ব্যাংক ঋণের সুদের হার সিঙ্গল ডিজিটে নামিয়ে আনা হোক

ব্যাংক ঋণের উচ্চহারের সুদ শুধু দেশি উদ্যোক্তাই নয়, প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদেরও ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে নিরুৎসাহিত করছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের কোনো সুবিধা কাজে লাগাতে পারছেন না। বলা বাহুল্য, তাদের অনেকেরই দেশে একক বা যৌথ উদ্যোগে ব্যবসায়িক প্রকল্প গড়ে তোলার প্রচুর আগ্রহ রয়েছে। ইতোমধ্যে অবশ্য দুবাইস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস বাংলাদেশ ও দুবাইয়ের মধ্যে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সম্প্রসারণে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমানোর একটি সুপারিশ পাঠিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে। শুধু দুবাইয়ের বাংলাদেশ দূতাবাস নয়, ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমানোর প্রস্তাব রয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিরও। সুদের হার সিঙ্গল ডিজিটে নামিয়ে আনার জন্য সংসদীয় কমিটি তিন মাসের সময়ও বেধে দিয়েছিলো। কিন্তু তাদের প্রস্তাব এখনও ঝুলে আছে। বারবার শুধু বলা হচ্ছে, ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ এতো বেশি যে, সুদের হার কমানো যাচ্ছে না। এটা ঠিক, ব্যাংকিং খাতে ঋণ নিয়ে ফেরত না দেয়ার প্রবণতা রয়েছে ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাদের মধ্যে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, খেলাপিদের কারণে যারা খেলাপি নন অথবা যারা নতুন উদ্যোক্তা, তারা যৌক্তিক ব্যাংকিং সুবিধা পাবেন না কেন? ব্যাংক ঋণের সুদের হার সিঙ্গল ডিজিটে নামিয়ে আনা হোক, এটি শিল্প উদ্যোক্তাদের দীর্ঘদিনের দাবি। কিন্তু সরকারের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে বরাবর গড়িমসি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সরকারি ব্যাংকের ঋণের সুদ কিছুটা কমানো হয়েছে বটে, তবে ব্যবসায়ীরা এর তেমন সুফল পাচ্ছেন না। কারণ তাদের ঋণের সিংহভাগই বেসরকারি ব্যাংকের। ফলে উদ্যোক্তারা আগ্রহী হচ্ছেন না নতুন বিনিয়োগে। বলা যায়, প্রধানত ব্যাংক ঋণের সুদের উচ্চহার উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে। শুধু বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হওয়া নয়, দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে ঋণের উচ্চ সুদের প্রভাব পড়ছে নানাভাবে। ঋণে মাত্রাতিরিক্ত সুদের কারণে পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এতে বাড়ছে দ্রব্যমূল্য। এর প্রভাব পড়ছে সাধারণ মানুষের ওপর।

অন্যদিকে এর সুযোগ নিয়ে কম দামের নিম্নমানের পণ্য আমদানি করে দেশের বাজারে তা ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। ফলে মানসম্পন্ন দেশীয় পণ্য মার খাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমিয়ে আনার জন্য সংশ্লিষ্ট সংসদীয় কমিটির সুপারিশ উদ্যোক্তাদের আশাবাদী করেছিলো। কিন্তু বাস্তবায়নের দীর্ঘসূত্রতায় সে আশা দুরাশায় পরিণত হতে চলেছে। দেশে দীর্ঘদিন ধরে বিনিয়োগ পরিস্থিতি ভালো নয়। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির বিকল্প নেই। অনেক দেশেই বিনিয়োগ উৎসাহিত করার জন্য উদ্যোক্তাদের নানা রকম সুযোগ-সুবিধা এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে ছাড় দেয়া হয়। অথচ আমাদের দেশে করা হচ্ছে এর উল্টোটি। এটি কাম্য নয়। ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের পথে বিদ্যমান সব বাধা অপসারণ করতে হবে। উদ্যোক্তাদের আস্থা অর্জনের জন্য এটি জরুরি। ব্যাংক ঋণের সুদের হার সিঙ্গল ডিজিটে নামিয়ে আনতে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির ঝুলে থাকা সুপারিশটি দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হবে, এটাই কাম্য।