গাংনীর বামন্দী পশুহাটে ব্যাপকভাবে উঠেছে কোরবানির গরু
বামন্দী থেকে ফিরে মাজেদুল হক মানিক: মেহেরপুর জেলার বড় পশুর হাট গাংনীর বামন্দী-নিশিপুর। এ হাটে ব্যাপকভাবে উঠতে শুরু করেছে কোরবানির গরু। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ইচ্ছেমতো খাজনা আদায় করছেন ইজারাদার কামাল হোসেন। সরকারি নীতিমালার তোয়াক্কা না করে মনগড়া রসিদ দিয়েই আদায় করা হচ্ছে ইচ্ছেমতো অর্থ।
গতকাল শুক্রবার বামন্দী হাট ঘুরে চোখে পড়ে খাজনা আদায়ের বিভিন্ন দৃশ্য। কুষ্টিয়ার মিরপুরের কচুবাড়িয়ার উমর আলী ২০ হাজার টাকা দিয়ে একটি গরু কেনেন। তাকে খাজনা দিতে হয়েছে ৩২০ টাকা। বিক্রেতা রিয়াজুল ইসলাম দিয়েছেন আরো ১০০ টাকা। ইজারাদার কামাল হোসেনের ১৬০৯৪ নম্বরের একটি রসিদে ক্রেতা-বিক্রেতার কাছ থেকে খাজনা বাবদ টাকা আদায় করা হলেও রসিদে টাকার পরিমাণ উল্লেখ নেই।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ঘোগা গ্রামের কামরুজ্জামান ১৬ হাজার টাকা দিয়ে একটি গরু কেনেন। ১৪৪৩ নম্বরের একটি রসিদের মাধ্যমে কামরুজ্জামান ও ক্রেতার কাছ থেকে ৪২০ টাকা আদায় করেন ইজারাদার। কিন্তু এ রসিদেও টাকার পরিমাণ উল্লেখ নেই। একইভাবে গাংনী উপজেলার পুরাতন মঠমুড়া গ্রামের গরুক্রেতা আনারুল ইসলাম ও বিক্রেতা সমসের আলীর কাছ থেকে ৪২০ টাকা খাজনা আদায় করা হয়েছে। গরুটি বেচাকেনা হয়েছে সাড়ে নয় হাজার টাকায়। এ রসিদেও টাকার পরিমাণের ঘর ফাঁকা।
ক্রেতা-বিক্রেতারা জানিয়েছেন, গরু কেনাবেচায় কি পরিমাণ খাজনা দিতে হয় তা তাদের জানা নেই। হাটমালিকের কাছে জানতে চাইলে বকা খেতে হয়। ধমক দিয়ে এক প্রকার জোরপূর্বক টাকা আদায় করা হয়। হাটমালিক ও তার পোষ্যবাহিনীর সদস্যদের ইচ্ছেনুযায়ী চলে হাটের সমস্ত নিয়ম-কানুন। প্রতিবাদ করলেই হুমকি-ধামকিসহ লাঞ্ছিতের শিকার হচ্ছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। কামাল হোসেন এলাকার প্রভাবশালী বিধায় তার তৈরি করা নিয়মে খাজনা পরিশোধ করছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।
হাট ইজারার নীতিমালা অনুযায়ী টোল চার্ট টানানোর কঠোরতা থাকলেও তাতে কর্ণপাত করেননি ইজারাদার কামাল হোসেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় থেকে গত কয়েক বছরের মতো চলতি বাংলা ১৪২১ সনের নিলামের মাধ্যমে বামন্দী-নিশিপুর পশুহাটের ইজারা পান মিরপুরের কামাল হোসেন। পূর্বের মতোই তিনি এবারো নির্ধারিত খাজনার পরিমাণ উল্লেখকৃত চার্ট না টানিয়েই দেদারছে খাজনা আদায় করে যাচ্ছেন। এতে ক্রেতা-বিক্রেতাদের কোনোভাবেই খাজনার পরিমাণ জানার সুযোগ নেই। তাই গরু কেনাবেচা হলেই অসহায়ের মতো খাজনা পরিশোধে বাধ্য হচ্ছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। এতে তারা প্রতারণার শিকারের পাশাপাশি হাটের কেনাবেচার ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে বলে জানান এলাকার কয়েকজন। ভুক্তভোগীদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছে। প্রতিকার চেয়ে সংশ্লিষ্টদের হক্ষক্ষেপ কামনা করেছেন তারা। ইজারাদার কামাল হোসেনের ম্যানেজার মজিবর রহমানের কাছে খাজনা আদায় নীতিমালা ও চার্টের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব কোনোদিন শুনিনি। হাটমালিক যেভাবে নির্ধারণ করেন সেভাবেই খাজনা আদায় করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে কর্মচারীরা দায়ী নয়। তবে কামাল হোসেন গতকাল হাটের সময় রসিদ লেখা ও টাকা আদায়ে ব্যস্ত থাকায় তিনি সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে পারেনি।
এ বিষয়ে গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল আমিন জানান, ইজারার নীতিমালা ভঙ্গ করে খাজনা আদায় করা হলে ইজারাদার কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নির্বিঘ্নে পশু কেনাবেচায় উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।