স্টাফ রিপোর্টার: সামনেই কোরবানির ঈদ। প্রাণের টানে ফিরতে হবে গ্রামে। আর নির্ধারিত দিনে পৌঁছার জন্য চাই একটি বাসের টিকেট। আর সে জন্য যতো কষ্টই হোক, সেটা কষ্টের নয়- আনন্দের। বলছিলেন রাজধানীর কল্যাণপুরে বেসরকারি বাসকাউন্টারে টিকিটের জন্য অপেক্ষায় থাকা ঝিনাইদহের আবুল কালাম। গতকাল শুক্রবার ছিলো আগাম বাস টিকেট বিক্রির প্রথম দিন। তপ্ত রোদ ও হঠাত বৃষ্টি উপেক্ষা করে শ শ টিকেট প্রত্যাশী ভিড় করেন রাজধানীর বাস কাউন্টারগুলোতে। সরেজমিনে দেখা গেছে, কাউন্টারের সামনে দীর্ঘ লাইন। অনেকে ভোর রাতে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার ভোগান্তি শেষেই মিলছে কাঙ্ক্ষিত টিকেট। তবে কাউন্টারগুলোতে নারীদের জন্য রয়েছে পৃথক লাইন। সাপ্তাহিক ছুটির দিন থাকায় অনেকে পরিবারের একাধিক সদস্যকে সাথে নিয়ে এসেছেন। সবকিছু ছাপিয়ে সবার মধ্যে উত্সবের আমেজ লক্ষ্য করা গেছে।
কল্যাণপুর বাস টার্মিনালে টিকেটের জন্য আসা আমেনা বেগম জানান, তিনি সকালের দিকে মেয়েকে নিয়ে এসেছেন। তিন ঘণ্টা অপেক্ষার পর টিকিট পেয়েছেন। আর টিকেট পাওয়ায় তিনি ভুলে গেছেন প্রতীক্ষার বিড়ম্বনা। গতকাল সকাল ৬টা থেকে আগাম টিকেট বিক্রি শুরু হয় উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গগামী বাস কাউন্টারগুলোতে। রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনাল, মাজার রোড, কল্যাণপুর ও শ্যামলীর বাস কাউন্টারগুলোতে বিক্রি হচ্ছে ১৭ থেকে ২৪ সেপ্টেম্বরের টিকেট। বিভিন্ন কাউন্টার ঘুরে জানা গেছে, কোথাও কোথাও বাড়তি টাকা নেয়া হচ্ছে। টিকেট থাকলেও বলা হচ্ছে কাঙ্ক্ষিত দিনের টিকিট ফুরিয়ে গেছে। এছাড়া টিকেট কালোবাজারি হচ্ছে বলেও অভিযোগ করলেন কয়েকজন।
তবে এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও শ্যামলী পরিবহনের এমডি রমেশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, আমাদের কাছে কেউ কোনো ধরনের অভিযোগ করেননি। তাছাড়া কোনো অবস্থায় টিকেট কালোবাজারির সুযোগ নেই। আমরা সমিতির পক্ষ থেকে বিষয়টি গভীরভাবে মনিটর করছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সবচেয়ে বেশি চাহিদা ২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বরের টিকিটের। এরপর ১৯ ও ২০ তারিখের।
দেশের অধিকাংশ রুটে চলাচলকারী হানিফ এন্টারপ্রাইজের কাউন্টারে ছিলো সবচেয়ে বেশি ভিড়। এছাড়াও ভিড় ছিলো কল্যাণপুরে উত্তরাঞ্চলগামী ন্যাশনাল, দেশ, এসআর, আল হামরা পরিবহনের বাসের কাউন্টারগুলোতে। অনেকেই ভোরের আলো ফোটার আগেই দাঁড়িয়েছিলেন লাইনে। বেলা গড়ালেও একই রকমের ভিড় ছিলো। তবে যারা রাত জেগে লাইনে বসেছিলেন তাদের বেশির ভাগই টিকেট পেয়েছেন।
হানিফ পরিবহনের গাবতলী বালুর মাঠ কাউন্টার থেকে বিক্রি হচ্ছে রাজশাহী, দিনাজপুর, নাটোর, রংপুর, সিরাজগঞ্জ, কক্সবাজারসহ বিভিন্ন রুটের টিকিট। কোম্পানির জিএম মোশাররেফ হুসাইন বলেন, ২২ ও ২৩ বাদে আমাদের টিকেট আছে। অন্যসব দিনের টিকিট এখনও ৫০ শতাংশ অবিক্রিত। আশা করি শনি ও রবিবারের মধ্যেই সব টিকিট বিক্রি হয়ে যাবে।
রাজধানীর মতিঝিল, রাজারবাগ, ফকিরাপুল ও আরামবাগে বিভিন্ন বাস কোম্পানির কাউন্টারগুলোতেও আগাম টিকেট বিক্রি শুরু হয়েছে। তবে বেশি চাহিদা এসি বাসের টিকেটের। ঈগল পরিবহন কাউন্টারের ম্যানেজার আনিসুর রহমান জানান, বৃহস্পতিবার রাত থেকেই টিকেট বিক্রি শুরু করেছেন। এর মধ্যে খুলনা, যশোর, সাতক্ষীরা রুটের প্রায় সব টিকিটই বিক্রি শেষ হয়েছে। এসি, নন-এসি প্রায় সব ধরনের গাড়িতে দুই-একটা করে সিট খালি আছে।
আরামবাগ হানিফ এন্টারপ্রাইজ কাউন্টারের আবদুল আলিম জানান, এই কাউন্টার থেকে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার রুটে এসি ভলবো (এসকানিয়া) বাস চলাচল করে। দুপুরের মধ্যে সব টিকিটই প্রায় শেষ হয়ে গেছে। এছাড়া এখান থেকে দক্ষিণাঞ্চলে চলাচলকারী এসি ভলবো সার্ভিসেরও শতভাগ টিকেট বিক্রি শেষ।
এদিকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ জানিয়েছেন, মহাখালী ও সায়েদাবাদ থেকে যে বাসগুলো ছাড়বে, সেগুলোর টিকেট আজ শনিবার থেকে পাওয়া যাবে। এছাড়া বিআরটিসি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের আগাম টিকেট বিক্রি শুরু হবে ১৬ সেপ্টেম্বর।