স্টাফ রিপোর্টার: কোরবানি আসন্ন। সীমান্ত পথে গরু আসা প্রায় বন্ধ। ফলে পশুহাটগুলোতে গরু আমদানির সংখ্যা কম। যাও-বা হাটে তোলা হচ্ছে দাম চড়া। সিদ্ধান্তহীনতায় গরু কেনাবেচাও কম। সূত্র বলেছে, কোরবানির আগে হুট করে ভারতীয় গরু দেশে ঢুকতে শুরু করতে পারে। এ আশঙ্কায় ব্যাপারীদের বাড়তি সতর্কতার কারণেই হাটগুলোতে গরু কেনাবেচা কম।
পশুহাট সংশ্লিষ্ট অনেকেই বলেছেন, ভারত থেকে গরু আনার সুযোগ না হওয়ায় বিরূপ প্রভাব পড়েছে আসন্ন কোরবানির ঈদের গরু হাটে। অবস্থা এমন যে স্থানীয় হাটগুলোতে যে গরু আসছে তার দাম হাঁকা হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত। যে কারণে মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজন এ বছর আসতেই কোরবানি দিতে পারবে কি-না তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। মাত্র কয়েক মাস আগেও ভারত থেকে চুয়াডাঙ্গার কার্পাসডাঙ্গা করিডোরসহ যশোর বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন ২ থেকে ৩ হাজার গরু আসতো। ফলে সীমান্ত সংলগ্ন করিডোরগুলো থাকতো জমজমাট। কিন্তু ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ সম্প্রতি গরু পাচার বন্ধে বিএসএফ সদস্যদের কঠোর হতে নির্দেশ দেন। এ নির্দেশনার কারণে গত পয়লা মার্চ থেকে ভারতীয় গরু আসা কমে শূন্যের কোঠায় নেমেছে। যে কারণে খাঁ খাঁ করছে একসময়ের জমজমাট সীমান্ত করিডোরগুলো। একই সাথে কর্মহীন হয়ে পড়েছে এ অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ। স্থানীয় গরু ব্যবসায়ীরা জানান, ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশনার পর শুরুতে কিছু গরু আসলেও এখন তা একেবারেই শূন্যের কোটায় বললেই চলে। মাঝে মধ্যে ১০-২০টি গরু এলেও তা সীমান্ত খাটালগুলোতে উঠছে না। ফলে এ অঞ্চলের অসংখ্য মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। অনেকে সংসার চালানোর তাগিদে দিনমজুরের কাজসহ বিভিন্ন কাজে জড়িয়ে পড়েছেন। তারা আরো বলেন, সহসাই এ অবস্থা থেকে উত্তরণ সম্ভব হবে না। ফলে আসন্ন কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে গরুর মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। আগে যে গরু ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার মধ্যে বিক্রি হতো এখন সেসব গরু ৫০ হাজার টাকায়ও মিলছে না।
চুয়াডাঙ্গার একাধিক গরুব্যবসায়ী নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, ভারতীয় ব্যবসায়ীরা গরু দিতে উন্মুখ হয়ে রয়েছে। সীমান্তবর্তী এলাকায় বহু গরু মজুদও রাখা হয়েছে। কিন্তু সীমান্ত এলাকায় বিএসএফ’র কড়াকড়ির কারণে গরু পার করা সম্ভব হচ্ছে না। যে দু-একটি গরু আসছে তাদের আনতে গিয়ে বিএসএফ’র স্পিডবোর্ডের ধাক্কায় আহত হতে হচ্ছে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের।
এদিকে ব্যবসায়ী নেতা এএসএম হুমায়ুন কবীর কবু বলেন, ভারতীয় গরু আসা বন্ধ হওয়ায় পক্ষান্তরে আমাদেরই উপকার হয়েছে। এ সুযোগে আমাদের দেশের খামারীরা দাঁড়ানোর সুযোগ পাবেন। আর যদি হুট করে ভারতীয় গরু পাচারের সুযোগ ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীরা করে দেয় তাহলে আমাদের দেশের খামারিরা ভয়াবহ ক্ষতির শিকার হবেন। গরু পালনের আগ্রহটাই আর থাকবে না। ফলে হুট করে গরু পাচার শূরু হলেও তা ঠেকাতে বিশেষ উদ্যোগ নেয়ার বিষয়টিও ভাবতে হবে। এ মন্তব্য অভিজ্ঞ অনেকের।
কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে গরু আমদানিতে ভারত হতাশ করলেও নিরাশ করেনি মিয়ানমার। ইতোমধ্যে দেশটি থেকে পাঁচ হাজারের বেশি পশু আমদানি করা হয়েছে। ঈদের পূর্বে আরও ১০ হাজারেরও বেশি পশু আমদানি করা হবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। কক্সবাজারের শাহপরীর দ্বীপ করিডোর হয়ে আসা গরু, মোষ ও ছাগল থেকে সরকারও পাচ্ছে রাজস্ব। সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, ভারত থেকে গরু আমদানি বন্ধ হওয়ার পর ব্যবসায়ীরা মিয়ানমারের দিকেই ঝুঁকে পড়েছেন। ফলে মিয়ানমার থেকে গত কয়েক দিন ধরে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ করিডোর হয়ে আসছে গাবদী পশু।