সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিরতা

 

আমাদের উচ্চশিক্ষার বিকাশ অনেকাংশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যাবৃদ্ধিতেই সীমিত, বাড়ছে না গুণগত মান। শিক্ষার্থীরা সনদ নিয়ে বেরিয়ে আসছেন, তবে তাদের অনেকের শিক্ষাগত মান নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায়। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের বিচারে দেখলে বলাই যায়, বিশ্ববিদ্যালয় নামটির প্রতি আমরা সুবিচার করতে পারছি না। রাজনীতি শিক্ষার্থী ও শিক্ষক সবাইকে বিভক্ত করেছে। শিক্ষাদানে আন্তরিকতা ও পেশাদারির অভাব, শিক্ষার্থীদের পাঠে অনীহা, কারণে-অকারণে ধর্মঘট বা কর্মবিরতি উচ্চশিক্ষার এ অঙ্গনটিকে ঘুরেফিরেই পেছন দিকে টানে, এগোতে দেয় না।

চলতি সপ্তার প্রথম দিনে দেশের অনেক সরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাস হয়নি শিক্ষকদের কর্মবিরতির কারণে। আন্দোলনটি বেশ কিছুদিন ধরেই চলছে। দাবি ন্যায়সঙ্গত হলে, অধিকার লঙ্ঘিত হলে ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ প্রতিবাদ করবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই আমরা দেখি, তৃতীয় আরেকটি পক্ষকে এ প্রতিবাদের মূল্য দিতে হয়। সহিংস রাজনৈতিক আন্দোলনের মাসুল গোনে সাধারণ মানুষ। একইভাবে শিক্ষাঙ্গনেও যেকোনো ধরনের আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই এ ধরনের যেকোনো পরিস্থিতিতে দু পক্ষ যতো দ্রুত সমঝোতায় আসে, তৃতীয় পক্ষের জন্য ততোই তা মঙ্গলজনক।

সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকরা স্বতন্ত্র বেতন স্কেল ঘোষণা ও প্রস্তাবিত অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেল পুনর্নির্ধারণের দাবি জানিয়ে মাঠে নেমেছেন। প্রস্তাবিত কাঠামোটিকে বৈষম্যমূলক উল্লেখ করে তারা সিলেকশন গ্রেড, অধ্যাপকদের বেতন-ভাতা সিনিয়র সচিবের সমতুল্য, অধ্যাপকদের বেতন-ভাতা পদায়িত সচিবের সমতুল্য এবং সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষকদের বেতন কাঠামো ক্রমানুসারে করার দাবি জানাচ্ছেন। শিক্ষকরা বলছেন, শিক্ষামন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করে ক্ষোভের কথা তারা জানিয়েছিলেন; দাবি জানানো হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনেও; সাড়া মেলেনি। প্রস্তাবিত বেতন কাঠামো সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বেতন ও মর্যাদা দুই-ই দু ধাপ নামিয়ে দেবে-শিক্ষকদের এ দাবি সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলকে অবশ্যই খতিয়ে দেখতে হবে। একটি কাঠামো তখনই টেকসই হয়, যখন সংশ্লিষ্ট সবার স্বার্থ সুরক্ষিত থাকে। হিতাহিত না ভেবে তড়িঘড়ি কিছু করা হলে কোনো সিদ্ধান্তই আখেরে সুফল দেয় না; দুর্বল বা অবাস্তব কাঠামো বেশিদিন টেকেও না।

আমরা আশা করবো, সরকার ও শিক্ষকমহল দ্রুত সমঝোতায় পৌঁছবে। শিক্ষা কিংবা শিক্ষার্থীরা কোনো মহলের ভুল সিদ্ধান্তের শিকার হোক-এটা আমরা কিছুতেই প্রত্যাশা করি না।