দামুড়হুদার বিষ্ণুপুরে খেলার মাঠ নিয়ে ঐক্যবদ্ধ গ্রামবাসী : ৭ দিনের আল্টিমেটাম
বখতিয়ার হোসেন বকুল: দামুড়হুদার বিষ্ণুপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ নিয়ে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছে পুরো বিষ্ণুপুর গ্রামবাসী। সেই সাথে আসামিদের গ্রেফতার ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ৭ দিনের আল্টিমেটাম ঘোষণাসহ বৃহত্তর কর্মসূচির কথা জানিয়ে মানবন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন বিষ্ণুপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির নেতৃবৃন্দ, শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী। কর্মসূচির সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে যোগ দিয়েছে এলাকার অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ‘খেলার মাঠ দখল কেন? প্রশাসন জবাব চাই, ‘ভূমিদস্যুরা সাবধান-হুঁশিয়ার, ‘জান দেবো তবু মাঠ দেবো না, দখলকারীদের শাস্তি চাই’ এরকম বিভিন্ন স্লোগান লেখা শ শ প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে বিষ্ণুপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বিষ্ণুপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বিষ্ণুপুর কিন্ডারগার্টেন ও মজারপোতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা বিক্ষোভ মিছিল করে ছুটে যায় মজারপোতাস্থ বিষ্ণুপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের খেলার মাঠে। ওখানেই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধন শেষে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাড. রফিকুল আলম রান্টুর সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন জুড়ানপুর ইউপি চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিষ্ণুপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম, হাজি কুতুব উদ্দিন, সাবেক ইউপি সদস্য মহাতাব উদ্দিন, সাবেক সভাপতি আব্দুল মান্নান, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আব্দুল গফুর, হাজি আব্দুল মোত্তালিব, বিষ্ণুপুর কিন্ডারগার্টেনের পরিচালক ফিরোজ ইফতেখার, আ.লীগ নেতা আব্দুল বারী, ইউনুচ আলী, ইউপি সদস্য লিটন, খোকন, মনির উদ্দিন, ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মতিয়ার রহমান, মিজানুর রহমান, রুহুল আমিন যুদ্ধ, মহিদুল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম, অফিস সহকারী গোলাম সরোয়ার নান্নু, ডা. আতিয়ার রহমান, আ.লীগ নেতা সাইফুল মাস্টার, যুবলীগ নেতা মোজাফফর হোসেন, মজিবার রহমান, আ. করিম, হাসান প্রমুখ।
প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা বলেন, এলাকার শত বছরের পুরনো এ খেলার মাঠটি এলাকার ভূমিদস্যূরা অবৈধভাবে দখল করার পাঁয়তারা অব্যাহত রেখেছে। তারা ওই খেলার মাঠ দখলের চেষ্টার পাশাপাশি আদালতে মিথ্যা মামলাও দায়ের করেছে। আমরা জীবন দেবো তবু ওই খেলার মাঠ দখল করতে দেবো না। আসামিদের গ্রেফতারসহ অবিলম্বে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের জানিয়ে ৭ দিনের আল্টিমেটাম ঘোষণা করেন। আগামী এক সপ্তার মধ্যে যদি আসামিদের গ্রেফতার করা না হয় তাহলে আগামীতে থানা ঘেরাওসহ বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন যুবলীগ নেতা মজিবার রহমান।
দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি কামরুজ্জামান বলেন, যেহেতু ওই খেলার মাঠ দখল করাকে কেন্দ্র করে ইতঃপূর্বে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে এবং পুলিশসহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়। সে কারণেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ওই খেলার মাঠে সাময়িক সময়ের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
উল্লেখ্য, গত ১৯ আগস্ট সকাল ১০টার দিকে দামুড়হুদা উপজেলার মজারপোতাস্থ বিষ্ণুপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ফুটবল খেলার মাঠ দখল করাকে কেন্দ্র করে জমির মালিকানা দাবিদারদের সাথে স্কুল কর্তৃপক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। দখলদারদের ভাড়াটিয়া লোকজনের হাতে ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মতিয়ার রহমান মতি ও এক পুলিশ কনস্টেবল রক্তাক্ত জখম হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ১০ রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে। এ সময় পুলিশের গুলিতে এক গৃহবধূসহ প্রায় ৭ জন আহত হয়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তাৎক্ষণিকভাবে অবৈধ দখলদারদের সহযোগিতার অপরাধে ৩ জনকে আটক করে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিষ্ণুপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে ওই দিনই ২২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরো ২০-২৫ জনের নামে দামুড়হুদা থানায় মামলা দায়ের করেন। পরদিন জমির মালিকানা দাবিদারদের পক্ষে মৃত আনছার আলীর ছেলে আ. মালেক বাদী হয়ে বিষ্ণুপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম, ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি আ. মান্নান, সদস্য মতিয়ার রহমান, মহিদুল ইসলাম ও অফিস সহকারী গোলাম সরোয়ার নান্নুর নামে আদালতে পাল্টা মামলা দায়ের করেন। আসামিরা মামলা তুলে নেয়ার জন্য শিক্ষকসহ ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের হুমকিসহ পুনরায় ওই খেলার মাঠ দখলের পাঁয়তারা করার প্রতিবাদে গতকাল ওই কর্মসূচি পালিত হয়।