গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুর গাংনী বাজারের আলোচিত-সমালোচিত সোনা ব্যবসায়ী নাজ জুয়েলার্সের স্বত্বাধিকারী জাহিদুল ইসলাম এবার পেটালেন হাসানুল ইসলাম নামের এক যুবককে। গতকাল সোমবার দিনভর তার দোকানের টিনের ছাউনি মেরামতের কাজ শেষে মজুরি চাইতে গেলে রড দিয়ে পিটিয়ে তার হাত ভেঙে দেয়া হয়। এ হামলার ঘটনায় স্থানীয়দের ব্যাপক জনরোষের মুখে পড়েন বিভিন্ন কারণে সমালোচিত জাহিদুল ইসলাম। আহত হাসানুলকে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে কুষ্টিয়ায় রেফার করা হয়েছে। তিনি গাংনী ঈদগাপাড়ার মৃত ভেকুল মিয়ার ছেলে।
আহত ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হাসানুল ইসলাম গতকাল সোমবার ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জাহিদুল ইসলামের সোনার দোকানের ছাউনি মেরামতের কাজ করেন। সন্ধ্যার পরে দোকানে তিনি মজুরি আনতে গেলে নানা টালবাহনা শুরু করেন জাহিদুল। কাজ ভালো না হওয়ার অজুহাতে হাসানুলকে গালমন্দ করেন। প্রতিবাদ করায় তার ওপরে হামলা করেন জাহিদুল ও তার ছেলে। দোকানে রাখা লোহার রড দিয়ে হাসানুলের হাত ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে বেধড়ক মারপিট করা হয়। এতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন হাসানুল। বিষয়টি দেখে প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন স্থানীয় কিছু যুবক। তারা জাহিদুলকে ধাওয়া করে। অবস্থা বেগতিক দেখে দোকান বন্ধ করে পালিয়ে জনরোষ থেকে রক্ষা পায় জাহিদুল ও তার ছেলে। হাসানুলকে উদ্ধার করে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। সেখানে কয়েক দফা বমি করার পর তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। পরে তাকে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন চিকিৎসক। তার একটি হাত ভেঙে গেছে এবং রডের আঘাতের কারণে শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানান চিকিৎসকরা।
এদিকে প্রকাশ্যে হাসানুলকে একা পেয়ে পিতা-পুত্রের হামলার ঘটনায় তাদের শাস্তি দাবিতে ফুঁসে ওঠেন বাজারের ব্যবসায়ী ও স্থানীয় লোকজন। হামলার খবর ছড়িয়ে পড়লে মুহূর্তেই স্থানীয়রা তার দোকানের সামনে জড়ো হয়ে শাস্তির দাবিতে স্লোগান দেয়। একই সাথে তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উত্থাপন করেন তারা। খবর পেয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেক ও আওয়ামী লীগ নেতা হাজি মহাসিন আলীসহ নেতৃবৃন্দ ছুটে যান ঘটনাস্থলে। তারা হাসানুলকে দ্রুত কুষ্টিয়া প্রেরণের ব্যবস্থা করেন।
এ প্রসঙ্গে এমএ খালেক বলেন, ঘটনাটি নির্মম ও নির্দয়। একজন মানুষকে পেটানোর ঘটনা কোনো সভ্য সমাজ সহ্য করবে না। তিনি আরো বলেন, হাসানুল ইসলাম শুধু মিস্ত্রি নয় সে আওয়ামী লীগের একজন সক্রিয় কর্মীও। হামলার তীব্র প্রতিবাদ, নিন্দা ও দোষীদের শাস্তি দাবি করেন এমএ খালেকসহ নেতৃবৃন্দ।
এদিকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান গাংনী থানার ওসি (তদন্ত) মোক্তার হোসেন, এসআই মনির ও এসআই একরামসহ পুলিশের একাধিক দল। জাহিদুলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আশ্বাস দিয়ে জনরোষ কিছুটা প্রশমন করেন। এ সময় পুলিশের দুটি দল জাহিদুলের ডাকবাংলো পাড়ার বাড়িতে অভিযান চালায়। তবে ঘটনার পর থেকেই জাহিদুল সপরিবারে আত্মপোগন করায় তাদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তবে দ্রুত পিতাপুত্রকে গ্রেফতার করে তাদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা চলছে বলে জানান ওসি (তদন্ত) মোক্তার হোসেন।
হাসানুলের কাছে হাসপাতালে অবস্থান করছেন যুবলীগ নেতা আনারুল ইসলাম বাবু ও হাসু। তারা জানান, হাসানুলের চিকিৎসা শুরু হয়েছে। সে এখনো আশঙ্কামুক্ত নয় বলে তাদেরকে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।