মাথাভাঙ্গা মনিটর: সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি নিয়ে নাসার দেয়া তথ্য নিয়ে বিশ্বজুড়ে তোলপাড় চলছে। কয়েক বছর গবেষণার পর নাসার বিজ্ঞানীরা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, আগামী একশ বছরের মধ্যে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা তিন ফুট বা এক মিটার বেড়ে যাবে। এতে ডুবে যাবে পৃথিবির এক তৃতীয়াংশ। বিশ্বের যেসব শহর সমুদ্রের একশ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থান করছে সেগুলো ডুবে যাবে ওই সময়ে। নদীতে পানি প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকা যেমন ঢাকা এবং এর আশপাশের এলাকাগুলোতে সারা বছর পানি থাকবে বলে জানিয়েছে নাসা। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল, দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোসহ নোয়াখালী, কক্সবাজার এবং চট্টগ্রাম রয়েছে অত্যাধিক ঝুঁকির মধ্যে।
নাসার বিজ্ঞানীদের মতে, সমুদ্রপৃষ্ঠের তিনফুট উচ্চতার মধ্যে সারা পৃথিবীতে দেড় কোটি মানুষ বসবাস করে। প্রথম ধাক্কায় তারা উদ্বাস্তু হয়ে পড়বে। এছাড়া সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ওই তিন ফুট বাড়লে সারাবিশ্বের এক তৃতীয়াংশ লোক ঝুঁকিতে পড়বে। এই লোকসংখ্যা হবে প্রায় দুই দশমিক চার বিলিয়ন।
উল্লেখ্য, অনেক আগে থেকেই সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে আসছিলেন। এবার নাসার বিজ্ঞানীরা স্যাটেলাইটে পাওয়া তথ্য পর্যালোচনা করে একটি সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছালেন। তারা জানিয়েছেন, গ্রিনল্যান্ড এবং অ্যান্টার্কটিকার বরফ দ্রুত গলে যাচ্ছে। আর এর প্রভাব গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে বলে মনে করেন নাসার আর্থ সায়েন্স ডিভিশনের পরিচালক মিশেল ফ্রেইলস। তিনি জানিয়েছেন, প্রায় দেড় কোটি লোক সমুদ্রপৃষ্ঠের এক মিটার উচ্চতার মধ্যে বাস করে। এদের অধিকাংশই আবার এশিয়ায়। মিশেল ফ্রেইলস মনে করেন, নির্দিষ্ট ওই মাত্রায় পানি বাড়লে ফ্লোরিডা, সিঙ্গাপুর এবং টোকিওর মতো শহরও বিনাশ হয়ে যাবে। প্রশান্ত মহাসাগরের কিছু বদ্বীপও বিলুপ্ত হয়ে যাবার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
নাসার বিজ্ঞানীদের মতে, ১৯৯২ সাল থেকে এ পর্যন্ত সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা তিন ইঞ্চির মতো বেড়েছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি, ফসিল জ্বালানি ব্যবহার এবং বরফ গলার ফলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এখন যদি আরো তিন ফুট বাড়ে তাহলে কোটি কোটি লোক সঙ্কটে পড়বে। উচ্চতা বৃদ্ধির এ সতর্কতা নতুন নয়। বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে এ বিষয়ে সতর্ক করে আসছেন। নাসার বিজ্ঞানীদের মতে, পানির উচ্চতা ঠেকাতে কার্যকর পদক্ষেপ কমই নেয়া হয়েছে। আর পরিস্থিতি যে পর্যায়ে গেছে এখন পদক্ষেপ নিলে তেমন একটা সুফল মিলবে বলেও মনে হয় না। এ কাজটি করতে এখন অনেক দেরি হয়ে গেছে।
উল্লেখ্য, জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক আন্তঃসরকারীয় প্যানেল দু বছর আগে জানিয়েছিলো, ২১শ সালের মধ্যে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা এক থেকে তিন ফুট বাড়বে। কিন্তু নাসার গবেষক স্টিভ নিরিম বলেছেন, পরিস্থিতি তার চেয়েও ভয়াবহ। কারণ আগামী ১৫টি গ্রীষ্মের মধ্যে অধিকাংশ বরফ গলে যাবে। এই পানি সাগরে যুক্ত হলে উচ্চতা এমনিতেই বেড়ে যাবে। স্টিভ নিরিম মনে করেন, আগামী একশ বছরে সমুদ্রে যে পরিমাণ পানি বাড়বে তার এক তৃতীয়াংশ হবে তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে। আর দু তৃতীয়াংশ বাড়বে গ্রিনল্যান্ড এবং অ্যান্টার্কটিকার বরফ গলার কারণে। নাসার মতে, চলতি বছরের গ্রীষ্মের আগে ভয়াবহ আকারে বরফ গলেছে তা সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়াতে সহায়তা করেছে। এ সময়ে দিনে প্রায় ১২ বর্গকিলোমিটার বরফ গলেছে। এর ফলে উচ্চতা বেড়েছে প্রতিদিন।