স্টাফ রিপোর্টার: আজ থেকে দেশের শিল্প মালিকদের জন্য সরবরাহ করা ক্যাপটিভ পাউয়ারে গ্যাসের দাম এক লাফে দ্বিগুণ হচ্ছে। পাশাপাশি বাড়ছে আবাসিক গ্যাস ও সব ধরনের বিদ্যুতের দামও। ক্যাপটিভে বিদ্যমান প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৪ টাকা ১৮ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৮ টাকা ৩৬ পয়সা করা হয়েছে। শিল্পোদ্যোক্তারা বলেছেন, কোনো ধরনের যৌক্তিক কারণ ছাড়াই হঠাৎ করে ক্যাপটিভে গ্যাসের দাম দ্বিগুণ করার সিদ্ধান্ত রহস্যজনক। এটি শিল্প প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র। বাংলাদেশের শিল্প বাজারকে অন্য দেশের হাতে তুলে দেয়ার গভীর কূটকৌশল। তারা বলেছেন, ক্যাপটিভে হঠাৎ গ্যাসের দামের অস্বাভাবিক এ বৃদ্ধির ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যে চরমমাত্রায় বিরূপ প্রভাব পড়বে। যেসব শিল্প মালিকরা এতোদিন কিছুটা লাভের মুখ দেখে আসছিলেন তাদের এখন লাভ তো দূরের কথা লোকসানের কবলে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যারা না লাভ না লোকসানে আছেন (ব্রেক ইভেন) তারা নির্ঘাত লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবেন। আর যারা লাভের আশায় লোকসান দিয়ে হলেও কোনোমতে শিল্প প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রেখেছেন তাদের কোনো গত্যন্তর নেই। এ পরিস্থিতিতে যে কোনো মুহূর্তে তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নিতে হবে। এর ফলে দেশে আশংকাজনক হারে কর্মসংস্থান হ্রাস পাবে। বেকার হয়ে যেতে পারে শ্রমিক-কর্মচারীদের একটি বড় অংশ। এ অবস্থায় ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা অবিলম্বে ক্যাপটিভ প্লান্টে গ্যাসের দাম না বাড়ানোর জোর দাবি জানিয়েছেন।
এর আগে গত জানুয়ারি মাসে নতুন ক্যাপটিভ পাওয়ার প্লান্টে গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেয় সরকার। আকস্মিক ওই সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়ে সারা দেশের ছোট-বড় ২ হাজারের বেশি শিল্প-কারখানা। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে শিল্প স্থাপনসংক্রান্ত সব কাজ গুছিয়ে আনার পর শিল্পোদ্যোক্তারা জানতে পারেন, তাদের ক্যাপটিভ পাওয়ার প্লান্টে গ্যাস দেয়া হবে না। শিল্পোদ্যোক্তাদের কাছে খবরটি ছিল অনেকটা বিনা মেঘে বজ পাতের মতো। আর নেতিবাচক এ সিদ্ধান্তের ফলে নতুন শিল্প-কারখানাগুলো শুরুতেই মুখ থুবড়ে পড়ে। এখন দাম দ্বিগুণ করায় কুচক্রী মহলের ষোলোকলাই পূরণ হল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ যুগান্তরকে বলেন, ক্যাপটিভ পাওয়ারে গ্যাসের দাম দ্বিগুণ করা মানেই হচ্ছে সরকার ক্যাপটিভে গ্যাস সরবরাহকে নিরুৎসাহিত করতে চায়। ভবিষ্যতে আর কোনো ক্যাপটিভ পাওয়ারে গ্যাসের সংযোগ দেয়া হবে না।
এক্সপোর্টাস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি সালাম মুর্শেদী বলেন, ক্যাপটিভ পাওয়ার প্লান্ট মূলত গ্যাস এবং ডিজেলে চলে। তবে আমাদের এখানে অধিকাংশই গ্যাসভিত্তিক। তিনি বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যে আমাদের দুই প্রতিযোগী রয়েছে ভারত ও চীন। গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ফলে পোশাক শিল্পের ব্যবসায়ীদের এখন প্রতিযোগিতায় বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। তার মতে, বিশ্বের যেসব দেশ দ্রুত অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে গেছে তাদের মূল চালিকাশক্তি ছিল শিল্প-কারখানা। অথচ এ দেশে ক্যাপটিভে গ্যাসের দাম বাড়িয়ে দিয়ে শিল্প-কারখানার চাকা বন্ধ করার চক্রান্ত চলছে।
পাউয়ার সেলের সাবেক মহাপরিচালক ড. বিডি রহমতউল্লাহর মতে, বাংলাদেশের মতো দেশে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম সস্তাই থাকা উচিত। অনেকে বলে দেশে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম অন্য দেশের চেয়ে অনেক কম। আমি মনে করি, অবশ্যই কম হতেই হবে। কারণ, অন্য দেশের চেয়ে এখানকার মানুষের মাথাপিছু আয়ও কম। জ্বালানির দাম বাড়লে পণ্যের দাম বাড়ে, জীবনযাত্রার ব্যয়ও বাড়ে। তিনি বলেন, এর আগে সরকার নতুন ক্যাপটিভে গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে বড় ধরনের ভুল করেছিল। এখন আবার ক্যাপটিভে গ্যাসের দাম বাড়িয়ে দিয়ে নিজের পায়ে নিজেরাই কুড়াল মারার অবস্থা তৈরি করলো।
সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ক্যাপটিভ পাওয়ারে গ্যাসের দাম এক লাভে দ্বিগুণ বাড়ানোর ঘোষণা জনগণ ও শিল্প প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করার শামিল। এতে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি হবে। সরকার জনকল্যাণমুখী রাষ্ট্র হিসেবে জনমুখী সিদ্ধান্ত না নিয়ে বিপরীত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ক্যাপটিভে গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে। এতে বেকার হয়ে যাবেন হাজার হাজার কর্মক্ষম মানুষ। এর প্রভাব পড়বে জাতীয় অর্থনীতিতে। তিনি বলেন, গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক ও গণবিরোধী এবং সরকারকে বেকায়দায় ফেলার ষড়যন্ত্র। সুজন সম্পাদক আরও বলেন, গ্যাস খাতে সরকারকে কোনো ভর্তুকি দিতে হয় না। কোনো লোকসানও নেই। বরং গত ৫ বছরে পেট্রোবাংলা যেখানে ২০ হাজার ৮০ কোটি টাকা আয় করেছে, সেখানে গৃহস্থালি ও ক্যাপটিভ পাওয়ার প্লান্টে গ্যাসের দাম দ্বিগুণ করা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার বিদ্যুত ও গ্যাসের নতুন দাম ঘোষণা করা হয়। এতে ক্যাপটিভ পাওয়ারে গ্যাসের দাম শতভাগ বাড়ানো হয়।
ব্যবসায়ীদের মতে, ক্যাপটিভ পাউয়ারে একবারেই শতভাগ দাম বাড়িয়ে দেয়া শিল্প মালিকদের ওপর একটি বড় ধরনের ধাক্কা, যা সামলে ওঠা শুধু কঠিনই নয়, অনেকে টিকে থাকতে পারবেন না। কেননা ক্যাপটিভ পাওয়ারে সরবরাহ করা গ্যাসের দাম দ্বিগুণ করায় সঙ্গত কারণে উৎপাদিত পণ্যের দামও বেড়ে যাবে। কিন্তু শুধু বাড়ালেই তো হবে না, প্রতিযোগিতামূলক বাজারে ব্যবসায়ীকে টিকে থাকার প্রশ্ন জড়িত। দেশি ও বিদেশি ক্রেতারা যেখানে একই পণ্য অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে পাবেন তারা সেখানে চলে যাবেন। ফলে দেশীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনেক ক্ষেত্রে বাজার (ক্রেতা) হারাতে হবে। বিশেষ করে যেসব শিল্প-কারখানা বা গার্মেন্ট শিল্প বিদেশি ক্রেতাদের কাছ থেকে ইতিমধ্যে অর্ডার নিয়ে পণ্য উৎপাদন করছেন তাদের আগেভাগে ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। ব্যবসায়ীদের মতে, বিদেশী ক্রেতাদের সঙ্গে সব ধরনের খরচের বিষয়টি বিবেচনা করেই পণ্যমূল্য নির্ধারণ করা হয়। হঠাৎ করে জ্বালানি খরচ দ্বিগুণ হলে আগের অর্ডার নেয়া পণ্যে ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, ক্যাপটিভ পাউয়ারে গ্যাসের দাম দ্বিগুণ করায় স্পিনিং মিলে সুতার উৎপাদন খরচ প্রতি কেজিতে ৭ থেকে ৮ সেন্ট বেড়ে যাবে। বিদেশী ক্রেতারা অতিরিক্ত এই দাম পরিশোধ করবেন না। তাহলে প্রশ্ন হল- এই ক্ষতিপূরণ তাদের কে দেবেন? তারা মনে করেন, এসব নীতি গ্রহণের মধ্য দিয়ে সরকার নিজেকে ব্যবসাবান্ধব বলে দাবি করতে পারবে না। উন্নত দেশগুলোতে দেশীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা ও সমর্থন দেয়া হয়। কেননা কোনো দেশ দ্রুত উন্নতি করতে হলে তাকে প্রথমে ব্যবসা-বাণিজ্যে বেশি বেশি সফলতা দেখাতে হবে। আর এ রকম ইতিবাচক নীতি গ্রহণ করে আজ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ চীন, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের মতো বহু দেশ উন্নতির শিখরে পৌঁছে গেছে।
ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীদের অনেকে বলেন, দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ গ্যাসের বরাদ্দ দেয়ার ক্ষেত্রে যে সমনীতি গ্রহণ করা উচিত ছিলো তা বাস্তবে করা হচ্ছে না। যাদের আগে গ্যাস সংযোগ পাওয়ার কথা, তারা পাচ্ছেন না। এ রকম যৌক্তিক অভিযোগ এখন ভূরি ভূরি। এ কারণেও অনেক সফল উদ্যোক্তা শিল্প বিকাশের লক্ষ্যমাত্রা থেকে পিছিয়ে পড়ছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, চাহিদামাফিক নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সুবিধা পেলে তো আজ ক্যাপটিভ পাউয়ার প্লান্টের জন্য গ্যাস সংযোগ নিতে হতো না। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। বিদ্যুত সরবরাহ ব্যবস্থায়ও রয়েছে নানা ত্রুটি। হঠাৎ করে ভোল্টেজ ওঠানামা করে। এতে প্রতিনিয়ত উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটে। এর ফলে উৎপাদন ব্যাহত হওয়া ছাড়াও অনেক সময় মূল্যবান মেশিনারিজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব কারণে অনেকটা বাধ্য হয়েই ব্যবসয়ীরা ক্যাপটিভ পাওয়ার প্লান্ট স্থাপন করেন।
পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা যায়, দেশে ব্যবহৃত মোট গ্যাসের ১৭ দশমিক ১৭ শতাংশ ব্যবহৃত হয় উৎপাদনমুখী শিল্প-কারখানায় নিজস্ব ক্যাপটিভ পাওয়ারে। অর্থাৎ মোট উৎপাদিত গ্যাসের ৪৭৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ক্যাপটিভ পাওয়ারে ব্যবহার হয়ে আসছে। যদিও এ খাতে শিল্প মালিকদের গ্যাসের চাহিদা আরও অনেক বেশি। কিন্তু গ্যাস সংকটের কারণে সরকার সব শিল্প মালিকদের ক্যাপটিভ সংযোগ দিতে পারছে না। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, সরকার যখন শিল্প-কারখানায় স্বাভাবিক বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারেনি তখন শিল্প মালিকরা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ক্যাপটিভ পাওয়ার প্লান্ট তৈরি করে। অনেক শিল্প মালিক ক্যাপটিভে উৎপাদিত বিদ্যুৎ নিজেদের প্রয়োজন শেষে জাতীয় গ্রিডেও সরবরাহ করে থাকেন। কিন্তু সেই ক্যাপটিভ পাওয়ারে সরবরাহকৃত গ্যাসের মূল্য দ্বিগুণ করায় পুরো ইন্ডাস্ট্রি এখন হুমকির মুখে পড়বে। সবচেয়ে বেশি হুমকির মধ্যে রয়েছে রফতানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠান।
পেট্রোবাংলার এক পদস্থ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, টানা অবরোধ ও হরতালে নাশকতার কারণে শিল্পখাতে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা। এ মুহূর্তে ক্যাপটিভ পাওয়ারে গ্যাসের দাম এক লাফে দ্বিগুণ করে দিলে এ খাতটি বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে সরকারের নির্দেশে অপচয় কমাতে অধিকাংশ শিল্প মালিক ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে উন্নত মানের জেনারেটর বসিয়েছে। এতে তাদের ব্যয় আরও বেড়েছে।
এদিকে ক্যাপটিভ পাউয়ারে গ্যাসের দাম বাড়ানোয় শিল্প-কারখানা পরিচালনাকারী মালিকদের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যে কোনো সময় এই সেক্টরে বড় ধরনের অরাজকতা নেমে আসতে পারে। কারণ হিসেবে অনেক ব্যবসায়ী বলছেন, গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীদের খরচ বেড়ে যাবে। এ অবস্থায় বাধ্য হয়ে লোকসান ঠেকাতে শ্রমিক-কর্মকর্তা-কর্মচরীর বেতন-ভাতা কমিয়ে দিতে হবে, নতুবা শ্রমিক ছাঁটাই করতে হবে। আর তাতেও পরিস্থিতি সামাল দেয়া সম্ভব না হলে প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা ছাড়া পথ থাকবে না। সে রকম পরিস্থিতি হলে দেশের শিল্প প্রতিষ্ঠান সেক্টরে নেমে আসবে অরাজকতা।
