যুবতীর সাথে যুবকের অথবা যুবকের সাথে যুবতীর নির্জন স্থানে দাঁড়িয়ে বা বসে একান্তে কথা বলতে দেখে কিছু যুবক জড়ো হয় সেখানে। আপত্তিকর অবস্থায় রয়েছো তোমরা এ ধরনের অভিযোগ তুলে হেনস্থা করার ঘটনা ইদানিং হরহামেশায় ঘটছে। কেন? কিছু ব্যতিক্রম থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ওরা অর্থ হাতানোর জন্যই মনগড়া অভিযোগ তুলে হেনস্থা শুরু করে, পুলিশে দেয়ার ভয় দেখায়। কখনো কখনো পুলিশেও দেয়। এটা এক ধরনের ছিনতাই। এসব অপরাধীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক তেমন ব্যবস্থা না নেয়ার কারণে চিত্তবিনোদনের স্থানগুলোও ক্রমশ শ্বাসরুদ্ধকর হয়ে উঠছে।
উন্নত বিশ্বে চিত্তবিনোদনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়। বিনোদন কেন্দ্রভেদে স্বাধীনতা ভোগের সুযোগ-সুবিধা থাকে। আর আমাদের দেশে? বড় বড় শহরে নামকাওয়াস্তে কিছু আছে। চুয়াডাঙ্গায়? সরকারিভাবে গড়ে তোলা যায়নি। কর্মব্যস্ততা শেষে স্বস্তির শ্বাস নেয়ার মতো স্থান আনাচে-কানাচে যেটুকু আছে তাও ফুরিয়ে যাচ্ছে জনসংখ্যা বিস্ফোরণের কারণে। আর বিনোদন বলতে বসার বা শোয়ার ঘরের চার কোনার ওই বৈদ্যুতিক বাক্স। যার মাধ্যমে উন্নত বিশ্বের রঙ ঢঙ সংস্কৃতি ঢুকে পড়ছে আমাদের অস্তিমজ্জায়। প্রতিবেশী দেশের কিছু বেসরকারি অখ্যাত চ্যানেলের ধারাবাহিক নাটকের মাধ্যমে পারিবারিক ষড়যন্ত্রের প্রশিক্ষণও পেয়ে যাচ্ছে আমাদের সমাজের নারীরা। ধারাবাহিক নিয়ে বাড়-বাড়ন্তের কারণে শিশুদের মগজেও রোপিত হচ্ছে ওই পারিবারিক নোংরামির বীজ। আর প্রেম? ওটাতো সহজাত প্রবৃত্তি। চিরন্তন। তাহলে তাতে বাধা কেন?
বসার বা শোয়ার ঘরে রাখা টেলিভিশনের মাধ্যমে শুধু শিশু-কিশোর মনকেই মহৎ করে তোলা যায় না, তাদের পিতা-মাতাকেও ষড়যন্ত্রমুক্ত উদার মানসিকতার মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। টেলিভিশন এমনই এক গণমাধ্যম যার মাধ্যমে নিজস্ব সংস্কৃতিচর্চার পাশাপাশি নিজেদের ভালো হওয়ার প্রতিযোগিতায় সামিল করাতে পারে। যদিও তেমন উদ্যোগে যথেষ্টই ঘাটতি। সস্তা প্রেমের উগ্র প্রকাশ যেমন সুপথে চলতে নির্দেশ করে না, তেমনই ভালোবাসা ব্যতিরেকে যান্ত্রিক জীবনও জীবনের পূর্ণতা দিতে পারে না। প্রয়োজনীয়তা তো আর অস্বীকার করা যায় না। সেই প্রয়োজনীয়তার অংশ হিসেবেই যদি পরিণয়ের আগে নির্জন স্থানে দাঁড়িয়ে দুজন দুজনকে একটু চিনে নেয়ার চেষ্টা করেন তাহলে তা দোষের কী? পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি যতোই থাক, কোনো কিছু জোর করে চাপিয়ে দেয়ার প্রথা বা প্রবণতা সময়ের স্রোতে কি টিকে থাকে? থেকেছি কি কখনো?
একজন যুবতী একজন যুবক পাশাপাশি বসলেই সর্বনাশ হয়ে যায় না। এমনকি এক ঘরে সারা রাত থাকলেও তারা যদি নিজেদের রক্ষা করতে সক্ষম হয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে অসামাজিক কাজে লিপ্ত হওয়ার অভিযোগ উত্থাপন হবে কেন? আর তা নিয়ে সালিস বসানোর হিম্মতই বা মাতবররা পান কোত্থেকে? ওরকম সালিসের প্রতি পুলিশের মৌন সমর্থনের বিষয়টি ঘুরে ফিরেই উঠে আসে, মাঝে মাঝেই সালিসে অপদস্থতার জের ধরে পারিবারিক হেনস্থার কারণে কিশোরীর আত্মহত্যার মতো খবর পত্রপত্রিকার শিরোনাম হয়। গতকালও দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় চুয়াডাঙ্গা বোয়ালমারীর এক স্কুলছাত্রীর লাশ হওয়ার খবর শিরোনাম হয়েছে। আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলার খবর নেই। নেই কিশোর-কিশোরীদের হাতে মোবাইলফোন তুলে না দেয়ার অঙ্গীকারও। কারণ সেলফোনে যোগাযোগের যে বাড়তি সুবিধা, তার দখল সামলানোর মতো মানসিকতা যেমন ওরা গড়ে তুলতে পারেনি, তেমনই পরিবেশও গড়ে দিতে পারেননি বড়রা।
সুযোগ বুঝে হেনস্থা করে টাকা কড়ি ছিনিয়ে নেয়ার সুযোগ বখাটেদের ওই ধরনের অপরাধ করার জন্য উৎসাহিত করে। স্বস্তির শ্বাস নেয়ার স্থান খোঁজা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যও ছড়ায় ভীতি। ফলে সামাজিকভাবেই অন্যায়ের প্রতিবাদ করার পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। গড্ডালিকায় গা ভাসানো মানসিকতা পরিহার করতে না পারলে প্রজন্ম প্রত্যাশিত পরিবেশ পাবে না। টেলিভিশনের মতো শক্তিশালী গণমাধ্যমকে সুস্থ ধারার বিনোদনের অনুষ্ঠান সম্প্রচারে উৎসাহিত করতে হবে। সময়ের স্রোতে সুন্দর সমাজ গঠন মানে পুরাতনকে আকড়ে ধরে নয়, ভালোকে সাধুবাদ জানানো নিশ্চয়।