রাজধানীতে আবার নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন এক ব্লগার। রাজীব, অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর রহমান বাবু ও অনন্ত বিজয়ের পর ঘাতকের শিকার এবার নিলয় চক্রবর্তী, যিনি নিলয় নীল নামে অনলাইনে লেখালেখি করতেন। গত শুক্রবার দুপুরে বাসায় ঢুকে স্ত্রী ও বোনকে আটকে রেখে তাকে খুন করা হয়। নিলয় শুধু ব্লগে লেখালেখি করতেন না, তিনি ছিলেন গণজাগরণ মঞ্চের একজন সক্রিয় কর্মী। যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তির দাবিতে সোচ্চার ছিলেন এ তরুণ। নিলয়ের হত্যাকারী কারা তা কারো কাছেই অস্পষ্ট নয়। একের পর এক এমন হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশে মুক্তচিন্তার মানুষের কোনো স্থান থাকবে কি-না, তা নিয়েই সংশয় তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে মৌলবাদী শক্তি যেদিন থেকে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, সেদিন থেকেই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে এ দেশের মুক্তচিন্তার মানুষ। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসররা বেছে বেছে মুক্তচিন্তার মানুষদেরই হত্যা করেছিলো। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকেই দেশের রাজনীতির যে পশ্চাৎপদতা শুরু হয়, সে অবস্থা থেকে দেশ ও জাতি এখনো বেরিয়ে আসতে পারেনি। মৌলবাদী অর্থনীতি দেশে বিস্তার লাভ করেছে। রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের বাড়বাড়ন্তও লক্ষণীয়। কিন্তু তাতে সমাজের কোনো লাভ হয়নি। সমাজকে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যাওয়ার রাজনৈতিক চেষ্টা থেমে থাকেনি। তারই প্রতিক্রিয়া আমরা দেখতে পাই একের পর এক ব্লগার হত্যার ভেতর দিয়ে। ঠিক যেভাবে হুমায়ুন আজাদের ওপর আঘাত করা হয়েছিলো, সেভাবেই আক্রান্ত হয়েছিলেন ব্লগার রাজীব হায়দার। অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর রহমান বাবু কিংবা অনন্ত বিজয়ের ওপর একই কায়দায় আঘাত করা হয়েছে। সংবাদমাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে যে খবর পাওয়া যায়, তাতে অনুমান করা যায় ঘাতকরা আগে থেকেই নিলয়কে চিনতো। জুমার নামাজের সময় বাসা ভাড়া নেয়ার কথা বলে বাসায় ঢুকে খুন করা হয় তাকে।
ব্লগারদের ওপর যে আঘাত আসছে, তা কোনো সুস্থ সমাজের পরিচয় বহন করে না। বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকেই ঘাতকচক্র একের পর এক আঘাত করার সাহস পাচ্ছে। হুমায়ুন আজাদ, ব্লগার রাজীব হায়দার, অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর রহমান বাবু, অনন্ত বিজয়ের ওপর আক্রমণের পর কোনো দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়নি। স্বাভাবিকভাবেই অপশক্তি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার সুযোগ পেয়েছে। একের পর এক ব্লগার হত্যার ঘটনা তো তারই সাক্ষ্য দেয়। এ কথা তো মানতেই হবে, আইনের শাসন যখন দুর্বল হয়ে পড়ে তখন সমাজে অপরাধ বেড়ে যায়, অপশক্তি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। বাংলাদেশে যা হচ্ছে তা যে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার দুর্বলতার জন্যই হচ্ছে, সে ব্যাপারে কি এখন কারো কোনো দ্বিধা আছে? শুধু জঙ্গিদের হত্যাকাণ্ডই নয়, প্রতিদিনই খুন, রাহাজানির অসংখ্য ঘটনা ঘটছে। হত্যাকারীদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। এসব মামলায় কালক্ষেপণ করা হয় বলেই মামলা দুর্বল হয়ে যায়। নাগরিকের নিরাপত্তা ও ঘাতকদের বিচার- সবক্ষেত্রেই দৃষ্টান্ত স্থাপন করার দায়িত্ব সরকারের।