গরুব্যবসায়ীদের নিরাপত্তার দিকে নজর দেয়া প্রয়োজন

 

একজন দুজন নয়, ত্রিশজন গরুব্যবসায়ী একযোগে অজ্ঞান হয়ে পড়েছেন। ইতোমধ্যে জর্জ মিয়া নামে নরসিংদীর এক ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে। বাকিরা এখনও হাসপাতালে চিকিত্সাধীন। ঘটনাটি ঘটেছে গত রোববার রাজশাহীর সিটি বাইপাস-সংলগ্ন গরুর হাটে। হাটসংলগ্ন একটি হোটেলে খাবার খাওয়ার পর টিস্যু দিয়ে মুখ মোছার সাথে সাথে তারা অজ্ঞান হয়ে পড়েন। আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে পকেটভর্তি নগদ টাকা নিয়ে নরসিংদী, ঢাকা ও কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের গরুব্যবসায়ীরা এ হাটে এসেছিলেন। গরুর হাটে দায়িত্বরত স্বেচ্ছাসেবকদের সতর্কতার কারণে তাদের বিপুল অঙ্কের টাকা রক্ষা পেলেও নিহত ব্যবসায়ীর চার লক্ষাধিক টাকা খোয়া গেছে বলে তার সাথে থাকা ব্যবসায়ীরা জানান। পুলিশ হোটেলের মালিকের ছেলেসহ কয়েকজন কর্মচারী আটক করেছে। তাদের সন্দেহ, এ ঘটনার জন্য অজ্ঞানপার্টি দায়ী। তদন্ত চলছে। দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোও হয়তো সম্ভব হবে। কিন্তু ইতোমধ্যে যে ক্ষতি হয়ে গেছে তা যেমন পূরণ হবে না; তেমনি ঈদের প্রাক্কালে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের মধ্যে যে নিরাপত্তাহীনতার উদ্বেগ সঞ্চারিত হয়েছে তাও সহজে প্রশমিত হবার নয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এর দায় এড়াবেন কীভাবে?

অজ্ঞানপার্টির অপতত্পরতা কোনো নতুন বিষয় নয়। খোদ রাজধানীতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, পুলিশের কর্মকর্তা ও সেনাসদস্যসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার বহু মানুষ তাদের নির্মমতার শিকার হয়েছেন। অতি সম্প্রতি তাদের খপ্পরে পড়েছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা। ভাগ্যক্রমে তিনি বেঁচে যান। সংগঠিত এ দুর্বৃত্তচক্রের হাতে প্রতিদিন কতো মানুষ কতোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সে হিসাব কেউ রাখেন বলে মনে হয় না। যদি রাখতেন, তাহলে কোরবানির পশুর হাটে এক সাথে এতোগুলো মানুষ এতো সহজে তাদের শিকারে পরিণত হতো না। ঈদের প্রাক্কালে, বিশেষ করে কোরবানির আগে এ চক্রটির অপতত্পরতা যে চরমাকার ধারণ করে তাও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অজানা থাকার কথা নয়। দূরদূরান্ত হতে আসা গরুব্যবসায়ীরাই হলো তাদের মূল টার্গেট। কারণও বোধগম্য। এ সময়ে গরুব্যবসায়ীদের দিনরাত অতিবাহিত হয় পথে অথবা গরুর হাটে। লেনদেন করতে হয় বড় অঙ্কের নগদ টাকা। অজ্ঞানপার্টি শুধু নয়, ছিনতাইকারী ও জালনোট ব্যবসায়ীসহ সংগঠিত দুর্বৃত্তচক্র এ সুযোগটি কাজে লাগিয়ে থাকে।

আমরা জানি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী স্বউদ্যোগেই ঈদের আগে বিশেষ নিরাপত্তা উদ্যোগ গ্রহণ করে থাকে। নাগরিকদের নিরাপত্তার পাশাপাশি যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া হয়ে থাকে গরুব্যবসায়ী ও গরুর হাটের নিরাপত্তার বিষয়টিকে। এবারও তার ব্যতিক্রম হওয়ার কথা নয়। তবু রাজশাহীর অভিজ্ঞতার আলোকে আমরা শুধু এটুকু স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, জরুরিভিত্তিতে গরুব্যবসায়ীদের নিরাপত্তার প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে। হাট-বাজারে তো বটেই, দীর্ঘ যাত্রাপথেও নিশ্চিত করতে হবে তাদের জীবন ও অর্থের নিরাপত্তা।