স্কুল কেবিনেট নির্বাচন শিশুদের গণতন্ত্রের উৎসব

স্টাফ রিপোর্টার: বন্ধু তোমার একটি ভোটে, যোগ্যপ্রার্থী যাবে জিতে, মরিয়মের দুই নয়ন, আদর্শ স্কুলের উন্নয়ন, ভোটে এসেছি প্রথমবার, পাশে চাই আমি সবার- লাল-কমলা-হলুদ কাগজে হাতে লেখা এরকম শ শ পোস্টারে রঙিন রাজধানীর মিরপুরের আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে; উপলক্ষ স্কুল কেবিনেট ভোট।
মাধ্যমিক পর্যায়ে স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীদের কেবিনেট গঠনের লক্ষ্যে এ বছর প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো।

মিরপুরের আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের মতো সারাদেশের প্রতিটি উপজেলা ও মহানগরে সব মিলিয়ে এক হাজার ৪৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও দাখিল মাদরাসায় শনিবার সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত এ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ চলে।

সকাল ১১টার দিকে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ নির্বাচন পরিস্থিতি সরেজমিন পরিদর্শনে আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে যান। মন্ত্রীর আগমনে ক্ষুদে ভোটারদের মধ্যে উত্তেজনা-উল্লাস যেন আরো বেড়ে যায়। শিক্ষামন্ত্রী ভোটগ্রহণ কক্ষে পরিণত হওয়া স্কুলের ক্লাসরুমের সামনে লাইনে দাঁড়ানো ভোটার-শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেন।

কেমন লাগছে ভোট দিতে? কোনো সমস্যা হচ্ছে কি-না?- এসব প্রশ্ন করে খোঁজখবর নেন তিনি। পরে মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষাগ্রহণের পাশাপাশি শিশুকাল থেকেই গণতন্ত্রের চর্চা, সহনশীলতা ও মূল্যবোধ তৈরির উদ্দেশে এই প্রথম মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের দিয়ে সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে স্টুডেন্টস কেবিনেট গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

ভবিষ্যতে তারাই এ দেশ গড়ে তুলবে, পরিচালনা করবে তাই তাদের এখন থেকেই গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, অন্যের মতের প্রতি সহনশীলতার চর্চার প্রয়োজন রয়েছে। এই নির্বাচনে ছাত্র-ছাত্রীরাই নির্বাচন কমিশনার, তারাই পরিচালক, তাদের দ্বারাই সবকিছু অনুষ্ঠিত করা হচ্ছে। পরস্পরের প্রতি বিদ্বেষ নয়, অন্যের কাছে নিজেকে গ্রহণযোগ্য করে তোলার লক্ষ্যেই তারা চেষ্টা করবে।

চুয়াডাঙ্গার এমএ বারী, ডিঙ্গেদাহ ও ভালাইপুর, দামুড়হুদার কুড়ুলগাছি, জীবননগর এবং মেহেরপুরের মুজিবনগরে স্টুডেন্ট কেবিনেট নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল শনিবার সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ চলে। শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকেই ১ জন প্রধান নির্বাচন কমিশনার, দুজন নির্বাচন কমিশনার, ১ জন করে পোলিং, প্রিসাইডিং অফিসার ও পোলিং এজেন্ট নিয়োগ দিয়ে ভোটগ্রহণ কার্যক্রম চলে।

চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের এমএ বারী মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ডিঙ্গেদহ দাখিল মাদরাসায় স্টুডেন্ট কেবিনেট নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল শনিবার এ দুটি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে কেবিনেট নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ চলে। শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকেই ১ জন প্রধান নির্বাচন কমিশনার, দুজন নির্বাচন কমিশনার, ১ জন করে পোলিং, প্রিজাইটিং অফিসার ও পোলিং এজেন্ট নিয়োগ দিয়ে ভোটগ্রহণ কার্যক্রম চলে। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আ. মতিনের তদারকিতে জেলা সদরের দুটি প্রতিষ্ঠানের স্টুডেন্ট কেবিনেট নির্বাচন সম্পন্ন হয়। তিনি বলেন, এমএ বারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৮টি কেবিনেট সদস্য পদের বিপরীতে ১৫ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। নির্বাচনে ৮ জন স্টুডেন্টস কেবিনেট সদস্য নির্বাচিত হয়। সর্বোচ্চ সংখ্যক ভোটপ্রাপ্ত নির্বাচিতরা হলো ৬ষ্ঠ শ্রেণির প্রভাতী ইসলাম, ৭ম শ্রেণির শারমিন আকাতার, ৮ম শ্রেণির শামীমা আক্তার, ৮ম শ্রেণির তানজিল আহম্মেদ, ৯ম শ্রেণির শাকিল খান, ৯ম শ্রেণির কুমারী স্মৃতিরানী, ১০ম শ্রেণির তানজিমা আফসানা ও ১০ম শ্রেণির রাজিব হোসেন। সর্বোচ্চ ৪৯০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয় ১০ম শ্রেনির তানজিমা আফসানা।

নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ছিলো ৮৯৭ জন, ভোট পোল হয় ৬৬৪টি। গতকাল ভোট কেন্দ্র পর্যেবেক্ষণ করেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আ. মতিন। এ সময় সাথে ছিলেন এমএ বারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক একেএম আলী আকতার ও সদর উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার।

অপরদিকে ডিঙ্গেদহ দাখিল মাদরাসাও ৮টি পদের বিপরীতে ১৫ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ছিলো ২১৬ জন। ভোট পোল হয় ১৫০টি। সবোর্চ্চ ভোট প্রাপ্তির ভিত্তিতে নির্বাচিতরা হলো ৬ষ্ঠ শ্রেণির নুসরাত জাহান, ৬ষ্ঠ শ্রেণির রাকিবুল ইসলাম, ৭ম শ্রেণির গোলাম মর্তুজা, ৮ম শ্রেণির ইমন আলী, ৯ম শ্রেণির বায়েজিদ হোসেন, ৯ম শ্রেণির সোনিয়া খাতুন, ১০ শ্রেণির আকিবুর রহমান ও ১০ শ্রেণির তরিকুল ইসলাম। ডিঙ্গেদহ মাদরাসায় স্টুডেন্টস কেবিনেট নির্বাচনে ৭১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয় ৮ম শ্রেণির ইমন আলী।

ভালাইপুর প্রতিনিধি জনিয়েছেন, আলমডাঙ্গার গোকুলখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গতকাল শনিবার শিক্ষার মানন্নোয়নে ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে স্টুডেন্টস কেবিনেট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার দশম শ্রেণির ছাত্র তৌফিকুর রহমানে সহযোগিতায় নির্বাচন অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার দীনেশ চন্দ্র পাল, জেলা যুবলীগের যুগ্মআহ্বয়ক আসাদুজ্জামান কবীর, জেলা যুবলীগ নেতা চিৎলা ইউপি চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান, গোকুলখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আমির হোসেন, সহকারী প্রধান শিক্ষক ইস্পেয়ারা খাতুন, ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক টুকু, পৌর আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহাসিন রেজা, ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ফরিদ হোসেন, মহাসিন হোসেন, কাজলী খাতুন, জহুরুল ইসলাম, গোকুলখালী পুলিশ ফাঁড়ির আইসি হাফিজ উদ্দিন, শিক্ষক সদস্য নাসির উদ্দিন, শফিউদ্দিন টিটু, সিনিয়র শিক্ষক আব্দুল কুদ্দুস, বেলাল হোসেন, তাজুল ইসলাম, হামিদুল হক, জাফর সাদিক, সাহাবুদ্দিন, সহিদুর রহমান জনি, সাঈদ হোসেন, ইগবাল হোসেন, জান্নাতুল ফেরদৌস ছাত্রলীগ নেতা মিরাজ হোসেন, জুয়েল হোসেন ও টিপু মিয়া। নির্বাচন শেষে উপজেলা শিক্ষা অফিসার বলেন, নিতিমালা অনুযায়ী নির্বাচিতদের মধ্য থেকে আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে সবার সম্মতিক্রমে ১ জনকে ভিপি নির্বাচিত করতে হবে। নির্বাচনে ৬স্ট শ্রেণি থেকে প্রথম হয়েছে আবু হেনা মোহাম্মদ অনিক ও ২য় হয়েছে ডালিম হোসেন। ৭ম শ্রেণি থেকে প্রথম হয়েছে মিজু আহম্মেদ ও ২য় হয়েছে খাদিজা খাতুন। ৮ম শ্রেণি থেকে প্রথম হয়েছে আঙ্গিনা খাতুন। ৯ম শ্রেণি থেকে প্রথম হয়েছে রিনা খাতুন ও ২য় হয়েছে খালেদুজ্জামান অলিক। ১০ম শ্রেণি থেকে প্রথম হয়েছে শাপলা খাতুন ও ২য় হয়েছে আসিফ আহম্মেদ আগুন।

