সরকারি হাসপাতালের করুণ দশা কাম্য নয়

এক যুগ আগে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালটি ১শ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। অবকাঠামো নির্মাণ শুরু হলেও লোকবল দেয়া হয়নি। কবে দেয়া হবে? তাও অনিশ্চয়তার মধ্যে। একটি জেলা সদরের আধুনিক নামধারী হাসপাতালের লোকবল সঙ্কট কতোটা ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে ফেলেছে তা ভুক্তভোগীরাই জানেন। উপচেপড়া ভিড়। রোগী ও রোগীর লোকজনের ভিড়ে নিঃশ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম। এর মাঝে যখন টানা ১০/১২ ঘণ্টা বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ থাকে- তাও আবার বিদায় শ্রাবণের ভ্যাপসা গরমের মাঝে তখন পরিস্থিতি কতোটা ভয়াবহ তা বোধকরি বিবেকবানদের উপলব্ধি অসম্ভব নয়। ফলে বিবেকের তাগিদেই এদিকে বিশেষ নজর প্রয়োজন।

গতকাল দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পায়ের যন্ত্রণা নিয়ে হাসপাতালের ফিমেল মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রোগী হৃদরোগে মারা গেছেন। যে ওয়ার্ডে ১৬টি শয্যা, সে ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীর সংখ্যা অর্ধশতাধিক। একেতো রোগীর চাপ, তার ওপর রোগীর লোকজনের ভিড়। এর মাঝে যখন বিদ্যুত বিপর্যয় তখন পায়ে যন্ত্রণা নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাবে তা আর অসম্ভব কি? ভাগ্যিস মৃত্যুর সংখ্যা বাড়েনি। শুধু ফিমেল মেডিসিন ওয়ার্ডেই নয়, মেল মেডিসিন ওয়ার্ডেরও অভিন্ন চিত্র। আর শিশু ও সার্জারি বিভাগে তো রোগীর চাপ রয়েছেই। এতো রোগীর চাপ- যেখানে রাখতে হচ্ছে ঠাসাঠাসি করে, সেখানে স্বল্প লোকবলে রোগীর সুচিকিৎসা নিশ্চিত হবে কীভাবে? চুয়াডাঙ্গা সদর আধুনিক হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা যে ব্যাহত হচ্ছে তা নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না।

চুয়াডাঙ্গা সদর আধুনিক হাসপাতালটি জনসংখ্যা অনুপাতে বহু আগেই পূর্ণাঙ্গ ১শ শয্যা করে এতোদিনে আড়াইশ শয্যাই শুধু নয়, পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উন্নীত করা দরকার ছিলো। উন্নীতকরণের প্রতিশ্রুতি আছে, আছে উন্নীতকরণের ধারাও। এ ধারার গতি এতোটাই স্লোথ যে, দুর্ভোগ নিরসনের শিগগিরই সম্ভাবনা নেই। আশা করাও যেন অবান্তর। কেন? কারণ আমলাতন্ত্র জটিলতা। চুয়াডাঙ্গা সদর আধুনিক হাসপাতালটি ৫১ শয্যা থেকে ১শ শয্যায় উন্নীত করার পর লোকবল পাওয়ার জন্য যে আবেদন তা দিনের পর দিন লাল ফিতেয় বন্দী। লাল ফিতে খুলতে রাজনৈতিক বিশেষ তদবির করতে গেলে অধিকাংশ সময়ই নতুন নতুন সমস্যা মেলে ধরে ফাইলে নেয়া হয় নতুন নতুন আবেদন।

সূত্র জানিয়েছে, চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য জাতীয় সংসদের হুইপ বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন সদর হাসপাতালে প্রয়োজনীয় লোকবল পাওয়াসহ যাবতীয় সঙ্কট দূর করাতে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।

অবাক হলেও সত্য যে, চুয়াডাঙ্গা সদর আধুনিক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে মেডিকেল অফিসারের পদ নেই। হাসপাতালের মেডিকেল অফিসারদের দিয়ে জরুরি বিভাগের দায়িত্ব পালন করানো হয়। এতে বহির্বিভাগের চিকিৎসা সেবাদানও ব্যাহত হয়। হাসপাতালটির সকল সঙ্কট কাটিয়ে চিকিৎসাসেবার মান বৃদ্ধির বিষয়টি নিশ্চিত করা খুবই জরুরি। নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহের বিষয়টিও মানবিক তাগিদেই গুরুত্ব বহন করে। কোনো অজুহাত নয়, সরকারি স্বাস্থ্য সেবাদান কেন্দ্রগুলোতে চাহিদা মতো লোকবল, ওষুধপথ্য দিতে হবে। গড়তে হবে অবকাঠামোও। কেননা, স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া দয়া নয়, সকলের সাংবিধানিক অধিকার।

Leave a comment