নভেম্বরে নির্বাচনী তফশিল ঘোষণা : ডিসেম্বরে ভোট

দর্শনা পৌর নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্ভাব্য প্রার্থীরা অবস্থান মজবুত করতে ব্যস্ত
হারুন রাজু/হানিফ মণ্ডল: চলতি বছরের নভেম্বর মাসেই দর্শনা পৌর নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা হবে। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে। এ নির্বাচনকে সামনে রেখে আগেভাগেই মাঠ চষছেন প্রার্থীরা। মেয়র প্রার্থীর পাশাপাশি কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে পুরাতনদের তুলনায় নতুনরাই প্রচার-প্রচারণায় সরগরম করে তুলেছেন দর্শনা শহর। নির্বাচনের দিনক্ষণ এখনো নির্ধারণ না হলেও সকল পদের প্রার্থীই রাজনৈতিক দলের সমর্থনের প্রত্যাশায় দিন গুনছেন এবং নীতিনির্ধারক ও দলের নেতৃবৃন্দের সাথে সমন্বয় রেখেছেন অব্যাহত।
দর্শনার গুরুত্বের কথা ভেবেই ১৯৯২ সালে তৎকালীন দর্শনা ইউনিয়নকে বিভক্ত করে প্রতিষ্ঠিত করা হয় দর্শনা পৌরসভা। আলাদাভাবে গঠন করা হয় পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়ন পরিষদ। ১৮/২০টি মহল্লা নিয়ে গঠিত দর্শনা পৌরসভা বিভিন্নভাবে ঐতিহ্যমণ্ডিত। দর্শনা পৌরসভা প্রতিষ্ঠার প্রায় দু যুগ পেরিয়েছে। এরই মধ্যে দর্শনা পৌরসভাকে ২য় শ্রেণিতে উন্নীত করা হয়েছে। ২য় শ্রেণির পৌরসভা হলেও সেবার মান ৪র্থ শ্রেণির পৌরসভার চেয়েও কম। বারবার হয়েছে ক্ষমতার সিংহাসন বদল। বদলায়নি পৌরবাসীর ভাগ্য। ন্যায্য সুবিধা থেকে পৌরবাসী বারবার হচ্ছে বঞ্চিত। চুয়াডাঙ্গা জেলার সীমান্ত ঘেঁষা মাথাভাঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত একমাত্র শিল্প শহর দর্শনা। এ শহরের রয়েছে এশিয়া মহাদেশের ২য় বৃহত্তম কেরুজ চিনিকল ও ডিস্টিলারি কমপ্লেক্স, একটি আন্তর্জাতিকসহ দুটি রেল স্টেশন, স্থলবন্দর ইয়ার্ড, কাস্টমস সার্কেল কার্যালয়, চেকপোস্ট, সরকারি কলেজ, উপজেলা পশু হাসপাতাল, পৌর মার্কেট, দুটি বাজার, পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র, সরকারি-বেসরকারি অসংখ্য প্রতিষ্ঠান। ঐতিহাসিক নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে কেরুজ চিনিকল, দর্শনা মেমনগরে নীলকুঠির, মেমনগর বিডি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ইত্যাদি। সবমিলিয়ে জেলার মধ্যে দর্শনার গুরুত্বের কোনো কমতি নেই। এ গুরুত্বের কথা ভেবেই তৎকালীন সমাজসেবকরা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে পৌরসভায় উন্নীত করেন দর্শনাকে। ১৯৯১ সালের ২৭ নভেম্বর দর্শনাকে পৌরসভায় রূপ দেয়া হয়। পৌরসভার কার্যক্রম শুরু করা হয় পরের বছর ১ ফেব্রুয়ারি থেকে। প্রতিষ্ঠাকালীন পৌর প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করেন তৎকালীন দামুড়হুদা থানা নির্বাহী কর্মকর্তা মোসলেহ উদ্দিন। ১৯৯২ সালে অনুষ্ঠিত হয় পৌরসভার প্রথম নির্বাচন। এ নির্বাচনে প্রথম চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন বিএনপি নেতা প্রয়াত আক্তারুল ইসলাম আক্তার। ১৯৯৭ সালে পৌরসভার ২য় নির্বাচনে হয় রদবদল। চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন আ.লীগ নেতা মতিয়ার রহমান। তিনি পরপর দু বার আক্তারুল ইসলামকে পরাজিত করে পৌর চেয়ারম্যান ও মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১১ সালের ১৩ জানুয়ারি পৌরসভার ৪র্থ নির্বাচনে মতিয়ার রহমানকে পরাজিত করে মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হন বর্তমান মেয়র বিএনপি নেতা মহিদুল ইসলাম। ওই বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি নির্বাচিতরা শপথ গ্রহণ করেন। দেখতে দেখতে নির্বাচনের প্রায় ৫ বছর ধরধর অবস্থা। