বিচার বা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা অপরাধীর মনে ভীতির জন্ম দেয়

 

কুষ্টিয়া শহরে জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচিতে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগ কর্মী ও বহিষ্কৃত এক আওয়ামী লীগ নেতার ক্যাডারদের মধ্যে সংঘর্ষে একজন নিহত ও দুজন আহত হওয়ার ঘটনা অনভিপ্রেত। উদ্বেগের বিষয় হলো- সংঘর্ষ চলাকালে এক যুবককে পুলিশের সামনেই প্রকাশ্যে শটগান হাতে নিয়ে গুলি ছুঁড়তে দেখা গেছে। তার মানে শাসক দলের লোক হওয়ার সুবাদে তারা দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও ধর্তব্যের মধ্যে আনছে না। এটা ভালো লক্ষণ নয়। অবশ্য কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার ইতোমধ্যে বলে দিয়েছেন, হত্যাকারী যেই হোক তাকে ছাড় দেয়া হবে না। খুনিকে খুব দ্রুত আটক করা হবে ইত্যাদি। কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে আমরা হরহামেশাই এ ধরনের বক্তব্য-বিবৃতি শুনে আসছি। ইদানীং তাদের সাফাই তালিকায় ভিডিও ফুটেজ নামে নতুন একটি শব্দবন্ধ যোগ হয়েছে। অপরাধমূলক কোনো ঘটনা ঘটলেই পুলিশ ভিডিও ফুটেজ অবলোকন করে দোষীদের চিহ্নিত ও গ্রেফতারের আশ্বাসবাণী শোনায়। কুষ্টিয়ার ঘটনায় জড়িত এক বন্দুকধারীকে শনাক্ত করতে কষ্ট করে ভিডিও ফুটেজ ঘাঁটাঘাঁটি করার প্রয়োজন নেই। ওই বন্দুকধারীর ছবি দেশের জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে। পুলিশ যদি আন্তরিকতা ও শতভাগ সক্ষমতা নিয়ে অপরাধীকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে চায়, তাহলে স্বল্প সময়ের মধ্যেই তা সম্ভব। এ কোনো বাহানার আশ্রয় নেয়া নয়, নয় কোনো সময়ক্ষেপণ- প্রাপ্ত প্রমাণ কাজে লাগিয়েই আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপরাধীকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হোক। দুঃখজনক হলো- দেশে খুন, ধর্ষণসহ গুরুতর অপরাধ বৃদ্ধি পেলেও তা নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো কঠোর পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। উপরন্তু সরকারি দলের লোকেরাই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে অধিকতর ভূমিকা রাখছে।

উল্লেখ্য, এর আগে রাজধানীর মধ্য বাড্ডায় জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানের জন্য তোলা বিপুল অঙ্কের চাঁদার টাকা ভাগাভাগি এবং অনুষ্ঠানের কর্তৃত্ব নিয়ে শাসক দল আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা বিরোধে জড়ালে তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। অনুরূপ এক ঘটনায় কারওয়ান বাজারে প্রতিপক্ষের দায়ের কোপে দুজন আহত হয়। সন্দেহ নেই- এ জাতীয় ঘটনায় শোক দিবসের ভাবগাম্ভীর্য ও পবিত্রতা নষ্ট হয়েছে। ভবিষ্যতে যাতে এর পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সে ব্যাপারে সরকারকে যত্নবান হওয়া উচিত।

বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধির অন্তত চারটি সুস্পষ্ট কারণ রয়েছে। এগুলো হলো- ক্রাইম ম্যাপিং হটস্পট চিহ্নিত না করা, খুনি বা অপরাধীকে ভয় দেখানোয় ব্যর্থতা, দুর্বল মামলা ও তদন্ত রিপোর্ট এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির অভাব। এর সাথে যোগ হয়েছে রাজনৈতিক প্রভাবে শাস্তি এড়িয়ে যাওয়ার সংস্কৃতি। এর ফলে একদিকে যেমন অপরাধীদের গায়ে হাত দেয়া যাচ্ছে না, অন্যদিকে অপরাধী গ্রেফতার হলেও তাদের আটকে রাখা যাচ্ছে না। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, কোনো সমাজ সুস্থ ও স্বাভাবিক নিয়মে না চললে নানা ধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। বিচার বা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা অপরাধীর মনে ভীতির জন্ম দেয়। এক্ষেত্রে শাস্তি নিবৃত্তমূলক ভূমিকা পালন করে। কাজেই অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পর দ্রুত অপরাধীকে শাস্তির আওতায় আনা জরুরি।