জানা গেছে, ২০০৯ সালের ২১ জুলাই থেকে শিল্প ও বাণিজ্যিক গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেয়ার পর শিল্পোদ্যোক্তারা নিজেদের উদ্যোগে ক্যাপটিভ জেনারেটর বসিয়ে বিদ্যুত উৎপাদন শুরু করেন। এর আগে বড় বড় শিল্প-কারখানা ক্যাপটিভ পাউরের মাধ্যমে চলছে। ছয়টি বিতরণ কোম্পানির কাছ থেকে গ্যাস সরবরাহ করা হয়। তিতাসের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, শিল্পে গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেয়ার পর সরকার মাঝারি থেকে বড় শিল্প-কারখানাগুলোতে ক্যাপটিভ পাওয়ারকে উৎসাহিত করে আসছিলো।
ক্যাপটিভ পাউয়ার উৎপাদনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ স্মল অ্যান্ড ক্যাপটিভ পাওয়ার প্রডিউসার্স অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনের নেতারা যুগান্তরকে জানান, ক্যাপটিভ পাওয়ারে গ্যাসের দাম কোনোভাবেই বাড়ানো যাবে না। গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পেলে ক্যাপটিভ পাওয়ারভিত্তিক স্থানীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সংগঠনের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোহসিন বলেন, বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের শুরু থেকেই ক্যাপটিভ থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের মূল্য এবং বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো থেকে নেয়া বিদ্যুতের মূল্যের মধ্যে বড় ধরনের ব্যবধান আছে। পিডিবি গ্যাস ক্রয় করে প্রতি ঘনমিটার ২ দশমিক ৮২ টাকা মূল্যে, আর বিদ্যুৎ বিক্রি করে প্রতি কিলোওয়াট ৬ দশমিক ৯৬ থেকে ১১ দশমিক ৮৫ টাকা। পক্ষান্তরে ক্যাপটিভ পাওয়ার প্লান্টগুলোকে এতদিন গ্যাস ক্রয় করতে হতো প্রতি ঘনমিটার ৪ দশমিক ১৮ টাকা করে, আবার বিদ্যুৎ বিক্রয় করতে হয় প্রতি কিলোওয়াট ২ দশমিক ৩৭ টাকায়। তিনি পুরো ক্যাপটিভ পাওয়ারে সরবরাহকৃত গ্যাসের দাম না বাড়ানোর পাশাপাশি নতুন সংযোগ বন্ধের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে অবিলম্বে এ সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানান।
পাউয়ার সেলের সাবেক মহাপরিচালক ড. বিডি রহমতউল্লাহ ভারতের একটি উদাহরণ টেনে বলেন, আশির দশকে ভারত সেচ খাতে বিনামূল্যে বিদ্যুত দেয়া শুরু করে। এর ফলে ভারতে কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। ভারত খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়। ভারতের অর্থনীতি ব্যাপক শক্তিশালী হয়। বিদ্যুতের পেছনে ভারতকে যে ব্যয় করতে হয়েছিল তার সুফল তারা ভালোভাবেই পেয়েছিলো। তিনি মনে করেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বাংলাদেশকেও ভারতের মতো নীতি গ্রহণ করতে হবে।
এদিকে বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ যুগান্তরকে তার যুক্তি উপস্থাপন করে বলেন, যখন সরকার শিল্প মালিকদের চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুত সরবরাহ করতে পারেনি তখন ক্যাপটিভ পাওয়ারে গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছে। কিন্তু বিদ্যুতের সংকট নেই। শিল্প সংযোগ উন্মুক্ত। শিল্প মালিকরা চাইলেই বিদ্যুৎ সংযোগ পাচ্ছেন, ফলে এখন ক্যাপটিভ পাওয়ারে গ্যাস সরবরাহ করা যুক্তিযুক্ত নয়। অদূর ভবিষ্যতে ক্যাপটিভ পাউয়ারে ব্যবহৃত গ্যাস বিদ্যুত উৎপাদনে সরবরাহের চিন্তা করছে সরকার। এতে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুত কারখানায় গ্যাসের সরবরাহ বাড়বে। বিদ্যুত উৎপাদন আরও স্বাভাবিক হবে।