ঘুষের টাকাসহ প্রকৌশলী মাহমুদ আলমকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ

চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিসে দুর্নীতি দমন কমিশনের ফাঁদদলের হানা

 

Chuadanga pic 12-08-2015

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় ঘুষের টাকাসহ স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের প্রকৌশলী মাহমুদ আলমকে হাতেনাতে আটক করেছে দুনীতি দমন কমিশন দুদুক। গতকাল বুধবার বিকেলে প্রকৌশলীর চুয়াডাঙ্গাস্থ অফিস থেকে দুদক তাকে আটক করে। তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ঘুষের ৪৮ হাজার টাকা। আটক প্রকৌশলী মাহমুদ আলমকে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে দুদক দায়ের করেছে মামলা।

দুদক’র দায়েরকৃত মামলাসূত্রে জানা যায়, ওয়ার্ক অব হেলথ অ্যান্ড ফ্যামিলি প্লানিং ইনফ্রাসট্রাকচার যশোর ডিভিশনের অধীনে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালসহ অন্যান্য হাসপাতালে সংস্কারমূলক কাজের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স এম এম কামাল এন্টারপ্রাইজসহ ১১টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কার্যাদেশপ্রাপ্ত হয়। ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডুর মৃত আইয়ুব হোসেনের ছেলে মো. খাইরুল ইসলাম তাদের পক্ষে সহকারী ঠিকাদার হিসেবে ৪৩ লাখ ১৫ হাজার ৮৫০ কাজ সম্পন্ন করেন। ১১টি প্যাকেজের ৬টি কাজের পারফরমেন্স সিকিউরিটি মানি ফেরতের জন্য দরখাস্তের সময় খাইরুল ইসলামের কাছে ২ লাখ ২০ হাজার টাকার ঘুষ দাবি করেন চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী প্রকৌশলী মাহমুদ আলম। খাইরুল ইসলাম বাধ্য হয়ে গত ১৫ জুলাই ১ লাখ টাকা ঘুষ দেন। ঘুষ নিয়েও পারফরমেন্স সিকিউরিটি মানি ফেরত দেয়ার ব্যবস্থা অর্থাৎ মেমো নম্বর প্রদান না করে গত ৭ আগস্ট আরও ১ লাখ ২০ হাজার টাকা উৎকোচ দাবি করেন প্রকৌশলী মাহমুদ আলম। খাইরুল ইসলাম ১২ আগস্ট দাবিকৃত ১ লাখ ২০ হাজার টাকার মধ্যে আরও ৫০ হাজার টাকা ঘুষ প্রদানে রাজি হন।

এরপর ইঞ্জিনিয়র মাহমুদ আলমের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ দায়ের করা হয়। অভিযোগটি গতকাল বুধবারই ঢাকার অনুমোদনক্রমে সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে লিপিবদ্ধ করা হয়। দুদক ফাঁদ মামলা পরিচালনার জন্য সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেয়। সঙ্গীয় ফাঁদদল দুপুরে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের ঝিনুক মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে গিয়ে খাইরুল ইসলামের সরবরাহকৃত ৫০টি ১ হাজার টাকার নোটের নম্বরগুলোতে অনুস্বাক্ষর করেন মামলার বাদী দুদক কর্মকর্তা মো. আব্দুল গাফফার। পরে নোটগুলো খাইরুল ইসলামের ঠিকাদার খাইরুল ইসলামের হাতে ফেরত দেন। খাইরুল ইসলাম গতকাল বুধবার বিকেলে টাকাগুলো ইঞ্জিনিয়র মাহমুদ আলমকে ঘুষ হিসেবে দেয়ার জন্য স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর চুয়াডাঙ্গা কার্যালয়ে যান। তাক অনুসরণ করে এগুতে থাকে দুদক’র ফাঁদদল। বেলা সোয়া ৪টার দিকে অফিসের গেস্টরুমে ৫০ হাজার টাকা উৎকোচ দিয়ে দুদকের ফাঁদদলকে বিশেষ ইঙ্গিত দিয়ে বুঝিয়ে দেন ঘুষ নিয়েছেন ইঞ্জিনিয়র মাহমুদ আলম। দুদকের ফাঁদদল গেস্টরুমে গিয়ে মাহমুদ আলমকে চ্যালেঞ্জ করলে তিনি ৪৮ হাজার টাকা ঘুষ নেয়ার কথা স্বীকার করেন এবং ওই টাকা তার ডান হাত থেকে বের করে দেন। দুদক টাকা জব্দপূর্বক ইঞ্জিনিয়র মাহমুদ আলমকে আটক করে। দুর্নীতি দমন কমিশন দুদুক সমন্বিত জেলা কার্যালয় দিনাজপুরের উপপরিচালক মো. আব্দুল গাফফার জানান, সাক্ষীদের উপস্থিতিতে ঘুষখোর সহকারী প্রকৌশলী মাহমুদ আলমকে হাতেনাতে আটক করা হয়েছে। তিনি বাদী হয়ে গতকালই সন্ধ্যায় চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় মামলা করেছেন। আটক প্রকৌশলী মাহমুদ আলম (৪৭) কুষ্টিয়া থানাপাড়ার ছয় রাস্তার মোড় এলাকার মৃত আব্দুল বারীর ছেলে। তিনি সরকারি কর্মচারী হয়ে ক্ষমতার অপব্যবহারপূর্বক তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন না করে অপরাধমূলক বিশ্বাস ভঙ্গের কাজ করে নিজে লাভবান হওয়ার জন্য বিভিন্নভাবে ঠিকাদারদের হয়রানি করে আসছিলেন বলে দুদক কর্মকর্তা মো. আব্দুল গাফফার থানার মামলায় উল্লেখ করেছেন। এদিকে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার উপপরিচালক মো. আবু জাফর ইকবাল মাথাভাঙ্গাকে জানান, ইঞ্জিনিয়র মাহমুদ আলমকে আটকের ব্যাপারে তিনি সহযোগিতা করেছেন।