অর্থলিপ্সুতার অপবাদে আত্মঘাতী হয়েছে অভিমানী রিপা! বদলে গেছে বিপুল?

ময়নাতদন্ত শেষে চুয়াডাঙ্গার বোয়ালমারী কবরস্থানে বেদনাবিধূর পরিবেশে রিপার দাফন সম্পন্ন

 

কামরুজ্জামান বেল্টু/উজ্জ্বল মাসুদ: বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বাড়ি ফিরিয়ে নিলেও প্রেমিক বিপুল হোসেনকে তার পিতা আমির হোসেন বলে, ‘কেমন মানুষের মেয়ের সাথে বিয়ে করার জন্য পাগল হয়েছিস যে, ওরা টাকা ছাড়া কিছু বোঝে না। তোকে বাড়ি ফিরিয়ে নিতে খরচ করতে হলো নগদ ৩০ হাজার টাকা।’ পিতার মুখে এ কথা শুনে বিপুল হোসেন ক্ষোভের সাথে তা তার প্রেমিকা সোমাইয়া রিপাকে জানায়। রিপা এর সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে আগা মাথা না পেয়ে অভিমানী হয়ে ওঠে। শেষ পর্যন্ত ঘরের আড়ার সাথে ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে।

সোমবাইয়া রিপার মৃতদেহ গতকাল শুক্রবার দুপুরে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে ময়নাতদন্ত করা হয়। বিকেলে নেয়া হয় পিতার গ্রাম চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের বোয়ালমারী দক্ষিণপাড়ায়। বাদ আছর গ্রাম্য কবরস্থানে দাফন কাজ সম্পন্ন করা হয়। দাফনের সময় রিপার মাসহ অনেকেই দাবি তোলেন, যে ছেলের জন্য রিপা এই মায়াবি জগত ছেড়ে চলে যেতে হলো না ফেরার দেশে, সেই ছেলে অন্তত মেয়ের কবরে এক মুঠো মাটি দিক। এ দাবি প্রেমিক বিপুল হোসেনের বাড়ি আলমডাঙ্গার নাগদাহে পৌঁছুলেও সাড়া মেলেনি। যে বিপুল হোসেন থানায় বসে দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলে রিপার সাথে বিয়ে না করে বাড়ি ফিরবো না, সেই বিপুল রাতারাতি বদলে গেলো? নাকি প্রেমিকার মৃত্যুর খবরই পায়নি সে? এ প্রশ্নের জবাব জানতে গিয়ে পাওয়া যায় রিপা ও বিপুলকে গত সোমবার রাত ১০টার দিকে বোয়ালমারীর দু পাড়ার যে ৭ যুবক আটক করার পর অর্থ আদায়ের রকমারি তথ্য।

রিপাকে থানা থেকে বাড়ি ফিরিয়ে নিতে তার পিতা-মাতাকে খরচ করতে হয়েছে নগদ ৯ হাজার টাকা। অপরদিকে প্রেমিক বিপুল হোসেনের পিতার আমির হোসেন বাবুর দাবি তাকে গুনতে হয়েছে নগদ ৩০ হাজার টাকা। এই ৩০ হাজার টাকার মধ্যে ২০ হাজার টাকা নাকি রিপার মা নিয়েছে। আমির হোসেন বাবু গতকাল এ দাবি করলেও রিপার পিতা-মাতা অবশ্য বলেছেন, টাকা নেয়ার প্রশ্নই ওঠে না। আমরা মেয়ের সাথে ওই ছেলের বিয়ে হবে জেনেই মেয়েকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়েছিলাম। দু পক্ষের দেয়া তথ্য মতে দু পক্ষের মোট ব্যয় হয়েছে ৩৯ হাজার টাকা। প্রশ্ন উঠেছে, এই টাকা নিলো কে? প্রেমিকের পিতা বলেছে, টাকা দেয়া হয়েছে বোয়ালমারীর সাবেক মেম্বার আনিছের হাতে।

রিপা মারা যাওয়ার খবর তার প্রেমিক বিপুল হোসেন পেয়েছে মৃত্যুর প্রায় ২৪ ঘণ্টার মাথায় গতকাল বিকেলে। এ খবর দেয়ার সাথে সাথে তাকে নিজ বাড়ি থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। সূত্র বলেছে, গতরাতে বিপুল হোসেন ছিলো ভোলারদাড়ি গ্রামে। প্রেমিকার মৃত্যুর খবর পেয়েও বিপুল কেন বোয়ালমারী গেলো না? মোবাইলফোনে বিপুলের সাথে সরাসরি এ প্রশ্ন করা হলে সে বলে, মারা যাওয়ার খবর পেয়েছি দাফনের পরে। সে কারণে আর যাওয়া হয়নি। এখন রয়েছি অনেক দূরে।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের বোয়ালমারী দক্ষিণপাড়ার প্রান্তিক চাষি হাসেম আলীর মেয়ে সোমাইয়া রিপা পড়তো নীলমণিগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভোকেশনাল দশম শ্রেণিতে। একই শ্রেণির ছাত্র পার্শ্ববর্তী আলমডাঙ্গা নাগদাহ উত্তরপাড়ার কৃষক আমির হোসেনের ছেলে বিপুল হোসেন। রিপা ও বিপুলের মধ্যে প্রেমসম্পর্ক গড়ে ওঠে। গত সোমবার রিপার মা ও বাবা বেড়াতে যান বড়গাংনী বড় মেয়ের বাড়ি। রিপা ও তার ছোট ভাই ছিলো বাড়ি। সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বোয়ালমারী গ্রামের পূর্বপাড়ার ইকতিয়ার, আকরাম, ডালিম, দক্ষিণপাড়ার নিশান, ফয়জুল, ইকলাস ও রিফাজ যায় রিপাদের বাড়ি। রিপা ও বিপুলকে ঘর থেকে আটক করে। খবর দেয়া হয় বিপুলের পিতাকে। ছাড়িয়ে নিতে টাকা দাবি করা হয়। শ্লীলতাহানিও হয়। অনানুষ্ঠানিক সালিসও বসে। শেষ পর্যন্ত রিপা ও বিপুলকে দেয়া হয় পুলিশে। দুজনই বিয়ে ছাড়া বাড়ি ফিরতে অস্বীকৃতি জানায়। উভয়পক্ষের অভিভাবক বিয়ের বয়স হলে বিয়ে দেয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিজ নিজ বাড়িতে ফিরিয়ে নেয়া হয়। বাড়ি ফিরিয়ে নেয়ার ২৪ ঘণ্টার মাথায় নিজ ঘরের আড়ার সাথে ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে রিপা। গতকাল বিকেল দাফন সম্পন্ন হয়।

রিপার কাছে রাতে কেন এসেছিলে? এ প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে বিপুল হোসেন বলেছে, বাইসাইকেলটি মেরামতের জন্য কিছু টাকা দরকার ছিলো। রিপা বলেছিলো আমার কাছে তিনশ টাকা আছে। বাড়ি কেউ নেই। এসে নিয়ে যাও। সাইকেল মেরামতের টাকা আর দেখা হবে আশায় রিপার বাড়ি গিয়েছিলাম। সেই যাওয়ার কারণে যে ওরা ধরে আমাদের ওইভাবে হেনস্থা করবে, রিপাকে মরতে হবে তা তো বুঝিনি।