর্যন্ত। প্রকাশকরা গাইড প্রতি দ্বিগুণ বা তিনগুণ দাম বেশি ধরছে। বাড়তি এ টাকা শিক্ষার্থী অভিভাবকদের পকেট থেকেই প্রকাশকরা হাতিয়ে নেবে এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে। অবস্থাটা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, এখন ১ম শ্রেণি থেকে ৯ম শ্রেণির সকল শিক্ষার্থীকে গাইড কিনতে হচ্ছে। আবার অনেক শিক্ষক গাইড বই শ্রেণিকক্ষে পড়াচ্ছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। সৃজনশীল পদ্ধতিতে মূল বই পড়াতে হলে শিক্ষকদের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করতে হয়। আর এজন্য শিক্ষকদের পড়ালেখা করে বিদ্যালয়ে আসতে হয়। অনেক শিক্ষক বাড়িতে এতই প্রাইভেট পড়ানো নিয়ে ব্যস্ত থাকেন যে, তারা আর পড়াশোনার সময় পান না। তাই শিক্ষকরা শ্রেণিকক্ষে গাইড বই পড়ান। শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্টরা শিক্ষকদের গাইড নির্ভরতা প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীদের গাইড নির্ভরশীলতা সৃজনশীল পদ্ধতি প্রয়োগে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সংশ্লিষ্ট মহলের পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছে শিক্ষানুরাগী মহল।