স্টাফ রিপোর্টার: ঢাকার বাড্ডায় সরকারি দলের দু নেতাসহ তিন খুনের ঘটনাটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও কোরবানির পশুর হাটের ইজারা নিয়ে বিরোধে হতে পারে বলে নিহতদের পরিবার দাবি করেছেন।
ঢামেক মর্গে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাংসদ পঙ্কজ দেবনাথ দাবি করেছেন, রাজনৈতিক কোন্দলের কোনো ঘটনা নেই। জাতীয় শোক দিবসের এক দিন আগেই পরিকল্পিতভাবে হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে বলে জানান তিনি। বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে বাড্ডা আদর্শনগর পানির পাম্পের কাছে সরকারসমর্থক কয়েকজন আড্ডা দেয়ার সময় তাদের ওপর গুলি ছোড়া হয়।
ঘটনাস্থল থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় চারজনকে হাসপাতালে নেয়ার পরপরই ঢাকার ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্মসম্পাদক শামসু মোল্লা (৫৩) উত্তর বাড্ডার নির্মাণাধীন বেসরকারি হাসপাতাল এইচএএফ’র তত্ত্বাবধায়ক ফিরোজ আহমেদ মানিকের (৪৫) মৃত্যু হয়। আর গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার সকালে মারা যান আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের সাহিত্য বিষয়ক সহসম্পাদক মাহবুবুর রহমান গামা (৪০)। আর এ হামলার মূল লক্ষ্য ছিলেন গামা। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহত গামার সহযোগী তাহসীর সাংবাদিকদের বলেছেন।
নিহত গামার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নেয়া হয়। সেখানে গামার মামাতো ভাই আমিনুর রহমান রিপন বলেন, গামা স্কুলজীবন থেকেই রাজনীতি করতেন। রাজনীতিতে সে খুব দ্রুত ওপরে উঠছিলো। এ কারণে পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে। গত বছর মেরুল বাড্ডায় কোরবানির পশুর হাটের ইজারা পেয়েছিলেন গামা। এবারও পাওয়ার চেষ্টায় ছিলেন। এ নিয়ে বিরোধ থেকেও তাকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে বলে তিনি সন্দেহ করছেন।
নিহত ফিরোজ আহমেদ মানিক সরাসরি রাজনীতিতে জড়িত না করলেও অন্যদের সাথে তার বন্ধুত্ব ছিলো বলে পরিবারে সদস্যরা জানিয়েছেন। মানিক রাজনীতি করতেন না, তবে গামাদের সাথে তার বন্ধুত্ব ছিলো। অফিস থেকে ফেরার পথে তাদের সাথে দেখা করতে গিয়ে মারা গেলেন।
আর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতা শামসু মোল্লার চাচা নুরুজ্জামান ঢামেক মর্গে সাংবাদিকদের বলেন, ভাতিজা শামসুকে কেন খুন করা হলো, তা তাদের কাছে স্পষ্ট নয়। শামসু ২০-২৫ বছর মালয়েশিয়ায় ছিলো। দু বছর আগে দেশে আসে। তাকে কেন খুন করা হলো তার কোন কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না তিনি। যুবলীগের স্থানীয় নেতা আব্দুস সালাম ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তিনি আহত অবস্থায় ঢামেক হাসপাতালে সাংবাদিক ও পুলিশের কাছে জানান, তারা ১৫ অগাস্ট জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করছিলেন। আর তখনই তাদের ওপর অতর্কিত গুলি ছোড়া হয়।
গামার সহযোগী প্রত্যক্ষদর্শী তাহসীর রহমান জানান, তিন থেকে চারজন হেঁটে এসে তাদের ওপর গুলি চালায়। এরপর হোসেন মার্কেটের দিক দিয়ে দৌড়িয়ে চলে যায়। হামলাকারীদের দুজনের হাতে অস্ত্র ছিলো। তিনি আরো বলেন, হামলাকারীদের টার্গেট গামা একা ছিলো। আর প্রথম গুলিটি গামাকে লক্ষ্য করেই করা হয়। এরপর তারা এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে পালিয়ে যায়।
স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাংসদ পঙ্কজ দেবনাথ সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে বলেন, কোরবানির এখনও দেড় মাস বাকি আছে। আর সিটি করপোরশন পশুর হাট নিয়ে এখনো কোনো উদ্যোগ নেয়নি। নিহত গামা ঝুট ব্যবসার সাথেও জড়িত ছিলো না। তিনি আরো বলেন, ১৫ আগস্টকে কারা বেছে নেয়? এটা আপনাদের বুঝতে হবে বলে জানান তিনি।
অপরদিকে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি বলে জানিয়েছেন বাড্ডা থানার ওসি এম এ জলিল। তিনি বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের গ্রেফতারের জন্য এলাকায় অভিযান চালানো হচ্ছে। গতবার ঈদে পশুর হাটের ইজারা গামা নিয়েছিলো। ওই বিষয়টি নিয়েও তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
নিহত গামা চার ভাইবোনের মধ্যে সবার বড় ছিলেন। তার স্ত্রীর নাম লিনডা। ছয় বছর বয়সী একটি ছেলে রয়েছে তাদের। ফরিদপুর এলাকায় তাদের গ্রামের বাড়ি হলন ছোট সময় থেকেই তারা মধ্যবাড্ডায় স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন বলে তার আত্মীয় রিপন জানিয়েছেন।