দামুড়হুদায় রেজিস্ট্রেশনবিহীন মোটরসাইকেলসহ অবৈধযান আটক অভিযান অব্যাহত
বখতিয়ার হোসেন বকুল: দামুড়হুদা উপজেলার অধিকাংশ সড়কেই আগের মতো আর চলতে দেখা যাচ্ছে না রেজিস্ট্রেশনবিহীন মোটরসাইকেল। পুলিশের ধরপাকড় আর মামলা থেকে রেহাই পেতে রেজিস্ট্রেশনবিহীন মোটরসাইকেল বের করতে ভয় পাচ্ছেন মালিকরা। এছাড়া মহাসড়কে অবৈধযান চলাচলের ওপরও জারি হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। ফলে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা অনেকাংশে কমে আসলেও কাজ কমে যাওয়ায় মহাবিপাকে পড়েছে মোটরসাইকেল গ্যারেজ মালিক ও শ্রমিকরা। সরকারি সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে ন্যায় সঙ্গত কিছু দাবিও তুলে ধরেছেন এ সমস্ত ভুক্তভোগী শ্রমিকরা।
জানা গেছে, সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাসের পাশাপাশি রাস্তায় ছিনতাই ও নাশকতা প্রতিরোধে রেজিস্ট্রেশনবিহীন মোটরসাইকেল আর সড়কে চলতে দেয়া যাবেনা সরকারি উচ্চ পর্যায়ের এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কঠোর অভিযানে নেমেছে পুলিশ প্রশাসন। রেজিস্ট্রেশনবিহীন মোটরসাইকেল রাস্তায় পেলেই তা আটক করে নেয়া হচ্ছে থানায়। সরকারি উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে পুলিশের এ আকস্মিক অভিযানে এলাকার শ শ রেজিস্ট্রেশনবিহীন মোটরসাইকেল এখন থানা হেফাজতে। রেজিস্ট্রেশনের কাগজ এনেই ফেরত নিতে হচ্ছে মোটরসাইকেল। সরকারি কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সাংবাদিক, পুলিশ, রাজনীতিবিদ কেউই ছাড় পাচ্ছেন না এ অভিযান থেকে। অভিযান এড়াতে কেউ কেউ মোটরসাইকেল বের করলেও যাচ্ছেন না মহাসড়কে। আবার অনেকেই বাড়ি থেকে মোটরসাইকেল বেরই করছেন না। ফলে একদিকে যেমন হ্রাস পেয়েছে সড়ক দুর্ঘটনা অপরদিকে কাজ কমে যাওয়ায় মহাবিপাকে পড়েছেন মোটরসাইকেল গ্যারেজ মালিক ও শ্রমিকরা।
সরকারের এ সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়ে মোটরসাইকেল মালিক দামুড়হুদার ডা. মাসুম আলী খাঁন বলেন, রাস্তায় যে সমস্ত রেজিস্ট্রেশনবিহীন মোটরসাইকেল চলাচল করতো তার অধিকাংশই চায়না মোটরসাইকেল। শোরুম মালিকরা নামমাত্র টাকা নিয়ে কিস্তিতে গাড়ি দিয়ে দিচ্ছে। এ কারণেই এখন বাইসাইকেলের মতো ঘরে ঘরে মোটরসাইকেল। কিস্তিতে দেয়া ওই সমস্ত গাড়িগুলোর রেজিস্ট্রেশনতো দূরে থাক বারংবার তাগাদা দিয়েও টাকা পরিশোধ হয় না। তবে বর্তমানে অনেকেই চাপে পড়ে ধার-দেনা করেও টাকা পরিশোধ করতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে শোরুম মালিকরা রয়েছেন বেশ খোঁশ মেজাজে। নুতন গাড়ি বিক্রি কম হলেও তাগাদা ছাড়াই বকেয়া টাকাতো ঘরে বসেই পেয়ে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে দামুড়হুদা উপজেলা মোটরসাইকেল ম্যাকানিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আক্তার হোসেন মোকসেদ বলেন, দীর্ঘদিন পর হলেও সরকার রেজিস্ট্রেশনবিহীন মোটরসাইকেল চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে এটা অবশ্যই প্রশংসনীয়। তবে রেজিস্ট্রেশন ফিসও আনুপাতিক হারে অন্যান্য যানবাহনের তুলনায় মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে অনেক বেশি নেয়া হচ্ছে। কোটি টাকা মূল্যের একটি প্যাডেরোর রেজিস্ট্রেশন ফিস যেখানে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা, সেখানে দু লাখ টাকা মূল্যের একটি মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন ফিস ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। যা দামের আনুপাতিক হারে অনেকটাই বেশি। এ কারণেই অনেকেই মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন করতে চান না। সরকার হঠাত করে রেজিস্ট্রেশনবিহীন মোটরসাইকেল ধরপাকড় শুরু করায় প্রায় এক মাস যাবত কোনো মোটরসাইকেলই আর গ্যারেজে আসছেনা। ফলে গ্যারেজে কর্মরত শ্রমিকরা পড়েছে মহাবিপাকে। বেকার হয়ে পড়েছে কয়েকশ শ্রমিক। অলস সময় পার করতে হচ্ছে আমাদের। যা বিগত ২০ বছরেও আমাদের জীবনে এ রকম দুর্দিন আসেনি। উপজেলায় ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ৪৮টি গ্যারেজ রয়েছে। প্রত্যেকের একই অবস্থা। একেবারেই কাজ নেই। তিনি সরকারি নীতি নির্ধারণী মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আরো বলেন, শতভাগ মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আনতে হলে রেজিস্ট্রেশন ফিস কমাতে হবে। রেজিস্ট্রেশন ফিস কমিয়ে ৫০ সিসির জন্য ৫ হাজার, ৮০ সিসির জন্য ৮ হাজার, ১০০ সিসিরি জন্য ১০ হাজার, ১২৫ সিসির জন্য ১৫ হাজার টাকা রেজিস্ট্রেশন ফিস নির্ধারণ করলে প্রতিটি মোটরসাইকেলই রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আসবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। এ বিষয়ে দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি কামরুজ্জামান বলেন, এটা সরকারি উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত। পুলিশ এখন শুধুমাত্র রাস্তায় অভিযান চালাচ্ছে। এরপর পাড়ামহল্লায় গিয়ে বাড়ি বাড়ি তল্লাশি অভিযান শুরু হবে। এক কথায় আগামীতে কোনো রেজিস্ট্রেশনবিহীন মোটরসাইকেল থাকবে না।