ভ্যাপসা গরমে বিদ্যুত বিপর্যয়ে হাসপাতাল আন্তঃবিভাগে নাভিশ্বাস : রোগীর মৃত্যু

এক ট্রান্সমিটার মেরামত করে বিদ্যুত সরবরাহ করতে দিন পার? ডায়নামাও সারাদিন বিকলের পর বিকেলে হলো সচল

 

কামরুজ্জামান বেল্টু: চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে গতকাল যেমন ছিলো উপচেপড়া রোগীর ভিড়, তেমনই বিদ্যুত বিপর্যয় দেখা দেয়ায় ভর্তি রোগীদের নাভিশ্বাস ওঠে। পায়ে ব্যথা নিয়ে সকালে ভর্তি এক নারী রোগী দুপুরের পর ভ্যাপসা গরমে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে রোগীর লোকজনের মধ্যে ক্ষোভ দানা বাধে। ভ্যাপসা গরমের মাঝে সকাল থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত বিদ্যুত বিপর্যয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভয়াবহ দৃশ্য ফুটে ওঠে।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ফিমেল ওয়ার্ডে গতকাল নতুন করে ভর্তি হয়েছে ২৪ জন নারী রোগী। পূর্বের ভর্তি রোগী ৩২ জন। এ ওয়ার্ডে মোট রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৬ জন। এদেরই একজন দামুড়হুদা বাজারপাড়ার মনোয়ারা খাতুন (৩৫)। তিনি আশরাফ আলীর স্ত্রী। গতকাল সকালে তাকে পায়ে যন্ত্রণা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সারাদিন পায়ে ব্যথারই চিকিৎসা চলে। বিকেল ৩টার দিকে তিনি মারা গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. নাজমুল হোসেন বলেন, রোগী স্ট্রোকে মারা গেছেন। এ কথা শুনে রোগীর লোকজন ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেন, পায়ের যন্ত্রণা নিয়ে ভর্তি করা হলো, মারা গেলো হৃদরোগে? তাছাড়া ভ্যাপসা গরমে রোগীর অবস্থা যখন গুরুতর হয়ে ওঠে তখন বার বার কর্তব্যরত সেবিকাকে জানানোর পরও তেমন সাড়া দেননি। কর্তব্য অবহেলার কারণেই রোগী মারা গেছে। এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে কর্তব্যরত সেবিকারা অবশ্য বলেন, সকাল থেকে হাসপাতালের ফিমেল মেডিসেন ওয়ার্ডে রোগীর উপচেপড়া ভিড়। যেখানে মাত্র ১৬টি শয্যা, সেখানে আজই ভর্তি রোগীর সংখ্যা ২৪ জন। তারপর সকাল থেকে বিদ্যুত বন্ধ। তার পর বর্তমানে প্রশিক্ষণার্থী সেবিকা নেই। ভ্যাপসা গরমের মাঝে একা কর্তব্যপালন করতে গেলে ক’টা রোগী দেখা যায়? তারপরও যে রোগী মারা গেছে সে রোগীর চিকিৎসা যে দেয়া হয়নি তা তো নয়।

হাসপাতালের মেল মেডিসিন ওয়ার্ডেও গতকাল ছিলো উপচেপড়া রোগীর ভিড়। শয্যা তো ভর্তিই, মেঝেসহ বারান্দায় রোগী রাখারও যেন ঠাঁই নেই। যে ওয়ার্ডে ১৬টি শয্যা সেখানে গতকালই ভর্তি হয়েছে ২০ জন রোগী। পূর্ব থেকেই চিকিৎসাধীন ৩৭ জন। মোট ৫৭ জন রোগী সামলাতে এ ওয়ার্ডের সেবিকাকেও হিমশিম খেতে হয়। ভ্যাপসা গরমে ভাগ্যিস এ ওয়ার্ডে গতকাল কোনো পায়ে যন্ত্রণা নেয়া রোগী হৃদরোগে মারা যাননি। তবে হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীকে হাসপাতালে রাখা হয়নি। এদেরই একজন চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের মোমিনপুর ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক জোয়ার্দ্দার। গতকাল দুপুরে তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। ভর্তির পর দ্রুত রেফার করা হয় ঢাকায়। গতকালই তাকে ঢাকায় নেয়া হয়েছে।

মাত্রারিক্ত গরমের কারণেই মানুষ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে? এ প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসক বলেছেন, গরমে হৃদরোগে যেমন আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে তেমনই অন্য রোগেরও প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। তাছাড়া ডায়রিয়া তো আছেই। গরমে সাপে কাটা রোগীও বেড়েছে। গতকাল সাপে কেটে হাসপাতালে ভর্তি দু রোগীর মধ্যে একজন মারা গেছে।

সকাল থেকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে বিদ্যুত বিপর্যয় কেন? এ প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গেলে জানা যায়, গতপরশু শেষ রাতে জোছার মোড়ের অদূরে একটি ট্রান্সমিটার বিকল হয়ে। তা মেরামত করে বিদ্যুত সরবরাহ করতে ঘড়ির কাঁটা ঘুরে দাঁড়ায় বিকেল ৩টা। বিদ্যুত সরবরাহে ত্রুটি হলেও হাসপাতালের নিজস্ব বিদ্যুত ব্যবস্থা তথা ডায়নামা দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার কথা। অথচ গতকাল ডায়নামাও সকাল থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সচল করা সম্ভব হয়নি। বিদ্যুত সরবরাহের দু ঘণ্টা পর ডায়নামা চালু করা হয়। এর আগে সকাল থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের নাভিশ্বাস ওঠে। হাত পাখা দিয়ে বাতাস করেও অনেকেই ঘেমে গোসল পরিস্থিতি পরিলক্ষিত হয়।

চুয়াডাঙ্গায় এতো গরম কেন? আবহওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, গতকাল চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ ৩৪ দমমিক ৪ ও সর্বনিম্ন ২৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। বাতাসে বাষ্পের মাত্রা বেশি থাকায় এবং তীব্র রোদের কারণেই অসহনীয় গরম অনুভূত হয়েছে। মানুষ ঘেমেছে দেদারছে। অতিরিক্ত ঘামের সময় বেশি বেশি পানি ও পানি জাতীয় খাবার খেয়ে সুস্থ থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা।