সারাদেশে ইয়াবার বিস্তার ঘটছে মারাত্মকভাবে

 

সারাদেশে ইয়াবার বিস্তার ঘটছে মারাত্মকভাবে। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, সর্বনাশা ইয়াবা শহরের উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্তসহ প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের আশঙ্কাজনকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ জড়িয়ে পড়ছে এ ব্যবসার সাথে। এরা শুধু সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে মাদকের কালোথাবা পৌছেই দিচ্ছে না, নিজেরাও মাদকে নেশাগ্রস্ত হয়ে অনিশ্চয়তার দিকে ধাবিত হচ্ছে। প্রতিকার?

কোথায় কে বা কারা এসব মাদক পাচার করে, কারা ছড়িয়ে দেয় সমাজের শিরা-উপশিরায়, তা নিশ্চয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহের মাঠ পর্যায়ের কর্তব্যরত কর্তাদের অজানা নয়।

কেবল তরুণরা নয়, প্রায় সব বয়সী লোকই এ নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েছে। অনেকে এজেন্ট হিসেবেও কাজ করছে। রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মধ্যেও অনেকে ইয়াবাসক্ত হয়ে পড়েছে। আসক্তি বেড়েছে একশ্রেণির পুলিশের মধ্যেও। শোবিজের কতিপয় তারকার বিরুদ্ধেও ইয়াবা সেবন এবং এ ব্যবসার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। ডিস্কো পার্টির আড়ালে চলছে ইয়াবা মাদকের জমজমাট ব্যবসা। গত মাসে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক অধিক শাখা-৬’র স্মারকপত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রকাশিত খবরে ৭৬৪ জন ইয়াবা ব্যবসায়ীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি, তার ভাইবোন, নিকট আত্মীয়, কাউন্সিলরসহ অনেকের নাম রয়েছে। ওই তালিকায় ৭ জন পুলিশ কর্মকর্তার নামও রয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের গুরুত্বপূর্ণদের মধ্যে রয়েছে, কক্সবাজার এলাকার গোয়েন্দা পুলিশের সাবেক একজন এএসআই যিনি বর্তমানে হাইওয়ে পুলিশে কর্মরত। হাইকোর্টের একজন আইনজীবীসহ আরো অনেকে যুক্ত এ সিন্ডিকেটে। গত তিন মাসে এ সিন্ডিকেট ২৮ কোটি ৪৪ লাখ ১৩ হাজার টাকা ইয়াবার জন্য লেনদেন করেছে বলে তথ্য পেয়েছে ৱ্যাব। অধিক লাভজনক বলেই বাংলাদেশে ইয়াবার বিস্তার অপ্রতিহত, তা মনে করার কোনো কারণ নেই। দুনিয়াব্যাপি মাদক ব্যবহারের সাথে জাতি ধ্বংসের তৎপরতার কথা বলা হয়। আমাদের দেশেও উচ্চ শিক্ষিত, মধ্যবিত্ত, তরুণ ও মেধাবীদের যেভাবে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মাদকাসক্ত করে ফেলা হচ্ছে তার পেছনে জাতি বিনাশী গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে। অনেকদিন থেকেই ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথা দেশের সচেতনমহল থেকে বলা হচ্ছে। বাস্তবে সবই অরণ্যরোদনে পরিণত হয়েছে। সীমান্তে বিজিবির কার্যকর তৎপরতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বিজিবির মহাপরিচালক বলেছেন, ইয়াবা নিয়ে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। প্রশ্ন ওঠে, সীমান্তে যদি প্রহরা ঠিকমতো থাকে তাহলে সীমান্ত দিয়ে মাদক প্রবেশ করছে কীভাবে? উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, ইয়াবার বিস্তার এতোটাই ভয়াবহ হয়ে দাঁড়িয়েছে যে ঘরের কাছের ফার্মেসিতে পাওয়া যাচ্ছে। ফার্মেসিগুলো জীবনরক্ষাকারী ওষুধ বিক্রির জন্য নির্ধারিত। সেখানে মাদকের প্রবেশ ঘটছে কীভাবে তা খুঁজে বের করতে হবে। এর সাথে ওষুধ নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কোনো পর্যায়ের সদস্যর সম্পর্ক রয়েছে কি-না তাও খুঁজে দেখা দরকার। ফার্মেসিতে এ ধরনের মাদক পাওয়া গেলে শুধু দোকান বন্ধই নয়, এর সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

ইয়াবা নামক মাদক ব্যবসার সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িতরা যতো ক্ষমতাবানই হোক, তাদের ধরতে হবে, আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। ইয়াবার মতো ভয়াবহ মাদক ব্যবসার সাথে জড়িতদের খুঁজে বের করে এর মূলোৎপাটনের কাজটি শুরু করা যেতে পারে। সমাজের সচেতন মানুষগুলোকেও মাদকবিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলতে সচেতনতার আলো ছড়াতে হবে। প্রয়োজনে আইন প্রয়োগে সংশ্লিষ্টদের ঘুম ভাঙানোর পদক্ষেপও নিতে হবে।

Leave a comment