স্টাফ রিপোর্টার: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফি’র ওপর আরোপিত ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলনরত ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালিয়েছে পুলিশ। গতকাল বুধবার দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ বেধকড় লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপের পাশাপাশি গুলি ছোঁড়ে। পুলিশের সাথে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় রামপুরার আফতাবনগর, রামপুরা ব্রিজ ও মেরুল বাড্ডা এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পুলিশের ছররা গুলিতে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির একজন অতিরিক্ত রেজিস্ট্রারসহ ৩০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
শিক্ষার্থীদের ইটপাটকেলে বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমএ জলিল ও বাড্ডা ফাঁড়ির ইনচার্জসহ অন্তত ৯ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে পুলিশ। এ সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বাড্ডা পুলিশ ফাঁড়ি ভাঙচুর করেছে। সড়ক অবরোধের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আজ বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ইস্ট-ওয়েস্টের প্রক্টর অনিন্দিতা পাল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। শেষ পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা রাত সাড়ে ৯টার দিকে প্রায় সাড়ে ৭ ঘণ্টা পর তাদের অবরোধ তুলে নেয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউশন ফি’র ওপর আরোপিত অতিরিক্ত ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা বেলা ২টার দিকে বাড্ডা-রামপুরা সড়ক অবরোধ করে। তারা রামপুরা ব্রিজের কাছে বিক্ষোভ করতে থাকে। এতে দুপুর থেকেই ব্যস্ততম ওই সড়ক বন্ধ থাকায় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে গন্তব্যে যেতে হয় তাদের। অবরোধ থেকে সরিয়ে দিতে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল ও শটগানের গুলি ছুঁড়ে। শিক্ষার্থীদের সাথে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, তাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশ গুলি ও হামলা চালিয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, বিক্ষোভকারীরা বাড্ডা পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করে। ফাঁড়ির সামনে একটি ট্রাক ও পুলিশের একটি মোটরসাইকেল ভেঙে ফেলে। এরপর বিকেল ৪টার দিকে তাদেরকে সরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেও ব্যর্থ হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্জ, রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। বিক্ষুব্ধ ছাত্ররাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ব্যাপক ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় পুলিশের গুলিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রারসহ ৩০ শিক্ষার্থী আহত হন। তাদের বনশ্রী ফরায়েজী হাসপাতালসহ আশপাশের হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। আহতদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার মুশফিকুর রহমান গুরুতর আহত হন। তার হাতে একটি ও বুকে ছয় থেকে সাতটি ছররা গুলি লাগে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আহমেদ শাফী বলেন, এটি ভ্যাটবিরোধী আন্দোলনের একটি অংশ। সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট যোগ করাতে শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হতে পারে। কিন্তু জনগণের ভোগান্তি হোক সে রকম প্রতিবাদ আমি চাচ্ছিলাম না। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে ক্যাম্পাসে নিয়ে আসছিলাম। তখন বিনা উসকানিতে পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে। পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার মোস্তাক আহমেদ বলেন, শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ করলে পুলিশ তাদের সরে যেতে অনুরোধ করে। শিক্ষার্থীরা ইটপাটকেল ছুঁড়ে ও বাড্ডা পুলিশ ফাঁড়ি ভাঙচুর চালায়। তখন পুলিশ তাদের জোর করে সরিয়ে দেয়। গুলি ছোঁড়ার বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
প্রসঙ্গত, নতুন করে চলতি অর্থবছরের বাজেটে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ফি’র সাথে সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়। অবশ্য শুরুতে ১০ শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করা হলেও পরে তা সাড়ে ৭ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। কিন্তু শুরু থেকে সরকারের এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলো শিক্ষার্থীরা।