এইচএসসির ফল পুনঃনিরীক্ষণ : ৩ লাখ শিক্ষার্থীর চ্যালেঞ্জ

স্টাফ রিপোর্টার: এইচএসসির ফল পুনঃনিরীক্ষণে এবার রেকর্ড গড়েছে। সন্তোষজনক রেজাল্ট না হওয়ায় এবার পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন পড়েছে ৩ লাখেরও বেশি। যা মোট শিক্ষার্থীর প্রায় ৩০ ভাগ। এরমধ্যে ইংরেজি ও তথ্যযোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ে আবেদন পড়েছে সবচেয়ে বেশি। আগামী ৮ সেপ্টেম্বর পুনঃনিরীক্ষণের ফল প্রকাশ করা হবে। আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয়ন সাব-কমিটি বলছে, ফেল থেকে পাস নয়, বরং পাস করেছে কিন্তু কাঙ্ক্ষিত জিপিএ পায়নি এমন আবেদনের সংখ্যাই বেশি। বিভিন্ন বোর্ডে ইংরেজি প্রশ্ন কঠিন এবং তথ্যযোগাযোগ প্রযুক্তিতে এবার প্রথম সৃজনশীল প্রশ্ন হওয়ায় সার্বিক পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা কমে যায়। এছাড়া আরও ৭ কারণে এবার ফল বিপর্যয় হয় বলে ফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়। কাঙ্ক্ষিত ফল না পাওয়া শিক্ষার্থীরা এ পুনঃনিরীক্ষণের জন্য আবেদন করেছেন। আর গত ৬ বছরের মধ্যে এবার প্রথম রেকর্ড সংখ্যাক আবেদন পড়েছে।

আন্তঃবোর্ড সূত্রে জানা গেছে, এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ১০ বোর্ডে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১০ লাখ ৬১ হাজার ৬১৪ জন। আর পাস করেছে ৭ লাখ ৩৮ হাজার ৮৭২ জন। আর ফল পরিবর্তন করার জন্য আবেদন করেছে ৩ লাখ ১০ হাজার ৭৯টি। অর্থাৎ ফেল এবং পাস এই দুই ক্যাটাগরি উভয় ফলের বিপরীতে চ্যালেঞ্জকারীর সংখ্যা ২৯ দশমিক ২০ শতাংশ।
ঢাকা বোর্ডে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিস জানায়, এই বোর্ডে আবেদন পড়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ৮০৯ জন। এর মধ্যে ইংরেজি ও তথ্য-যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ে আবেদন বেশি। এ দু’টি বিষয়ে যথাক্রমে আবেদন পড়েছে ১৪ হাজার ১৯৩ ও ১৪ হাজার ২৩টি। এছাড়াও অন্যান্য বোর্ডেও এ বিষয়ে আবেদন বেশি পড়েছে বলে জানান ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও পরীক্ষা বিষয়ে আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক ড. শ্রীকান্ত কুমার চন্দ। তবে সব বোর্ডের সাবওয়ারী আবেদন এখনও হাতে আসেনি বলে জানান তিনি। এ বিশাল সংখ্যাক শিক্ষার্থী কি কাঙ্ক্ষিত ফল পায়নি এমন প্রশ্নে আন্তঃবোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির আহ্বায়ক ও ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, যারা ফল পরিবর্তন করতে চায়, আপাতত তাই মনে হচ্ছে। আবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বেশির ভাগ আবেদনকারী জিপিএ বাড়াতে চায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সাধারণত দু ধরনের শিক্ষার্থী ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করেছে। অকৃতকার্য এবং কাঙিক্ষত ফল না পাওয়া। এরমধ্যে গত কয়েক বছর পুনঃনিরীক্ষণে আবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, অকৃতকার্যদের চেয়ে কৃর্তকায শিক্ষার্থীর সংখ্যাই বেশি। এছাড়া জিপিএ-৫ পেয়েছেন তারপরও আবেদন করছেন এমন শিক্ষার্থীও রয়েছে। কারণ কোন একটি বা দু’টি বিষয়ে জিপিএ-৫ পায়নি সে বিষয়গুলোতে চ্যালেঞ্জ করছে অনেক শিক্ষার্থী। আর উচ্চমাধ্যমিকে এ সংখ্যা আরও বেশি হয়। কারণ এ ফলের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার বিষয়টি যুক্ত। এ বিষয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের প্রধান সিস্টেম এনালিস্ট মনজুরুল কবীর বলেন, এবার এইচএসসিতে আবেদনের রেকর্ড। এর আগে এ সংখ্যক আবেদন কখনও পড়েনি।
আন্তঃবোর্ড জানায়, পুনঃনিরীক্ষণে মোট ৪টি দিক দেখা হয়। এগুলো হলো উত্তরপত্রে সব প্রশ্নের সঠিকভাবে নম্বর দেয়া হয়েছে কিনা, প্রাপ্ত নম্বর গণনা ঠিক রয়েছে কিনা, প্রাপ্ত নম্বর ওএমআর শিটে উত্তোলনে ভুল হয়েছে কিনা এবং প্রাপ্ত নম্বর অনুযায়ী ওএমআর শিটে বৃত্ত ভরাট ঠিক আছে কিনা।
গত ৯ই আগস্ট এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। এবার ১০ বোর্ডে মোট অংশ নেয় ১০ লাখ ৬১ হাজার ৬১৪ জন। এরমধ্যে পাস করেছে ৭ লাখ ৩৮ হাজার ৮৭২ জন। ১০ শিক্ষা বোর্ডে মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪২ হাজার ৮৯৪ জন। গত বছরের তুলনায় এবার পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা কমে যায়। পাসের হার কমে প্রায় ৮ শতাংশ এবং জিপিএ-৫ কমেছে প্রায় ২৮ হাজার। এ শঙ্কা থেকে শিক্ষার্থী হয়তো এবার পুনঃনিরীক্ষণের জন্য আবেদন বেশি করেছে।