কুড়লগাছি প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দামুড়হুদার কুড়ুলগাছি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে স্টুডেন্টস কেবিনেট নির্বাচন সম্পুর্ণ হয়েছে । গতকাল শনিবার সকাল ৮ হতে দুপুর ১টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে বিদ্যালয়ের হলরুমে ভোট গ্রহণ করা হয়। এই প্রথম মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে স্টুডেন্টস কেবিনেট নির্বাচন শুরু হয়েছে। নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করে বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির ছাত্র হাফিজুল ইসলাম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন দামুড়হুদা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিকাশ কুমার বিশ্বাস, কুড়ুলগাছি ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ওসমান গনি, প্রধান শিক্ষক রুহুল আমিন, হাফিজুর রহমান, সালমা খাতুন, তানভির আহম্মদ লিংকন, আবুল হোসেন ও মিঠু। বিদ্যালয়ে ৬৩৭ জন ভোটারের মধ্যে ৫০৪ জন ভোট প্রদান করে। ভোট গণনা শেষে ৬ষ্ঠ শ্রেণির খান আতাউর রহমান সেলিম ১৭০ ভোট, ৭ম শ্রেণির ফাতেমা খাতুন ২০২ ভোট, ৮ম শ্রেণির মিজানুর রহমান ২৪০, আশিকুর রহমান ২৩৬ ভোট, ৯ম শ্রেণির ইমতিয়াজ হোসেন ৩৪৫, সাজনী ২৯১ ভোট, ১০ম শ্রেণির নেওয়াজ শরীফ ২৯৭ ও নাইমুর রহমান ২৭৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়।

জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, জীবননগর উপজেলার হাসাদাহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে স্টুডেন্ট কেবিনেট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শনিবার হাসাদাহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৫০৮ জন স্টুডেন্ট ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে। নির্বাচনে ১ম শ্রেণির ছাত্র মেহরাব হোসেন নির্বাচন কমিশানার ও তরিকুল ইসলাম সহকারী নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেন।

স্টুডেন্ট কেবিনেট নির্বাচনে পদ্মা শাখায় ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী জান্নাতুল মাওয়া ২৭১ ভোট পেয়ে ১ম স্থান অধিকার করে। একই শ্রেণির যমুনা শাখার আজমাইন ১৯৩ ভোট পেয়ে ২য় স্থান লাভ করে। ৭ম শ্রেণির মেঘনা শাখায় সাব্বির রহমান ৩৫৪ ভোটে ১ম ও পদ্মা শাখার সুমাইয়া আক্তার ২০৫ ভোট পেয়ে ২য় স্থান লাভ করে। ৮ম শ্রেণিতে শাপলা-১ শাখায় আকাশ হোসেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে। এছাড়াও শাপলা-২ শাখায় তানজির রহমান ও ৯ম শ্রেণির ক শাখায় মাহমুদুল হাসান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ১০ম শ্রেণির আব্দুল্লাহ আল সাকিব ক শাখায় ২৩৫ ভোটে নির্বাচিত হয়।

মুজিবনগর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার ৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২টি প্রতিষ্ঠানের স্টুডেন্ট ক্যাবিনেট নির্বাচন-১৫ সম্পন্ন হয়েছে। অপরটির কারিগরি শিক্ষা আংশিক চালু থাকায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত মতে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। গতকাল শনিবার সকাল ৮টা থেকে বেলা একটা পর্যন্ত মুজিবনগর উপজেলার শিবপুর আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও দারিয়াপুর গাউছিয়া দাখিল মাদরাসার নির্বাচন চলে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার গোলাম ফারুক জানান, আনন্দবাস মিয়া মুনছুর একাডেমির (কারিগরি শাখা) পূর্ণাঙ্গ কারিগরি শিক্ষা না থাকায় কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ওই প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন বন্ধ রাখা হয়েছে। নির্বাচনে শিবপুর আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মোট ৬৮৯ জন ভোটারের মধ্যে ৫৭৯ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে। সমন্বয়কারী সহকারী প্রধান শিক্ষক ফিরাতুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে নির্বাচন পরিচালনা করেন সাগর হোসেন। ভোটাররা নির্বাচনের ১৮ জন প্রার্থীর মধ্যে ৭ জনকে নির্বাচিত করে। নির্বাচিত হলেন- আরিফুল ইসলাম, সোহেল রানা, হীরা মতি, শামীম রেজা জাহিদ বিন জিল্লুর, সাইফুল ইসলাম ও সানি কবির।

একই দিন একই সময়ে দারিয়াপুর গাউছিয়া দাখিল মাদরাসার নির্বাচন শুরু হয়। নির্বাচনে ১৯০ জন ভোটারের মধ্যে ১৫৯ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে। নির্বাচনে ইমরান হোসেন, নিশাত তাসনিম, রাজিয়া সুলতানা, বিথী, ফজলে রাব্বি, কাবিদুল ও জান্নাতুন মাওয়া। সমন্বয়কারী আবুল কালাম আজাদের তত্ত্বাবধানে নির্বাচন পরিচালনা করেন জাকারিয়া হাবিব। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার গোলাম ফারুক নির্বাচন কেন্দ্র ঘুরে দেখেন।

Leave a comment