শিশু গৃহকর্মীকে গরম হাতা দিয়ে পুড়িয়ে নির্যাতন

 

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: এক প্যাকেট বিদেশি চকলেট খাওয়ার অপরাধে শিশু গৃহকর্মী হোসনে আরাকে গরম হাতা দিয়ে দু চোয়াল পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। সেই সাথে তার ডান পাসহ সারা শরীরে নির্যাতনের ঘা দগদগ করছে। শিশু গৃহকর্মীর বাড়ি কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার দেবীনগর গ্রামে। গতকাল বুধবার দুপুরে গুরুতর অসুস্থ শিশু গৃহকর্মী হোসনে আরাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

জানা গেছে, বছরে দশ হাজার টাকা বেতনে শিশু গৃহকর্মী হোসনে আরাকে রাজধানীর ধানমণ্ডির ৬/এ নম্বর বাড়ির মালিক হ্যাপির বাসায় কাজে রাখে অভাবগ্রস্ত পরিবারটি। সম্প্রতি এক প্যাকেট বিদেশি চকলেট খেয়ে ফেলায় শিশুটির ওপর শুরু হয় অমানুষিক নির্যাতন। ডাল রান্না করার গরম হাতা দিয়ে তার দু চোয়ালে ছ্যাঁকা দেয়া হয়। গৃহকত্রী হ্যাপি খড়ি দিয়ে কাপিকল বানিয়ে শিশুটির ডান পায়ের হাঁটু ও দু হাত জখম করে দিয়েছে। এ নির্যাতনে শিশুটির হাত, বুক, পিঠসহ সারা শরীরেই ঘা দগদগ করছে। শিশুটির অবস্থা বেগতিক দেখে চতুর গৃহকত্রী মোবাইলফোনে হোসনে আরার বাবাকে ডেকে অসুস্থ মেয়েকে তার কাছে ফেরত পাঠিয়ে দেয়। গৃহকর্মীর ওপর নির্যাতনকারী হ্যাপির স্বামী ফুরকান ওমানে থাকেন বলে জানায় শিশুটির বাবা। শিশু হোসনে আরা হাসপাতালে উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে। সে জানায়, গত ঈদের ১০ দিন পরে লোভ সামলাতে না পেরে ছোট এক প্যাকেট বিদেশি চকলেট খেয়ে ফেলে। চকলেট খাওয়ার কথা গৃহকত্রী হ্যাপির কাছে স্বীকারও করে সে। তারপরও তার ওপর হ্যাপির নির্যাতন বন্ধ হয়নি। প্রথম দিনই ডাল রান্না করা গরম হাতা দিয়ে তার দু চোয়ালে ছ্যাঁকা দেয়। পরে খড়ি দিয়ে তৈরি করা কাপিকলে ফেলে তার ওপর চালায় নির্যাতন।

গত শনিবার রাতেও শিশুটির ওপর গৃহকত্রী নির্যাতন চালায়। সে এখন আর কিছুই চায় না, শুধু তার ওপর নির্যাতনকারী হ্যাপির বিচার চায়। শিশুটির বাবা জানান, সংসারে অভাবের তাড়নায় মেয়েকে কাজে পাঠিয়েছিলো কিন্তু অভাব তাড়াতে গিয়ে মেয়ে হারাতে বসেছেন, তা তিনি আগে বোঝেননি। তিনি মেয়ের ওপর নির্যাতনকারীর বিচার দাবি করেন। এ ব্যাপারে গৃহকত্রী হ্যাপির সাথে কথা বলার জন্য তার মোবাইলফোনে যোগাযোগ করা হয়, কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ করেননি। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কামরুজ্জামান সোহেল জানান, শিশু হোসনে আরার শরীরে ক্ষতগুলো নির্যাতন থেকে হয়েছে। এখন তার উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন।