দামুড়হুদার ছয়ঘরিয়ায় কথিত কবিরাজের লাম্পট্য প্রকাশের পর এলাকা জুড়ে প্রতিবাদের ঝড়
দর্শনা অফিস: বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত ছয়ঘরিয়ার কথিত কবিরাজ আলেফ মুন্সিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ৫ম শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণ ও অন্তঃসত্ত্বা করার অভিযোগে গতকাল তাকে গ্রেফতার করা হয়। ধর্ষণের ফলে ৫ম শ্রেণির ছাত্রী বর্তমানে ৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। আলেফ মুন্সির বিচারের দাবিতে ফুঁসে উঠেছে গ্রামের মানুষ।
অভিযোগ থেকে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার ছয়ঘরিয়া গ্রামের প্রতারক আলেফ মুন্সি কুলি থেকে বনে গেছেন জণ্ডিসসহ বিভিন্ন জটিল রোগ নিরাময়ের বিশেষজ্ঞ। স্থানীয়রা এ তথ্য দিয়ে অভিযোগ করে বলেছে, আলেফ মুন্সির প্রতারণার ফাঁদে পড়েঁ প্রতারিত হয়েছে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা শ শ নারী-পুরুষ। জিন-ভূতসহ বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে রোগীদের কাছ থেকে তিনি হাতিয়ে নেন কাড়ি কাড়ি টাকা। এসব অভিযোগের পর এবার জিন-ভূতের ভয় দেখিয়ে ৫ম শ্রেণির এক ছাত্রীকে ফুঁসলিয়ে ধর্ষণ করেন। এর ফলে ৫ম শ্রেণির ওই ছাত্রী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ায় ঘটনাটি জানাজানি হয়ে যায়। এলাকাবাসী ফুঁসে ওঠে। থানায় নালিশ করা হয়েছে। পুলিশ অভিযুক্ত আলেফ মুন্সিকে গ্রেফতার করেছে।
স্থানীয়রা আরো বলেছে, দামুড়হুদা উপজেলার পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়নের ছয়ঘরিয়া দক্ষিণপাড়ার নয়ন মুন্সির ছেলে আলেফ মুন্সি একই গ্রামের ৫ম শ্রেণির এক ছাত্রীকে জণ্ডিস চিকিৎসা দেয়ার নামে রাত-বিরাতে ডাকতেন তার বাড়িতে। স্কুলছাত্রী অভিযোগ করে বলেছে, প্রায়ই সন্ধ্যার পর আলেফ মুন্সি চিকিৎসা দেয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে তাকে ডেকে নিতেন। আলেফকে দাদা বলে ডাকতো সে। জিন-ভূতের ভয় দেখিয়ে ৫/৬ মাস আগে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ করে। এ কথা কাউকে বললে জিন-ভূতের ভয় দেখিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দেন আলেফ মুন্সি। জিন-ভূতের ভয়ে মুখ খুলতে সাহস না পেলেও তার শারীরিক পরিবর্তন দেখে বুঝে ফেলে পরিবারের লোকজন। পরিবারের পক্ষ থেকে নানা কৌশল অবলম্বন করা হলেও ঘটনা খুলে বলে সে। পরে এ কথা ছড়িয়ে পড়ে গোটা গ্রামে। খবর পেয়ে গতকাল রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে দামুড়হুদা থানার এসআই শিকদার মনিরুল ইসলাম মনির সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌছান। পুলিশ দেখে পালানোর চেষ্টা করেন আলেফ মুন্সি। গ্রামবাসীর সহযোগিতায় তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশ ওই স্কুলছাত্রীকে থানা হেফাজতে নিয়েছে। এ ঘটনায় স্কুলছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে গতকালই আলেফের বিরুদ্ধে দায়ের করেছেন মামলা। এদিকে অভিযুক্ত ভণ্ড কবিরাজ আলেফ মুন্সির শাস্তির দাবিতে ফুঁসে উঠেছে গোটা গ্রামবাসী। এসআই মনির বলেছেন, আজ সোমবার গ্রেফতারকৃত আলেফকে সোপর্দ করা হতে পারে আদালতে। সেই সাথে স্কুলছাত্রীকে চুয়াডাঙ্গা জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ধারায় জবানবন্দি নেয়া হতে পারে। করা হতে পারে ডাক্তারি পরীক্ষা। গ্রামবাসীর অভিযোগে আরো জানা যায়, প্রায় ৩১ বছর আগে ফরিদপুর থেকে দর্শনায় আসেন কথিত ভণ্ড কবিরাজ আলেফ মুন্সি। স্ত্রী ও সন্তানদের ফেলে দর্শনায় রেলকুলির কাজ করতেন। এক পর্যায়ে তার পরিচয় ঘটে দামুড়হুদা উপজেলার পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়নের ছয়ঘরিয়া গ্রামের আজিজুল হকের মেয়ে রাহিমার সাথে। রাহিমাকে বিয়ে করে শ্বশুর বাড়িতেই ঘরজামাই থেকে যান আলেফ। এরই মধ্যে হঠাত করেই আলেফ নিজেকে অলৌকিক শক্তির অধিকারী বলে প্রচার করতে থাকেন। শুরু করেন কবিরাজি, ফাঁদ পাতেন প্রতারণার। তার কাছে জিন আছে বলে গুজব ছড়াতে থাকেন এলাকায়। তার খপ্পরে পড়ে অনেকই হয়েছে নিঃস্ব ও সর্বস্বান্ত।