শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে কোনো আন্দোলন কাম্য নয়

 

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নতুন পে-স্কেল মন্ত্রিপরিষদে অনুমোদন লাভ করেছে। চাকরিজীবীদের বেতন বৃদ্ধি একটি চলমান প্রক্রিয়া। জীবনযাত্রার বর্ধিত ব্যয়ের সাথে সঙ্গতি রেখে বেতন বৃদ্ধির মাধ্যমে চাকুরে জনগোষ্ঠীর কর্মদক্ষতা ও সামর্থ্য বজায় রাখতে এ পদক্ষেপের বিকল্প নেই। ২১ লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য ঘোষিত এ পে-স্কেলকে কম-বেশি সবাই স্বাগত জানালেও বঞ্চনা বোধ করছে দেশের শিক্ষক সমাজ। তারা তাদের তিন দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে কর্মবিরতির কর্মসূচি পালন করছেন। দেশের ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা স্বতন্ত্র বেতন স্কেলের দাবি তুলেছেন। শিক্ষকদের এ কর্মসূচিতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন ১৪ লাখ শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ শিক্ষকদের এ ধর্মঘট যদি দীর্ঘ হয়, তাহলে সেশনজটে পড়বে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষকরা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে দীর্ঘ আন্দোলনের আভাসও দিয়েছেন। তাদের আন্দোলন কর্মসূচিতে ক্ষুব্ধ অর্থমন্ত্রী মন্তব্য করেছেন, দেশের সবচেয়ে শিক্ষিত জনগোষ্ঠী জ্ঞানের অভাবে আন্দোলন করছেন। তাদের কর্মবিরতির কোনো যুক্তি নেই। তারা জানেনই না নতুন বেতন কাঠামোতে তাদের জন্য কী আছে, কী নেই। অর্থমন্ত্রীর এ বক্তব্যের কড়া জবাব দিয়েছেন শিক্ষক নেতারা। তারা বলেছেন, আমরা আর্থিক বিষয়কে সামনে রেখে আন্দোলন করছি না। এটা মর্যাদার বিষয়। আমাদের উপযুক্ত মর্যাদা দেয়া হয়নি, উল্টো আগের দেয়া মর্যাদা থেকেও অবনমন করা হয়েছে।

আন্দোলনরত শিক্ষকদের তিন দফা দাবি হচ্ছে- ঘোষিত অষ্টম বেতন কাঠামোতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য দূরীকরণ; শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল ঘোষণা ও ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সে শিক্ষকদের মর্যাদা পুনঃস্থাপন। শিক্ষকদের উপর্যুক্ত দাবিগুলোকে অযৌক্তিক বলার উপায় নেই। এর আগেও শিক্ষকদের আন্দোলন অনশন করতে দেখা গেছে। সে সময় শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষক সমাজকে মাথার মণি বলে সম্বোধন করে অনশন ভঙ্গের আবেদন জানিয়েছেন। কমবেশি দাবি মানা ও বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে সেসব আন্দোলন প্রশমিত হয়েছে। অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য এবং শিক্ষক নেতাদের পাল্টা বক্তব্য একথাই প্রমাণ করে, ঘোষিত বেতন স্কেল নিয়ে বোঝাপড়ার একটা সমস্যা তৈরি হয়েছে। জ্ঞান বা অজ্ঞানতার ঘাটতি নয়, ঘাটতি হচ্ছে যথার্থ উপলব্ধির।

শিক্ষকদের আমলাদের মতো নিয়ন্ত্রণ করার চিন্তা অনভিপ্রেত। পাশাপাশি শিক্ষকদেরও ট্রেড ইউনিয়ন নেতাদের মতো আচরণ করা অনুচিত। শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে কোনো আন্দোলন কাম্য নয়। নতুন বেতন কাঠামোয় শিক্ষকদের মর্যাদা সমুন্নত রাখার পদক্ষেপ নিয়ে সৃষ্ট ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে দেশের উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম সচল রাখতে যথাযথ উদ্যোগ নেবে সরকার, এটাই প্রত্যাশা।