আবারও চুয়াডাঙ্গা আন্তঃজেলা সড়কগুলোতে পরিবহন ধর্মঘটের পূর্ব ঘোষণা দিয়েছে বাস মালিক সমিতি, মালিক গ্রুপ ও পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন। সংগঠনগুলো যৌথসভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রেসবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়েছে, ২৫ জুলাই অর্থাৎ আজকের মধ্যে জেলার যে সকল সড়কে বাস চলে সে সড়কগুলো থেকে শ্যালোইঞ্জিন চালিত অবৈধযানসহ অটো বন্ধ করা না হলে আগামীকাল ২৬ জুলাই থেকে আন্তঃজেলার সকল রুটে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘট শুরু হবে।
নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না যে, ইতঃপূর্বে একই দাবিতে বহুবার ধর্মঘট দেখেছে চুয়াডাঙ্গাবাসী। ধর্মঘটের কারণে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হতে হয়েছে। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন, পরিবহন মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়ন অবৈধযান প্রধান প্রধান সড়ক থেকে উচ্ছেদের দাবি তোলে কেনো? কেনোই বা যা অবৈধ তা উচ্ছেদে পুলিশ প্রশাসন নীরবতা পালন করে? পক্ষে বিপক্ষে যুক্তি ভুরি ভুরি।
শ্যালোইঞ্জিন চালিত করিমন, নসিমন, ভটভটিসহ নানা নামের যানের বৈধতা দেয়া হয়নি যুক্তিসঙ্গত কারণেই। দুর্ঘটনা প্রবণ যানকে সড়কে চলার বৈধতা দেয়া যায় না। অথচ অবৈধযান চালানোর মধ্য দিয়ে অসংখ্য পুরুষ কর্মসংস্থান পেয়েছে, সংসারে স্বচ্ছলতা এসেছে বহু পরিবারে। তাছাড়া কৃষিপণ্য থেকে শুরু করে সব ধরনের পণ্য স্বল্প খরচে আদান প্রদানে বৈপ্লবিক পরিবর্তনও এনেছে। এর ফলে দ্রব্য মূল্য স্থান ভেদে উল্লেখ্যযোগ্য তফাত হয়নি। যার সুফল ভোক্তা সাধারণই ভোগ করছে। এরকম বেশ কিছু যুক্তিতে স্থানীয় প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা বৈঠকে ছোট ছোট সড়কে এসব যান চলার সিদ্ধান্ত নেয়ারও উদাহারণ রয়েছে। তাছাড়া মাসোহরা নিয়ে টোকেন বাণিজ্যেসহ বিশেষ দরদীয় মানসিকতা তো আছেই।
আর পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের মাঝে মাঝে কর্মবিরতি তথা ধর্মঘটের ঘোষণা এবং এক দু দিনের ধর্মঘট পালনের পর প্রশাসনের সাথে বৈঠকে তা প্রত্যাহারের বিষয়টির আড়ালে যতোটা না সড়ক দুর্ঘটনামুক্ত করার তাগিদ, তার চেয়ে মালিক-শ্রমিকদের ব্যবসায়ী স্বার্থ সংশ্লিষ্টতাই থাকে বেশি। স্বাভাবিক। টাকা দিয়ে বৈধ যানবাহন কিনে, বছরান্তে ফিটনেসসহ রুটপারমিট নেয়ার পর যদি ওইসব অবৈধযানের কারণে আয়ে ভাটা পড়ে, তা হলে তো আন্দোলন সংগ্রামের বিষয়টি আসবেই। এসেছেও তাই। অবৈধযান বন্ধের দাবিতে ধর্মঘটের পূর্ব ঘোষণা, ধর্মঘট এবং প্রশাসনের আহ্বানে বৈঠকে বিশেষ প্রতিশ্রুতিতে তা প্রত্যাহার যেনো গা সওয়া একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাঝে মাঝে পরিবহন ধর্মঘটের কারণে যাত্রী সাধারণকে যে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোয়াতে হয় সেদিকে কজনই আর গুরুত্ব দিয়ে দেখেন? সে কারণেই ধর্মঘটের আগেই প্রশাসনের তরফে বিশেষ উদ্যোগের বিষয়টি গুরুত্ববহন করে।
অবৈধযান প্রধান প্রধান সড়ক থেকে শক্তহাতে উচ্ছেদ করা প্রয়োজন। শ্যালোইঞ্জিন চালিত অবৈধযান চালিয়ে যাতোটা পরিবারে স্বচ্ছলতা এসেছে, তার চেয়ে ঢের বেশি পরিবারে চেপে বসেছে পঙ্গুত্বের অভিশাপ। একেতো দুর্ঘটনা প্রবণ যান, তার ওপর তা যারা চালায় তারা অদক্ষ এবং বেপরোয়া। সে কারণে সড়কগুলো হয়ে উঠেছে মৃত্যুপুরি। কোনো অজুহাতেই প্রধান প্রধান সড়কে অবৈধযান চলাচলের সুযোগ দেয়া সঙ্গত নয়।
ধর্মঘটের আগেই প্রশাসনের বিশেষ উদ্যোগ যাত্রী সাধারণকে দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দেবে। এদিকে বিশেষ দৃষ্টি দেয়া দরকার। অবাক হলেও সত্য যে, সড়কে যখন ট্রাফিক পুলিশ, মোটরযান অধ্যাদেশের আওতায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়, তখন বৈধযানের কাগজপত্র দেখাটাই মূখ্য হয়, অথচ সামনে দিয়ে বেপরোয়া গতিতে ছুটে যায় অবৈধযান। এ দৃশ্য দেশের প্রচলিত আইনের প্রতি অবজ্ঞারই ইঙ্গিত বহন করে নাকি? প্রতিকারে বাস্তবমুখি পদক্ষেপ প্রয়োজন।