ফলোআপ : কুষ্টিয়ায় গুলিবর্ষণকারী যুবক বরখাস্ত হওয়া পুলিশ কর্মকর্তা আনিস

ওসিকে প্রত্যাহার : আটক তিন : অতিরিক্ত ডিআইজির ঘটনস্থল পরিদর্শন

 

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: জাতীয় শোকদিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দেয়া শেষে ক্ষমতাসীন দলের দুগ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ ও হতাহতের ঘটনায় পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে আটক করেছে। তবে পুলিশ আটককৃতদের নাম পরিচয় জানাতে রাজি হয়নি। এ ঘটনায় গতকাল রোববার দুপুরে কুষ্টিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল খালেককে থানা থেকে প্রত্যাহার করে খুলনা রেঞ্জ অফিসে নেয়া হয়েছে।

এদিকে গত শনিবার সংর্ঘষের সময় কালো পানজাবি ও সাদা পাজামা পরিহিত এক যুবক ফিল্মিস্টাইলে পুলিশের সামনে প্রকাশ্যে শর্টগান নিয়ে গুলি চালাচ্ছিলো এমন ভিডিও চিত্র বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার হলে শুধু কুষ্টিয়ায় নয় দেশব্যাপি আলোচনার সৃষ্টি হয়। গতকাল রোববার এ নিয়ে বিভিন্ন মিডিয়ায় সচিত্র সংবাদ প্রকাশ হলে কুষ্টিয়ায় ব্যাপক হইচই পড়ে যায়। পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনী প্রকাশ্যে গুলিবর্ষণকারী ওই যুবকের পরিচয় নিশ্চিত করতে উঠে পড়ে লাগে। যোগাযোগ করা হলে রোববার জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করে জানানো হয় গুলি বর্ষণকারী ওই যুবকের নাম আনিসুর রহমান আনিস। তিনি একজন সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা। কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ঢাকা-ঝালুপাড়া গ্রামের মৃত মোশাররফ হোসেন মণ্ডলের ছেলে। আনিস বছর দুয়েক আগে ঢাকার কাফরুল থানায় পুলিশের এএসআই হিসেবে কমর্রত থাকাকালীন সময় মাদকদ্রব্যসহ গ্রেফতার হওয়ায় সাসপেন্ড হন। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা চলমান রয়েছে। এরপর থেকে তিনি নিজ এলাকা কুষ্টিয়াতেই অবস্থান করছেন।

জানা গেছে, বরখাস্ত হওয়া পুলিশ কর্মকর্তা আনিস কুষ্টিয়া শহর আওয়ামী লীগের বহিস্কৃত সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোমিনুর রহমান মোমিজের সম্পর্কে বেয়াই হন। পুলিশসূত্র বলছে, শনিবার কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়কের মজমপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যে শর্টগান হাতে নিয়ে গুলি ছুঁড়েছে সেটি আর কারোর অস্ত্র নয় অস্ত্রটি কুষ্টিয়া শহর আওয়ামী লীগের বহিস্কৃত সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোমিনুর রহমান মোমিজের।

এদিকে রোববার হত্যার ঘটনায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন খুলনা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি একরাম উল হাবিব। তিনি এ ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য শুনতে চাইলেও এ বিষয়ে কেউ মুখ খুলতে রাজি হননি। এ সময় সাংবাদিকরা ঘটনার সময় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুললে তিনি বলেন, পুলিশের হাতে ক্লু রয়েছে। আশা করা হচ্ছে অতি দ্রুত ঘটনার রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হবে। পুলিশের কোনো গাফলতি ছিলো কি-না এ বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

এরপর কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল খালেককে প্রত্যাহার করা হয়। কুষ্টিয়া জেলা পুলিশ সুপার প্রলয় চিসিম এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ঘটনার সময় সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হওয়ায় তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। রোববার কুষ্টিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল খালেককে থানা থেকে প্রত্যাহার করে খুলনা রেঞ্জ অফিসে নেয়া হয়েছে।

এদিকে গতকাল রোববার ভোরে কুষ্টিয়া জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ সাজ্জাদ হোসেন সবুজের লাইসেন্সধারী শর্টগানটি জব্দ করেছে পুলিশ। কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সোহেল রেজা বিষয়টি স্বীকার করেছেন। জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে রোববার জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান লাবু, সাধারণ সম্পাদক শেখ সাজ্জাদ হোসেন সবুজ, কুষ্টিয়া শহর আ.লীগের বহিস্কৃত সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোমিনুর রহমান মোমিজ ও তার সহযোগী মোস্তাফিজুর রহমান মধুর অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। প্রসঙ্গত আ.লীগের দু মেয়াদে কুষ্টিয়া জেলায় রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রায় অর্ধ শতাধিক ব্যক্তিকে অস্ত্রের লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে। লাইসেন্স প্রাপ্তদের মধ্যে পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ও চরমপন্থি রয়েছে বলে একাধিক সূত্র দাবি করেছে।

১৫ আগস্ট শোকদিবসের কর্মসূচি চলাকালে কুষ্টিয়া শহরের মজমপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আ.লীগের দুপক্ষের সংঘর্ষে সবুজ নামে এক যুবক নিহতসহ অন্তত ৫ জন আহত হন।