মাথাভাঙ্গা মনিটর: চলে গেলেন ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির স্ত্রী শুভ্রা মুখার্জি (৭৫)। গতকাল মঙ্গলবার ভারতীয় সময় সকাল ১০.৫১ মিনিটে দিল্লির সেনা হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন তিনি। ৭ আগস্ট হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে সেনা হাসপাতালে ভর্তি হন। শুভ্রা দেবীর মৃত্যুতে ভারতজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। জন্মসূত্রে বাংলাদেশি শুভ্রা দেবীর মৃত্যুতে তার জন্মভিটে নড়াইল এবং শ্বশুরবাড়ি পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমের মিরিটি গ্রামে গভীর শোকের ছায়া নেমে আসে। শোকাবিষ্ট হয়ে পড়েন শ্রভ্রা দেবী যেখানে দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করেছেন সেই পশ্চিম মেদিনীপুরের বীরসিংহ হাইস্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও। আজ শেষকৃত্য হবে নয়া দিল্লিতে। সেখানে থাকছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের পরিবারের সাথে প্রণব মুখার্জির পাশাপাশি শুভ্রা দেবীরও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিলো। তিনি গভীর স্নেহ করতেন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকেও। বাংলাদেশের নেতা ও বিশিষ্টরা যখনই প্রণববাবুর বাড়িতে গিয়েছিলেন শুভ্রা দেবীর আতিথিয়তা পেয়েছেন। আওয়ামী লীগ ছাড়াও সব রাজনৈতিক দলের নেতাদেরই তিনিও সমান চোখে দেখতেন। বাংলাদেশের সব মানুষকেই প্রয়াত শুভ্রা দেবী একান্ত আপনজন ও পরিবারের সদস্য মনে করতেন। প্রণববাবু ছাড়াও নিজের নাচের টিম নিয়ে একাধিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ঢাকায় এসেছেন তিনি।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুর দেড়টা নাগাদ দিল্লির সেনা হাসপাতাল থেকে শুভ্রা দেবীর দেহ নিয়ে আসা হয় রাষ্ট্রপতি ভবনে। সন্ধ্যায় তার দেহ দিল্লির তালকাটরা রোডের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার কথা। প্রণব মুখার্জি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থাকাকালীন এ বাড়িতেই দীর্ঘদিন ছিলেন। রাষ্ট্রপতি ভবন সূত্রে জানা গেছে, শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের জন্য এ বাড়িতেই রাখা হবে শুভ্রা দেবীর দেহ।
মৃত্যুতে গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ, জাতীয় পার্টির (জাফর) কাজী জাফর আহমদসহ বিভিন্ন দলের প্রধানরা। শোক জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি, কংগ্রেসপ্রধান সোনিয়া গান্ধীসহ অন্য রাজনৈতিক দলের নেতারাও। শুভ্রাদেবীর শেষকৃত্যে যোগ দিতে মঙ্গলবার রাতেই দিল্লি পৌঁছান পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
দেশের ফার্স্ট লেডি হিসেবে নয়, শুভ্রা মুখার্জি রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী ও চিত্রশিল্পী হিসেবেই বেশি পরিচিত ছিলেন। দেশ-বিদেশে তার পরিচালনায় রবীন্দ্র গীতিনাট্য বিশেষ সমাদর পেয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বিশেষ ঘনিষ্ঠ ছিলেন শুভ্রা দেবী। ইন্দিরার সাথে তার আলাপ-ঘনিষ্ঠতার কথা নিয়ে চোখের আলোয় নামে একটি বইও লিখেছিলেন।
১৯৪০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের যশোরের নড়াইলে জন্ম হয় শুভ্রা দেবীর। গত বছরই জামাই প্রণবকে সাথে নিয়ে নড়াইলে নিজের জন্মভিটায় এসেছিলেন শুভ্রা দেবী। দেখা করেছিলেন শেখ হাসিনার সাথেও। বাংলাদেশের সাথে শিকড়ের বন্ধন ছিলো আজীবন। তার অসুস্থতার খবর শুনে গত সপ্তাহেই ফোন করে তার খোঁজ নিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। প্রণব মুখার্জির সাথে শুভ্রার বিয়ে হয় ১৯৫৭ সালের ১৩ জুলাই। স্নাতক হওয়ার পর সংসারের কাজেই ব্যস্ত হয়ে পড়েন প্রণব বাবুর ঘরনি। জন্ম দেন দু পুত্র অভিজিৎ, ইন্দ্রজিৎ ও কন্যা শর্মিষ্ঠার। রন্ধন পটিয়সী হিসেবেও সুখ্যাতি ছিলো তার। তার হাতের রান্নায় মুগ্ধ হয়েছেন দেশের তাবড় নেতারা।
প্রধানমন্ত্রীর শোক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুভ্রা মুখার্জির মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে বলেছেন, তার প্রয়াণে বাংলাদেশ একজন মহান বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষীকে হারালো। প্রধানমন্ত্রী ভারতের রাষ্ট্রপতির কাছে প্রেরিত এক বার্তায় বলেন, আমরা গর্বিত যে তিনি বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছেন এবং বাংলাদেশের জন্য তার ভালোবাসা ও মমতার কথা প্রীতির সাথে স্মরণ করছি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার ও জনগণ এবং আমার নিজের পক্ষ থেকে আপনাকে এবং আপনার পরিবারকে গভীর শোক জ্ঞাপন করছি।
চলে গেলেন নড়াইলের কন্যা প্রণবপত্নী শুভ্রা মুখার্জি