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতোমধ্যেই খানেকটা অগেভাগেই নীরব প্রচারণায় মাঠে নেমেছেন সাম্ভাব্য প্রার্থীরা। এরই মধ্যে জামায়াতে ইসলাম দলের পক্ষ থেকে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করলেও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে কোনো প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়নি। বৃহত্তর দুটি রাজনৈতিক দলের পক্ষে একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন প্রাত্যাশী। শেষ পর্যন্ত কে কে দলের টিকেট নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তা সময়ের অপেক্ষামাত্র। আগামী নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন, বর্তমান মেয়র বিএনপি নেতা মহিদুল ইসলাম, সাবেক মেয়র দর্শনা পৌর আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমান, এমপি আলী আজগার টগরের সহোদর আ.লীগ নেতা আলী মুনসুর বাবু, দর্শনা পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মহিদুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাহারুল ইসলাম মাস্টার, জামায়াতের ঘোষিত প্রার্থী জামায়াত নেতা আশকার আলী। সময়ের সাথে সাথে প্রার্থীর সংখ্যা বাড়তে কিংবা কমতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আ.লীগ ও বিএনপির সাম্ভাব্য প্রার্থীরা দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যাবেন না বলে জানানো হয়েছে। সাবেক মেয়র মতিয়ার রহমান বলেছেন, অবশ্যই দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী। বিশ্বাস করি দল থেকে আমাকেই মনোনয়ন দেবে। কারণ পৌরবাসী আমাকে ভালোবাসে। আলী মুনসুর বাবু নিজেকে প্রার্থী হিসেবে স্বীকার না করলেও নেতাকর্মীদের মুখে মুখে শোনা যাচ্ছে তার নাম। সমাজসেবামূলক কার্যক্রমে বেশ এগিয়েছেন তিনি। এ ক্ষেত্রে আ.লীগ নেতা আলী মুনসুর বাবু বলেছেন, নেতাকর্মী ও দলের সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত হবে। দল থেকে যাকে মনোনয়ন দেবে তাকেই মেনে নেবো। বিএনপি নেতা বর্তমান মেয়র মহিদুল ইসলাম দলের মনোনয়নের আশায় আছেন। সেই সাথে দলের মনোনয়নের প্রত্যাশায় রয়েছেন পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মহিদুল ইসলাম ও সাবেক যুবদল নেতা নাহারুল ইসলাম। মেয়র প্রার্থী ছাড়াও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীরাও বসে নেই। বর্তমান কাউন্সিলরদের মধ্যে অনেকেই ইতঃপূর্বে নির্বাচন করবে না বলে ঘোষণা দিলেও তারা এখন মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছেন। ছুটছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। পুরোনোদের সাথে পাল্লা দিয়ে নতুন প্রার্থীরাও থেমে নেই। নতুন প্রার্থীদের মধ্যে অনেকেই ছবি সংবলিত ডিজিটাল ব্যানার ঝুলিয়েছেন রাস্তার মোড় ও ওয়ার্ডের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে। তবে ভোটারদের মধ্যে শোনা যাচ্ছে হরেক রকমের কথা। আগামী নির্বাচনে ভোটারের সংখ্যা বাড়ছে। গত নির্বাচনে ২৪ হাজার ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পেলেও গত ৫ বছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩০ হাজারে। দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাচন অফিসার আবু দাউদ বলেছেন, নভেম্বর মাসেই ঘোষণা দেয়া হতে পারে দর্শনা পৌর নির্বাচনী তফশিল। ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে হতে পারে নির্বাচন।