১৪ কোপে নীলাদ্রির মৃত্যু নিশ্চিত করে ঘাতকরা

স্টাফ রিপোর্টার: নিহত ব্লগার নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়ের শরীরে কোপের জখম পাওয়া গেছে ১৪টি। গলার ও থুতনির আটটি আঘাত গভীর। তাকে একাধিক লোক ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়েছে। গতকাল ময়নাতদন্তের পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান মো. হাবিবুজ্জামান চৌধুরী সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

নিহতের স্ত্রী আশা মনি অজ্ঞাত চারজনকে আসামি করে খিলগাঁও থানায় মামলা করেছেন। তবে পুলিশ গতকাল পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। থানা পুলিশের পাশাপাশি মহানগর গোয়েন্দা ও ৱ্যাব ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। ময়না তদন্ত শেষে লাশ নিয়ে যাওয়া হয়েছে গ্রামের বাড়ি পিরোজপুরে।

ময়নাতদন্ত: আগের ব্লগারদের হত্যার ধরনের সাথে এই হত্যার মিল রয়েছে কি-না সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ময়নাতদন্তের পর ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. হাবিবুজ্জামান চৌধুরী বলেন, এর আগে যেসব ব্লগারকে হত্যা করা হয়েছিলো, এ হত্যাকাণ্ডের ধরনও সেই রকম। সবই একই সূত্রে গাঁথা। হত্যা নিশ্চিত করতেই এতো আঘাত করা হয়েছে। মূলত গলার আঘাতের কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে।

ঢাকায় অভিজিত্ রায়, আহমেদ রাজীব হায়দার ও ওয়াশিকুর রহমান বাবু, সিলেটে অনন্ত বিজয় দাশ হত্যার ক্ষেত্রেও হামলাকারীরা মাথা, গলা ও ঘাড়েই আঘাত করেছিলো বলে ময়নাতদন্তে দেখা যায়। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ গ্রহণ করেন তার কাকা অ্যাডভোকেট বিমল চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের খবর পেয়ে তিনি বৃহস্পতিবার রাতেই পিরোজপুর থেকে ঢাকায় আসেন। তিনি বলেন, নীলাদ্রির লাশ পিরোজপুর সদর থানার চলিশায় শেষকৃত্য হবে। এর আগে ঢাকা মেডিকেল কলেজমর্গে নিলয়ের সুরতহাল রিপোর্ট জমা দেন খিলগাঁও থানার সাব-ইন্সপেক্টর হিরু মোল্লা।

মামলা দায়ের: গত শুক্রবার দুপুরে হত্যাকাণ্ডের পর রাত সাড়ে এগারোটার দিকে খিলগাঁও থানায় মামলা করেন নীলাদ্রির স্ত্রী আশা মনি। অচেনা চার যুবককে তিনি আসামি করেছেন। এজাহারে উল্লেখ করা হয় দুপুরে জুমার নামাজ শেষ হওয়ার পরপরই ভবনের পঞ্চম তলায় নিলয়ের ঘরে ঢুকে তাকে কুপিয়ে খুন করে যায় ওই যুবকরা। ঘরে তখন নিলয়ের স্ত্রী ও শ্যালিকা ছিলেন। তাদের অস্ত্রের মুখে বারান্দায় আটকে রাখা হয়েছিল বলে আশা মনি জানিয়েছেন।

মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (পূর্ব) মাহবুব আলম বলেন, মামলাটি বর্তমানে খিলগাঁও থানা পুলিশই তদন্ত করছে। থানা পুলিশকে সহায়তা করছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ও ৱ্যাবসহ অন্যান্য সংস্থা। তবে খুনিদের শনাক্ত ও গ্রেফতারের জন্য মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ একটি বিশেষ টিম গঠন করেছ। টিম কাজ শুরু করেছে।

নিলয়কে হত্যার দায় স্বীকার করে আল কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশের (একিউআইএস) বাংলাদেশ শাখা, আনসার আল ইসলামের নামে ই মেইলের ব্যাপারে এ গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, আগে সব ব্লগার খুনসহ বিভিন্ন ঘটনা পর্যালোচনা করে তদন্ত চলছে। তবে দু’এক দিনের মধ্যে মামলার তদন্ত মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

খিলগাঁও থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ঘটনাস্থল থেকে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব আলামত পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আদালতের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। নিহত নীলাদ্রির স্ত্রী গতকাল দুপুরে পুলিশ প্রহরায় তার এক আত্মীয়ের বাসায় গেছেন। পূর্ব গোড়ানের সেই ১৬৭ নম্বর ভবনের বাসিন্দারা আতঙ্কে আছেন। বাড়িওয়ালা শামসুল কবির জানিয়েছেন, পুলিশ ও গণমাধ্যমকর্মী ছাড়া কাউকে এ ভবনে ঢুকতে না দেয়ার জন্য পুলিশ তাকে বলে গেছে।

Leave a comment