মক্কায় মসজিদ আল-হারামে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটেছে। নির্মাণকাজের ক্রেন ভেঙে নিহত শতাধিক ব্যক্তির মধ্যে একজন বাংলাদেশি রয়েছেন। ঘটনাটি মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদারক। গত শুক্রবার স্থানীয় সময় মাগরিবের নামাজের কিছুক্ষণ আগে পবিত্র কাবায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় নিহতের পাশাপাশি আহত হয়েছেন অন্তত ২৩৮ জন। পবিত্র হজের মাত্র দু সপ্তাহ আগে এ ভয়াবহ দুর্ঘটনা বিশ্ববাসীকে হতবাক করেছে বটে। যদিও দুর্ঘটনার জন্য প্রাথমিকভাবে বলা হয়েছে, প্রচণ্ড ঝড় বৃষ্টিই দায়ী। অবশ্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বলা হয়েছে, তদন্ত রিপোর্ট জনসম্মুখে প্রকাশ করা হবে বলেও সৌদি সরকারের তরফে জানানো হয়েছে।
হজ একটি বার্ষিক ফরজ ইবাদত। এ ফরজ আদায়ের জন্য প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান মক্কায় গমন করেন। এ বছরও একই উদ্দেশে বিশ্বের লাখ লাখ মুসল্লি মক্কা শরিফে অবস্থান করছেন। অনেকেই মক্কা মুখি। শুক্রবার জুমার দিন হওয়ায় মসজিদ আল-হারাম ছিলো মুসল্লির উপচেপড়া ভিড়। মসজিদটির চারপাশে প্রায় চার লাখ বর্গমিটার জায়গা সম্প্রসারণের কাজ চলছিলো। সম্প্রসারণ কাজ সম্পন্ন হলে এখানে অন্তত ২২ লাখ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। সম্প্রসারণ কাজ উপলক্ষে মসজিদটি বেশ কয়েকটি ক্রেন দিয়ে বেষ্টিত ছিলো, যার একটি মাগরিবের নামাজের আধা ঘণ্টা আগে মসজিদের তৃতীয় তলায় বিধ্বস্ত হয়। দুর্ঘটনার সময় প্রচুর বৃষ্টিপাত ও সেই সাথে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাচ্ছিলো।
প্রতি বছর প্রায় ৪০ লাখ মুসলমান হজ পালন করতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে মসজিদ আল-হারামে সমবেত হন। দুর্ঘটনার আগ পর্যন্ত প্রায় ৮ লাখ মানুষ হজ পালনের জন্য মক্কায় অবস্থান করছিলেন। বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর অন্তত এক লাখ মানুষ পবিত্র হজ পালনের উদ্দেশে মক্কায় যান। বাংলাদেশের বিভিন্ন দুর্যোগ-দুর্বিপাকে সৌদি আরব সব সময়ই বন্ধুত্বের হাত প্রসারিত করে এগিয়ে আসে। বন্ধুপ্রতিম একটি রাষ্ট্র এ ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ও মর্মান্তিক দুর্ঘটনার মুখোমুখি হওয়ায় আমাদের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী সমবেদনা জানিয়েছেন। দুর্ঘটনার ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে দেশটি দ্রুত পদক্ষেপ নেবে- এমনটিই প্রত্যাশা আমাদের।
পবিত্র হজ মরসুমে বিশ্বের ধর্মপ্রাণ অসংখ্য মানুষের সমাবেশ ঘটে যেখানে সেখানে সম্প্রসারণ বা সংস্কার কাজ চলমান রাখা কতোটা বাস্তবসম্মত হয়েছে- তা নিয়ে সৌদি কর্তৃপক্ষ নিশ্চয়ই ভাববে।