গাংনী উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত
গাংনী প্রতিনিধি: বাল্যবিয়ে ও মাদক প্রতিরোধ এবং পল্লীবিদ্যুত ও হাসপাতালসহ অফিস দালালমুক্ত করতে কঠোর ভূমিকা পালনে একমত হয়েছেন মেহেরপুর গাংনী উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সদস্যবৃন্দ। গতকাল সোমবার সকালে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সভাকক্ষে চলতি মাসের আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় ওইসব বিষয়ে কঠোর আইন প্রয়োগেরও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল আমিনের সভাপতিত্বে সভা শুরু হয়। কমিটির সদস্য সদ্য প্রয়াত কাথুলী ইউপি চেয়ারম্যান কাবুল হোসেনের শোকপ্রস্তাব, শোকৱ্যালির আয়োজনের সিদ্ধান্ত এবং এক মিনিট নিরবতা পালনের মধ্যদিয়ে তার রুহের মাগফেরাত কামনা করা হয়। গত দু মাসে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় তীব্র সমালোচনার পর মাদক প্রতিরোধে বিজিবি নড়েচড়ে বসেছে বলে মতামত প্রকাশ করেন বক্তারা। বাল্যবিয়ের বিষয় নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন মটমুড়া ইউপি সচিব জহুরুল ইসলাম। সম্প্রতি তার নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া ভাতিজাকে বিয়ে দেয়ায় এ সমালোচনা করেন কয়েকজন বক্তা। একজন সরকারি কর্মচারী এ ধরনের কাজের সাথে জড়িত থাকে কীভাবে তাও নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অনেকে। অপরদিকে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার, কাজি ও মাওলানাদের আরো সক্রিয় ভূমিকা রাখার আহ্বান জানানো হয়। সচেতনতা সৃষ্টির জন্য বাল্যবিয়ের বিষয়টি এড়িয়ে না গিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বাল্যবিয়ে নিরোধ আইনে দণ্ড দেয়ার পক্ষে মতামত প্রকাশ করেন বেশিরভাগ সদস্য।
এদিকে মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুত সমিতির গাংনী জোনাল অফিস দালালমুক্ত করতে ডিজিএমকে আরো সক্রিয় ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান কয়েকজন সদস্য। অভিযানের মাধ্যমে অবৈধ সংযোগ অপসারণ অভিযান অব্যাহত রাখা এবং দায়ীদেরকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়। একই সাথে সম্প্রতি থানায় দেয়া দালালদের তালিকার মধ্যে দালালির সাথে জড়িত নয় এমন ব্যক্তির নাম কীভাবে যুক্ত করা হয়েছে সে বিষয়ে নিয়েও তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। সুষ্ঠু তদন্তের মধ্যদিয়ে প্রকৃত দালালদের নামের তালিকা তৈরি করে ব্যবস্থা গ্রহণ ও দালালির সাথে জড়িত নয় এমন ব্যক্তিদের না বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এদিকে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দালালের দৌরাত্ম্য ও সরকারি ওষুধ হরিলুটের অভিযোগ করেন কয়েকজন সদস্য। এর সাথে হাসপাতালের কিছু কর্মচারী জড়িত রয়েছে এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এসব বিষয়ে কোনো কর্ণপাত না করায় তীব্র সমালোচনা করা হয়। হাসপাতালের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করে গরিব মানুষের চিকিৎসার সুযোগ করে দিতে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সদ্যস্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন কয়েকজন সদস্য।
গত মাসে করমদি পাগলা ব্রিজের কাছে বিজিবির অভিযানে ফেনসিডিলসহ আটক কয়েকজনের মধ্যে সুন্দরী এক নারীসহ তার সঙ্গীকে ছেড়ে দিয়ে দরিদ্র সিএনজিচালককে আসামি করে চালান দেয়ার ঘটনায় তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন বিজিবির সদস্যবৃন্দ। মামলা তদন্তে নিরপরাধ সিএনজি চালকের সুবিচারের বিষয়ে সহযোগিতা দাবি করেন তারা। এ বিষয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দেন বিজিবি ও পুলিশ কর্মকর্তা।
সমাপনী বক্তব্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল আমিন বলেন, বাল্যবিয়ের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কয়েকটি অভিযানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাল্যবিয়ের সাথে যুক্ত বর-কনের পরিবার, কাজী, মাওলানাসহ সংশ্লিষ্টদের ভ্রাম্যমাণ আদালতে বিচার করা হবে। বাল্যবিয়ের সংবাদ দিতে তিনি ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বারসহ এলাকাবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেক, উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা, উপজেলা চেয়ারম্যান মোরাদ আলী, পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম আবু আনাস মুহা. নাছের, আওয়ামী লীগ নেতা হাজী মহাসিন আলী, জেলা আ.লীগের কৃষিবিষয়ক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম শাহ, উপজেলা আ.লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক আহসান উল্লাহ মোহন, গাংনী হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রধান শিক্ষক আফজাল হোসেন, তেঁতুলবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান নাজমুল হুদা, মটমুড়া ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম, কাজিপুর ইউপি চেয়ারম্যান মুহা. আলম হুসাইন, ধানখোলা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক, বিজিবি কাজিপুর বিওপি কমান্ডার কবির হোসেন, রংমহল বিওপি কমান্ডার আবুল হোসেন, গাংনী প্রেসক্লাব সভাপতি রমজান আলী, উপজেলা প্রেসক্লাব সভাপতি আমিরুল ইসলাম অল্ডাম, সাংবাদিক জুলফিকার আলী কানন ও মাজেদুল হক মানিক।