স্টাফ রিপোর্টার: শিক্ষার্থীদের ভ্যাটবিরোধী আন্দোলনে গতকাল রোববারও অচল ছিলো ঢাকা। এদিন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা একযোগে ঢাকার রাজপথ দখলে নেয়। তারা কমপক্ষে ৯টি পয়েন্টে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাস্তা অবরোধ করে রাখে। এছাড়া আরও ৬টি পয়েন্টে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে মানববন্ধন করে। রাস্তা অবরোধের কারণে জনভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছিলো। ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট এবং সাভারের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপকভাবে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আজও রাজপথ অবরোধের ঘোষণা দিয়েছে। তারা জানায়, প্রত্যাহারের ঘোষণা না আসা পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। একই সাথে তারা ভ্যাট প্রত্যাহারের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এ পরিস্থিতিতে গতকাল রোববার অর্থমন্ত্রী কিছুটা নমনীয় মনোভাব প্রকাশ করেছেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভ্যাট ইস্যুতে আলোচনার দ্বার রুদ্ধ নয়। সরকার অনমনীয় নয়। বিষয়টি পুনর্বিবেচনার ইঙ্গিত দেন তিনি। শিক্ষার্থীদের রাজপথ অবরোধ কর্মসূচিতে অধিকাংশ স্থানে পুলিশকে ভিন্ন ভূমিকায় দেখা গেছে। এদিন তারা শিক্ষার্থীদের রাস্তা থেকে উঠিয়ে দেয়নি। উল্টো অনেক জায়গায় পুলিশ আন্দোলনকারীদের পানি খাইয়ে ও সড়ক বন্ধ করে সহায়তা করেছে। এ আন্দোলন নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকেও তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখানো হচ্ছে না। আন্দোলনের কারণে ঢাকায় দুটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া তৃতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভ্যাট না নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এর আগে বৃহস্পতিবার ব্র্যাক এবং ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি ছাত্রদের কাছ থেকে ভ্যাট নেয়ার ঘোষণা দেয়। নতুন করে ভ্যাটের পাশাপাশি ৩ বছর বেতন না বাড়ানোর কথা জানিয়েছে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি। আর ইতোমধ্যে নেয়া ভ্যাট সমন্বয়ের কথা বলেছে ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, প্রকাশ্যে ইতিবাচক অবস্থান থাকলেও অন্তরালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিসহ প্রশাসন ও মালিক পক্ষের সাথে আলাদাভাবে আলোচনা করেছেন। তারা আন্দোলন বন্ধে কর্তৃপক্ষের সহায়তা কামনা করেন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনের সাথে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন একাত্মতা প্রকাশ করেছে। ভ্যাট প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্র ফেডারেশন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে লাগাতার অবস্থান ধর্মঘটের ঘোষণা দিয়েছে। বিপরীত দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে, ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে তারা আজও রাজপথ অবরোধ করবে। তারা সকাল ৯টায় শুরু করবে এ কর্মসূচি। এতে সবাইকে উপস্থিত থাকার আহ্বান জানানো হয়। টিউশন ফির ওপর আরোপিত সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) প্রত্যাহারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা গত কয়েক মাস ধরে আন্দোলন করছে। বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মতো ঢাকার রাজপথ অবরোধ করে। শুক্রবারও তাদের আন্দোলন ছিলো। ওইদিন তারা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ধর্মঘট ডাকে। পরদিন শনিবার ধর্মঘট শুরু হয়। দিন শেষে তারা রোববার ধর্মঘটের পাশাপাশি রাজপথ অবরোধের ঘোষণা দেয়। সেই কর্মসূচিই পালন করে তারা। ঢাকার এ কর্মসূচির সাথে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, খুলনা, ঢাকার নিকটবর্তী সাভারেও অবরোধ এবং বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
সরেজমিন রাজধানীর ধানমণ্ডি, কলাবাগান, রাসেল স্কয়ার. শুক্রাবাদ, সোবহানবাগ, পান্থপথ, আসাদ গেট, বনানী, গুলশান ২ নম্বর, মহাখালী, রামপুরা ব্রিজ, বাড্ডা, নতুন বাজার, যমুনা ফিউচার পার্ক এলাকা ও উত্তরায় গেছেন। দেখা যায়, সকাল ১০টা থেকেই এসব পয়েন্টে শিক্ষার্থীরা অবরোধে নামে। রাস্তা অবরোধ করে তারা ওইসব এলাকায় বিক্ষোভ করে। ফলে ওইসব সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে সংশ্লিষ্ট এলাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। এর প্রভাব পড়ে গোটা ঢাকা শহরে। প্রধান সড়কগুলোতে যানবাহন চলতে না পারায় অন্যগুলোতে তার চাপ বাড়ে। এতে অন্য এলাকায় প্রচণ্ড যানজট তৈরি হয়। একপর্যায়ে রাজধানীজুড়ে দেখা দেয় তীব্র যানজট।
গতকাল রোববার ভ্যাটবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি আদায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন। আসাদগেটে অবস্থানকালে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির ছাত্র আপন বলেন, এমনিতেই তাদের প্রতি সেমিস্টারে ৩৭ হাজার টাকা দিতে হয়। এরপর যদি সাড়ে ৭ ভাগ ভ্যাট দিতে হয়, তাহলে এর পরিমাণ অনেক বেড়ে যাবে। মনিকা নামে একজন ছাত্রী বলেন, ‘ভ্যাটের কারণে তাদের এখন পরিচয়পত্রের ওপরও বাড়তি অর্থ গুনতে হচ্ছে। এভাবে বিভিন্ন ফি বেড়ে গেছে। এখন যদি প্রধানমন্ত্রী হস্তক্ষেপ না করেন তাহলে এ ভ্যাট কমবে না। আর এ অবস্থা হলে তাদের অনেককে লেখাপড়া ছেড়ে দিতে হবে।’ উত্তরা হাউস বিল্ডিংয়ের সামনে অবস্থানকালে কামরুল হাসান নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ভ্যাট প্রত্যাহারে আমরা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাই। তিনি এগিয়ে না এলে এই ভ্যাট প্রত্যাহার হবে না। আমরা আশা করছি তিনি আমাদের সমস্যা সমাধান করবেন।