ওষুধ কোম্পানির শীর্ষ ছয় কর্মকর্তার ১০ বছর জেল

ভেজাল প্যারাসিটামল সেবনে শিশু মৃত্যুর ঘটনায় মামলার রায়

 

স্টাফ রিপোর্টার: ভেজাল প্যারাসিটামল সিরাপ পানে শিশু মৃত্যুর ঘটনায় তেইশ বছর আগে দায়ের করা দু মামলায় ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বিসিআই ফার্মার ছয় কর্মকর্তার প্রত্যেককে দশ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। দণ্ডের অতিরিক্ত প্রত্যেক মামলায় প্রত্যেকের দু লাখ টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়। গতকাল সোমবার ঢাকার ড্রাগ আদালতের বিচারক এম আতোয়ার রহমান এ রায় ঘোষণা করেন।

রায়ে বলা হয়, এ মামলা দুটির অভিযোগ এবং আসামিরা এক। দু মামলায় সাজার পরিমাণও একই। বিচার এক সাথে হলেও ঘটনাস্থল ভিন্ন। জেলকোডের বিধান অনুসারে পর্যায়ক্রমে মামলার সাজা কার্যকর হবে। দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- কোম্পানির নির্বাহী পরিচালক এএসএম বদরুদ্দোজা, পরিচালক শাজাহান সরকার, নূরুন্নাহার বেগম, শামসুল হক, ব্যবস্থাপক (মান নিয়ন্ত্রক) আয়েশা খাতুন ও ব্যবস্থাপক (উত্পাদন) এম তাজুল হক।

মামলায় জামিনে থাকা একমাত্র আসামি কোম্পানির পরিচালক শাজাহান সরকার আদালতে উপস্থিত ছিলেন। অন্যরা শুরু থেকেই পলাতক। রায়ের পর শাজাহানের জামিন বাতিল করে সাজার পরোয়ানাসহ কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়া হয়। পলাতক আসামিরা গ্রেফতার অথবা আদালতে আত্মসমর্পণের পর থেকে তাদের সাজা কার্যকর হবে। এদের  বিরুদ্ধে সাজার পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

এ মামলায় অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনায় আসামিদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়ের করা উচিত ছিলো বলে মত দিয়েছেন ঢাকা বারের ফৌজদারি মামলার সিনিয়র আইনজীবী আমিনুল গনি টিটো। তিনি বলেন, এদের তৈরি ওষুধ খেয়ে অগণিত শিশুর মৃত্যু হয়েছে। বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হলে আসামিদের মৃত্যুদণ্ড হতো। আর তাহলেই আসামিদের কৃত অপরাধের যথোচিত শাস্তি হতো। আদালতে আসামির পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান, বশির আহমেদ ও আমিনুর রহমান চৌধুরী মিন্টু।

উল্লেখ্য, ১৯৮০ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে কিডনি অকেজো হয়ে প্রায় ২ হাজার ৭শ শিশুর মৃত্যু ঘটে। ওই সময় বিসিআই, অ্যাডফ্লেমসহ বিভিন্ন কোম্পানির প্যারাসিটামল সিরাপ পরীক্ষা করে ওষুধ প্রশাসন পরিদপ্তর। পরীক্ষায় বিসিআই, অ্যাডফ্লেমসহ ৫টি কোম্পানির প্যারাসিটামল সিরাপে ক্ষতিকারক ডাই-ইথিলিন গ্লাইকল ধরা পড়ে, যা সেবনে শিশুর কিডনি অকেজো হয়ে শিশু মৃত্যুর কারণ বলে উল্লেখ করা হয়। বিসিআই কোম্পানির দু ব্যাচের প্যারাসিটন (প্যারাসিটামল) সিরাপ পরীক্ষা করে তাতে ক্ষতিকারক ডাই-ইথিলিন গ্লাইকল ধরা পড়ে।

ওই অভিযোগে ১৯৯২ সালের ১৯ ডিসেম্বর পৃথক ২টি মামলা করেন ওষুধ প্রশাসন পরিদপ্তরের তত্কালীন তত্ত্বাবধায়ক আবুল খায়ের চৌধুরী। ওষুধ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ ১৯৮২-এর ১৬(সি)/১৭ ধারায় ভেজাল ওষুধ উত্পাদনের অভিযোগে মামলাটি দায়ের করা হয়। মামলাটিতে ১৯৯৪ সালের ২ আগস্ট আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। পরে আসামিদের এক রিভিশন আবেদনে উচ্চ আদালত মামলার কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ দেয়। সেই স্থগিতাদেশ ২০১১ সালে শেষ হবার পর গত বছর ৭ আগস্ট বিসিআইয়ের মামলার শুনানি আবার শুরু হয়। মামলাটির বিচারকালে ২০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।

উল্লেখ্য, অ্যাডফ্লেম ফার্মাসিটিক্যালের ভেজাল প্যারাসিটামল উত্পাদনের মামলায় ২০১৪ সালের ২২ জুলাই প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ডা. হেলেন পাশাসহ ৩ জনকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেন একই আদালত।