মাথাভাঙ্গা মনিটর: মক্কায় মসজিদ আল হারামে কিভাবে ক্রেন ভেঙে পড়লো তা নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। গতকাল শনিবার পর্যন্ত এ দুর্ঘটনায় অন্তত ১০৭ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছে ২৩৮ জন। আহতদের মধ্যে ৪০ জন বাংলাদেশিও রয়েছেন। সৌদি আরব সরকার গতকাল জানিয়েছে হজের কার্যক্রম যথারীতি চলবে। প্রাথমিকভাবে এ দুর্ঘটনার জন্য ঝড়ো বাতাসকে দায়ী করা হচ্ছে। মক্কায় এ দুর্ঘটনার জন্য বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক ও দুখ প্রকাশ করেছেন।
সৌদি আরবের পবিত্র মক্কা নগরের হারাম শরিফে ক্রেন ভেঙে পড়ার ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে কোনো বাংলাদেশি নেই। মক্কার শিশা মুয়াইসিমে (লাশ রাখার হিমঘর) প্রাথমিক খোঁজখবর নিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। আর যারা আহত হয়েছেন তাদের আঘাত সামান্য। দুর্ঘটনার পর মসজিদুল হারাম ও তার আশপাশের এলাকা ও হাসপাতালের কাছে মোবাইল নেটওয়ার্ক (জ্যামার দিয়ে) বন্ধ ছিলো। ফলে টিভিতে খবর দেখার পর দেশ থেকে অনেকেই হজ করতে আসা প্রিয়জনের সাথে যোগাযোগ করতে না পেরে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। ঘটনার পর তাৎক্ষণিকভাবে মক্কায় বাদশা আবদুল আজিজ হাসপাতাল ও আল নূর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, বাংলাদেশি যারা ভর্তি আছেন তারা সামান্য আহত হয়েছেন। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। তারা জানিয়েছেন দুর্ঘটনার পরে আতঙ্কে হুড়োহুড়ি করতে গিয়ে লোকজন আহত হয়েছে বেশি। তারা বলেন, বৃষ্টির কারণে মেঝে পিচ্ছিল থাকায় অনেকে দৌড় দিতে গিয়ে পড়ে আঘাত পান।
মক্কার কয়েকজন প্রবাসী জানালেন, ২০০৪ সালে টানেলে অনেক হজযাত্রী মারা গিয়েছিলেন। ২০০৬ সালে মক্কায় ভবন ধসে ও মিনায় জামারাতে পাথর নিক্ষেপ করতে গিয়ে মানুষ মরেছিলো। সেই সব ঘটনার পর ওই সব এলাকায় সতর্কমূলক নানা ব্যবস্থা নিয়েছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। এবার মসজিদুল হারামের ক্রেন ভেঙে পড়ার ঘটনার পর আরও সতর্ক হবে কর্তৃপক্ষ।
মসজিদ আল হারাম বা কাবা শরিফ মুসলমানদের কাছে পবিত্রতম স্থান। শুক্রবার প্রচণ্ড ঝড়ের মধ্যে একটি ক্রেন ভেঙে পড়ে। দুর্ঘটনাটি ঘটে এমন সময় যখন মক্কা শহরে বার্ষিক হজের প্রস্তুতি চলছে। এই মাসে পবিত্র হজ পালনের জন্য লাখ লাখ মানুষ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সৌদি আরবের এই শহরে আসবেন। মসজিদ আল-হারামে নামাজিদের সংখ্যা প্রতি বছর বৃদ্ধি পাওয়ায় গত বছর সৌদি কর্তৃপক্ষ মসজিদ সম্প্রসারণের কাজ শুরু করে। শুক্রবারে যে ক্রেন মসজিদের ছাদ ভেঙে পড়ে সেটা সম্প্রসারণের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছিলো। ইসলাম ধর্মের সব চেয়ে পবিত্র এ মসজিদের কেন্দ্রস্থলে কা’বা অবস্থিত, যার দিকে মুখ করে মুসলমানরা নামাজ পড়েন।
সৌদি আরবের বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগের মহাপরিচালক জেনারেল সুলাইমান আল আমর বলেন, প্রচুর বৃষ্টিপাতের সাথে ঝড়ো বাতাসের কারণে অনেক গাছও পড়ে যাচ্ছে। ক্রেন ভেঙে পড়ার ক্ষেত্রে এটাকে কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। তিনি বলেন, নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। তিনি জানান, তদন্ত শুরু হয়েছে এবং ঘটনাস্থলে যাতে নিরাপদে সবাই হজ পালন করতে পারে সেই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। আর ক্রেন পরিচালনার ক্ষেত্রে কোনো গাফিলতি আছে কি-না সেই বিষয়টিকেও তদন্তের ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে বলে জানান মহাপরিচালক। আগেই বজ্রপাত এবং ঝড়ো বাতাস সম্পর্কে আবহাওয়া অফিসের পক্ষ থেকে সতর্ক করা হয়েছিলো। বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই মসজিদে প্রতি বছর লাখ লাখ মানুষ ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম হজ পালনে সৌদি আরবে জড়ো হন। বিশ্বের ১৬০টি দেশ থেকে মানুষ এখানে আসে।
রাষ্ট্রপতির শোক: গতকাল এক শোক বাণীতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ মৃত ব্যক্তিদের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং তাদের শোক-সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। এছাড়াও রাষ্ট্রপতি এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় আহতদের আশু রোগমুক্তি কামনা করেন।
প্রধানমন্ত্রীর শোক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৌদি আরবের মক্কায় আল হারাম মসজিদের একাংশে ভয়বাহ ক্রেন দুর্ঘটনায় প্রাণহানিতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজীজ আল-সৌদকে পাঠানো এক শোক বার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি এবং বাংলাদেশের জনগণ এ মর্মান্তিক খবর পেয়ে অত্যন্ত শোকাহত ও মর্মাহত।
শেখ হাসিনা তার নিজের এবং বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারের পক্ষ থেকে বাদশাহ ও নিহতদের পরিবারের সদস্য এবং আহতদের প্রতি গভীর শোক ও আন্তরিক সমবেদনা জানান। তিনি বলেন, নিহতদের বেশির ভাগই ছিলেন মহান আল্লাহতায়ালার মেহমান, যারা হজব্রত পালনের জন্য তার ডাকে সাড়া দিয়ে বিভিন্ন দেশ থেকে আল্লাহর ঘরে এসেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী নিহতদের বিদেহী আত্মার শান্তি এবং আহতদের আশু আরোগ্য কামনা করেন। তিনি নিহতদের কবুল এবং তাদের নিকটজনদের অপূরণীয় ক্ষতি সহ্য করা ও ধৈর্য ধারণের ক্ষমতা যাতে মহান আল্লাহ তাদের দেন তার জন্য তিনি মোনাজাত করেন। শেখ হাসিনা ক্রেন ভেঙে পড়ার এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার পর পরই সংশ্লিষ্ট সৌদি কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সময়োচিত ও কার্যকর উদ্ধার প্রচেষ্টা গ্রহণ করার প্রশংসা করেন। এই সময় তিনি প্রয়োজনে সৌদি সরকারকে যেকোনো সহায়তা প্রদানে বাংলাদেশের প্রস্তুতির কথাও জানান।