৬ বছরে সর্বনিম্ন : আরো কমবে : বিশ্বব্যাংক
স্টাফ রিপোর্টার: বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমছেই। গতকাল শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অপরিশোধিত (ক্রুড) জ্বালানি তেল বিক্রি হয়েছে ৪১ দশমিক ৩৫ মার্কিন ডলারে, যা গত প্রায় সাড়ে ৬ বছরে সর্বনিম্ন। তেল উত্তোলনকারী দেশগুলো উত্পাদন না কমিয়ে বরং বাড়াচ্ছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের পরমাণু চুক্তি কার্যকর হলে ইরানের তেল উত্তোলন বাড়বে। ফলে স্বভাবতই আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের সরবরাহ বাড়বে। এ পরিস্থিতিতে আগামী বছর নাগাদ তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি আরো ১০ ডলার কমতে পারে ইতোমধ্যে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। অবশ্য তেলের দাম কমার লক্ষণের এমন খবরেও বাংলাদেশের প্রান্তিক পর্যায়ের ক্রেতাদের জন্য দাম কমার পূর্বাভাস নেই।
প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি তেলের মজুদ বেড়ে যাওয়া, আন্তর্জাতিক সরবরাহ বাড়ার শঙ্কা এবং এশিয়া বিশেষত চীনের অর্থনীতির গতি মন্থরতার খবরে জ্বালানি তেলের দাম কমেছে। যুক্তরাষ্ট্রে তেলের চাহিদা ৩ শতাংশ কমেছে। গতকাল দেশটির বাজারে ক্রুড তেলের দাম ৪১ দশমিক ৩৫ ডলারে নামলেও পরে তা সামান্য বেড়েছে। অন্যদিকে ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম ছিল ৪৯ দশমিক ১২ ডলারে।
গোল্ডম্যান স্যাক্স জানিয়েছে, চীনের মুদ্রার দরপতনে সবধরনের পণ্যবাজারে এর প্রভাব পড়েছে, যা আন্তর্জাতিক সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতেও কিছুটা প্রভাব ফেলেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, তেলের উত্পাদন না কমা পর্যন্ত দাম কমতেই থাকবে। অবশ্য চীনের অর্থনীতির কিছুটা গতিমন্থরতা সত্ত্বেও দেশটি ভোক্তার স্বাভাবিক ব্যয় অব্যাহত রাখতে চাইছে। এ জন্য অপরিশোধিত তেলের আমদানি আগের মতোই রয়েছে।
এদিকে বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী বছর নাগাদ তেলের দাম ব্যারেল প্রতি আরো ১০ ডলার কমতে পারে। ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের প্রভাবে তেলের বাজারে এ দরপতন ঘটবে বলে মনে করা হচ্ছে। ইরানের পরমাণু কর্মসূচি সীমিত রাখার বিনিময়ে সে দেশের উপর থেকে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ায় তেলের বাজারে এর প্রভাব পড়তে পারে। মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা সম্পর্কে বিশ্বব্যাংকের ত্রৈমাসিক পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ইরানের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের এ চুক্তি কার্যকর হলে তেলের বাজারে সরবরাহ উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। ইরানের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের অর্থনৈতিক প্রভাব শিরোনামের এ পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, নিষেধাজ্ঞা না থাকায় ইরানের তেল রফতানির সক্ষমতা বাড়বে। তেল আমদানিকারক দেশগুলো এর ফলে লাভবান হবে।
আগামী বছর নাগাদ বিশ্বের বাজারে তেলের জোগান দৈনিক গড়ে ১০ লক্ষ ব্যারেল বাড়বে। এর আগে ২০১২ সালে নিষেধাজ্ঞা জোরদার করায় ইরান থেকে তেল রপ্তানি কমে গিয়েছিলো। নতুন চুক্তি কার্যকর হলেও নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে অন্যান্য দেশের পক্ষেও ইরানের সাথে বাণিজ্যিক কার্যক্রম জোরদার করা সহজ হবে। এরই মধ্যে অনেক দেশই ইরানের তেল ও জ্বালানি খাতে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে বলে একাধিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খবর এসেছে। মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের অর্থনীতিবিদ লিলি মোত্তাকি বলেন, পরমাণু চুক্তির রূপরেখা নিয়ে চলতি বছরের এপ্রিলে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের সমঝোতার পর থেকে ইরানে, বিশেষত তেল ও গ্যাস খাতে বিনিয়োগের ব্যাপারে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর বাড়তি আগ্রহ দেখা গেছে। নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর এমন আগ্রহ আরও বাড়বে এবং ইরানের তেলশিল্প পুঁজি ও প্রযুক্তিতে এক ধাপ এগিয়ে যাবে।