ভারতীয় টিভি চ্যানেলের কুপ্রভাব : নাটোরে ভয়াবহ কিশোর অপরাধ
স্টাফ রিপোর্টার: নাটোরে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণের দাবিতে মো. তানভীর (১১) নামে এক মাদরাসাছাত্রকে হত্যার পর আটক করা হয়েছে তার তিন সহপাঠীকে। র্যাব-৫’র সিও লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহবুব আলমের নেতৃত্বে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে শহরের আলাইপুর এলাকার আশরাফুল উলুম কওমি মাদরাসার পেছনের একটি সেপটিক ট্যাংকি থেকে তানভীরের লাশ উদ্ধার করা হয়।
র্যাব-৫ ও স্থানীয়রা জানান, শহরের হাফরাস্তা বড়গাছা এলাকার ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম তুষারের একমাত্র ছেলে মো. তানভীর আলাইপুর এলাকার আশরাফুল উলুম কওমি মাদরাসায় পড়ালেখা করতো। গত ২৫ আগস্ট বিকেলে মাদরাসা থেকে বের হয়ে সহপাঠীদের সাথে খেলতে গিয়ে সে নিখোঁজ হয়। রাতে মোবাইলফোনে নিখোঁজ ছাত্রের বাবা সাইফুল ইসলাম তুষারের কাছে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। এ ব্যাপারে নিখোঁজ ছাত্রের বাবা নাটোর থানায় জিডি করেন ও র্যাবকে জানিয়ে ছেলের খোঁজে গত কয়েক দিন ধরে শহরে মাইকিং করেন। পরে মোবাইল ট্র্যাকিঙের মাধ্যমে র্যাব ওই মাদরাসার দু ছাত্র বায়েজিদ হাসান (১৪) ও হুমাইদ হোসেন (১৫) এবং ওই মাদরাসার সাবেক ছাত্র নাঈমকে (১৫) আটক করে। আটক বায়েজিদ হাসান বাগাতিপাড়া উপজেলার নওপাড়া গ্রামের বাবুল হাসানের ছেলে, হুমাইদ হোসেন সিংড়া উপজেলার জোর মল্লিকা গ্রামের মোক্তার হোসেনের ছেলে এবং মো. নাঈম নাটোর শহরের কালুর মোড় এলাকার আব্দুর রহিমের ছেলে। ওই তিনজনের দেয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী আলাইপুর এলাকার আশরাফুল উলুম কওমি মাদরাসার পেছনের একটি সেপটিক ট্যাংক থেকে তানভীরের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালমর্গে পাঠানো হয়।
র্যাব-৫’র অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহবুব আলম জানান, আটক তিন কিশোর ভারতীয় টিভি চ্যানেলের সিরিয়ালে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনা দেখে উৎসাহিত হয়ে তানভীরকে অপহরণের পরিকল্পনা করে। আটকের পর তারা র্যাবকে জানায়, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৫ আগস্ট বিকেলে মাদরাসার পার্শ্বের একটি পরিত্যক্ত ঘরে নিয়ে গিয়ে তানভীরকে কাপড় দিয়ে গলা বেঁধে শ্বাসরোধ করে মৃত্যু নিশ্চিত করতে ক্ষুর দিয়ে গলা কেটে তাকে খুন করে। লাশ সেই পরিত্যক্ত বাড়িতে রেখে পাঁচিল টপকে নাঈমের দোকানে গিয়ে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ক্ষুর এবং নিজেদের হাত-পায়ে লেগে থাকা রক্ত পরিষ্কার করে। পরে ভোররাতে লাশ তাদেরই মাদরাসার কাছের একটি বাড়ির পেছনের সেপটিক ট্যাংকে ফেলে গুম করে। এরপর তারা দুটি নতুন সিম কিনে যার একটি দিয়ে মুক্তিপণের টাকা গ্রহণের জন্য বিকাশ অ্যাকাউন্ট খোলে এবং অন্যটি দিয়ে তানভীরের বাবার কাছে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণের দেনদরবার করে। এক সময় তারা মুক্তিপণের দাবি পাঁচ লাখ টাকা থেকে এক লাখ টাকায় নামিয়ে আনে। মুক্তিপণের টাকা গ্রহণের কৌশল হিসেবে প্রথমে বিকাশে টাকা পাঠানোর কথা বললেও ঝুঁকি থাকায় চলন্ত ট্রেন থেকে টাকা ছুঁড়ে ফেলে দেয়ার সিদ্ধান্ত তানভীরের বাবাকে জানানো হয়। এতেও ঝুঁকি থাকতে পারে মনে করে অপহরণকারীরা কোথাও থেকে বোরকা পড়ে মুক্তিপণের টাকা সংগ্রহের কথা জানালে তানভীরের বাবা তার ছেলের সাথে সরাসরি কথা বলার পরেই টাকা দিতে রাজি হন। এ সময় অপহরণকারীরা বায়োজিদকে তানভীর সাজিয়ে বাবার সাথে কথা বলায়। এ সময় তানভীরের বাবা সাইফুল ইসলাম তুষার বুঝতে পারেন এটি তার ছেলের কণ্ঠ নয়। এরই এক পর্যায়ে মোবাইল ট্র্যাকিঙের মাধ্যমে টানা ২২ ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে র্যাব হত্যাকাণ্ডের সাথে সরাসরি জড়িত তিনজনকেই আটক করে তানভীরের লাশ উদ্ধার করে।
ভারতীয় টিভি চ্যানেলের সিরিয়ালে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনা দেখে নাটোরের তিন কিশোর সহপাঠীকে অপহরণ করে হত্যার ঘটনায় বেশ চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে নাটোরে। এ অভিযানের সময় আরও উপস্থিত ছিলেন, নাটোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুনসি শাহাবুদ্দিন, র্যাব-৫’র এএসপি জামাল আল নাছের, নাটোর সদর সার্কেলের এএসপি রফিকুল ইসলাম এবং সদর থানার ওসি মো. মিজানুর রহমান।