গাংনীর পাগলা ব্রিজের নিকট বিজিবি মাদকবিরোধী অভিযান : ফেনসিডিল উদ্ধার
স্টাফ রিপোর্টার: মেহেরপুর গাংনীর তেতুঁলবাড়িয়া বিজিবি ক্যাম্পের সদস্যরা গত মঙ্গলবার অভিযান চালিয়ে সিএনজিচালক গাংনীর মটমুড়া গ্রামের বারেকের ছেলে ডাবলু ও ফরিদপুর জেলা শহরের ইয়াকুব আলীর ছেলে ইসমাইল হোসেনকে আটক করেছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ৮৫ বোতল ফেনসিডিল। বিজিবির এ অভিযানকে রহস্যময়ী অভিযান বলে মন্তব্য করেছেন অনেকেই। অপরদিকে অভিযানের সময় এক সুন্দরী নারীসহ একজনকে ছেড়ে দেয়ায় বিষয়টি নিয়ে ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। বিজিবির পক্ষ থেকে দুজনকে আটক করা হয়েছে এবং কাউকে ছেড়ে দেয়া হয়নি বলে দাবি করা হয়েছে।
জানা গেছে, গত মঙ্গলবার দুপুরে তেঁতুলবাড়িয়া পাগলা ব্রিজের নিকট বিজিবি সদস্যরা একটি যাত্রীবাহী সিএনজি তল্লাশি চালিয়ে ৮৫ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করে। এ সময় এক সুন্দরী নারীসহ ৩ জনকে আটক করে ক্যাম্পে নিয়ে যায়। পরে নারীসহ একজনকে ছেড়ে দেয় এবং সিএনজিচালক ডাবলু ও ইসমাইলকে মামলাসহ গাংনী থানায় সোপর্দ করে। বিজিবির এ রহস্যজনক ভূমিকা নিয়ে জনমনে যেমন ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে তেমনি সিএনজিচালক যেভাবে গ্যাঁড়াকলে পড়েছে তার বিস্তর বর্ণনা করেছে এলাকাবাসী।
মটমুড়া ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য বাওট সোলাইমানী মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি নিয়ামত আলী জানান, দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে এক সুন্দরী নারীসহ ৩ জন আগন্তক বাওট বাসস্ট্যান্ডে অটো থেকে নামেন। এক সময়ের আলোচিত চিহ্নিত মাদকব্যবসায়ী বাওট গ্রামের সামিয়ার খোঁজ করেন। তাদের সাথে কয়েকটি লাগেজ ছিলো। কিছুক্ষণ পর সামিয়ারার ছেলে শামীম (মোটর ম্যাকানিক্স) এসে তাদের সাথে দেখা করে চলে যায়। সহড়াতলা গ্রামে ভাড়ায় যাওয়ার জন্য ডাবলুকে অনুরোধ করে তারা। প্রথমে ডাবলু যেতে না চাইলেও বিয়ের জন্য কনে দেখতে যাচ্ছেন এরা এবং কিছুক্ষণ পরে ফিরে আসবে এমন কথা শুনে ডাবলু রাজি হয়।
মটমুড়া ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম জানান, ডাবলু নিরীহ ও ভদ্র ছেলে। মাদক বহন তো দূরের কথা কখনও সে ধূমপানও করে না। তার মধ্যে কোনো অসদাচরণও লক্ষ্য করা যায়নি। বিজিবি রহস্যজনকভাবে মাদকপাচারকারীদের ছেড়ে দিয়ে নিরীহ মানুষকে আটক করেছে। তিনি আরো বলেন, বাওট বাজার থেকে ওই যাত্রীদের কথামতো ডাবলু সিএনজি নিয়ে তেঁতুলবাড়িয়া গ্রামে যায়। সেখানে একটি বাড়ির সামনে থামাতে বলে। যাত্রীবেশী তিনজন লাগেজ নিয়ে বাড়ির ভেতরে কনে দেখতে যাচ্ছে বলে ডাবুলকে রাস্তায় থামতে বলে। আধাঘণ্টা পরে তারা ওই লাগেজ নিয়ে ফিরে আসে। কনে দেখা হয়নি জানিয়ে ডাবলুকে বাওট বাজারে ফিরে যেতে বলেন। পথিমধ্যে বিজিবির হাতে ধরা পড়ে। তাহলে ডাবলু কীভাবে মাদকব্যবসায়ী হয়। বিষয়টি নিয়ে চলতি মাসের উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় আলোচনা করে সহযোগিতা চাওয়া হবে বলে জানান সিরাজুল ইসলাম।
এদিকে ডাবলুর মতো দরিদ্র পরিবারের ছেলে আটক হওয়ায় হতবাক গ্রামবাসী। গ্রামের শিশু থেকে বয়োবৃদ্ধ পর্যন্ত সকলেই ডাবলুর জন্য চোখের পানি ফেলেছেন। ওই আটক অভিযানের মধ্যদিয়ে ডাবলুর পরিবারে বইছে শুধুই কান্নার রোল। তার আয় দিয়েই চলতো সংসার খরচ ও সিএনজির কিস্তি। নিরপরাধ একজন অসহায় সিএনজি চালকে মাদকব্যবসায়ী হিসেবে মামলা করার বিষয়টি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না গ্রামবাসী।
ডাবলুর পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, মাস চারেক আগে আশা সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে শোরুমে কিস্তি করে সিএনজি কিনেছেন ডাবলু। পরিবারে রয়েছে অসুস্থ বাবা, মা, স্ত্রী ও এক বছরের শিশুপুত্র। বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক ডাবলুর মুক্তি ও মামলা থেকে অব্যাহতি দাবি করেছে তার পরিবার ও এলাকাবাসী।
এদিকে অজ্ঞাত সুন্দরী নারীর পরিচয় বিষয়ে জানতে চেয়ে গতকাল শামীমের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তিনি নানা ছল চাতুরির আশ্রয় নিয়ে সাংবাদিকদের ম্যানেজ করার অপচেষ্টা করেন। শেষ পর্যন্ত মোবাইলফোনে অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করেন। তবে শামীম পরিচয় না দিলেও ওই নারী ও তার সঙ্গীয় ব্যক্তির পরিচয় পেয়েছে পুলিশ। ডাবলুর মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা গাংনী থানার এসআই একরামুল জানান, ওই সুন্দরী নারীর নাম মাহমুদা খাতুন। স্বামীর নাম এসএম নুরুল ইসলাম। বাড়ি কুষ্টিয়ার আমলায়। মামলাটি তদন্ত শুরু করা হয়েছে। প্রাথমিক অবস্থায় জানা গেছে, সিএনজিতে ৪ জন ছিলো। এদের মধ্যে অভিযানের সময় একজন পালিয়ে যায়। আটক হয় নারীসহ ৩ জন। তবে সিএনজিচালক মাদকব্যবসায়ী নয় বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। দ্রুত চুড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।