প্রশ্ন ফাঁস রোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও বাস্তবতা?

 

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন প্রণয়ন, ছাপানো ও বিতরণের সাতে যুক্ত সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাংশ প্রশ্নপত্র ফাঁস করছে। ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র ছড়াচ্ছে কোচিং সেন্টার, গাইড বইব্যবসায়ী, ফটোকপির দোকানদার, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মী, শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবক ও বন্ধু-বান্ধবরা। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এ কাজে আর্থিকভাবে লেনদেন হয় ২০ টাকা থেকে শুরু করে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত। বস্তুত প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, মুদ্রণ ও বিতরণের সাথে সংশ্লিষ্টদের সহায়তা ছাড়া যে প্রশ্ন ফাঁস সম্ভব নয়, এটা সহজেই অনুমান করা যায়। আমরা এদিকটিতে নজর দেয়ার কথা বলে আসছি দীর্ঘদিন ধরে। টিআইবির গবেষণা ফলাফলে সেই সরষের ভেতরে ভূত থাকার বিষয়টিই নিশ্চিত হলো।

গত কয়েক বছরে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী, জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি), মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেটসহ (এইচএসসি) পাবলিক পরীক্ষার মোট ৬৩টি বিষয়ের প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উঠেছে। তবে সবচেয়ে বেশি প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে ২০১৩ ও ২০১৪ সালে। প্রতিটি প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনার পর এর সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুশিয়ারি দিলেও এবং প্রশ্ন ফাঁস রোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও বাস্তবতা হলো, এরপরও প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধ হয়নি। খোদ সরষের মধ্যে ভূত থাকলে ভিন্ন কিছু হওয়ার অবকাশ নেই। প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে সর্বাগ্রে প্রয়োজন এর সাথে জড়িতদের চিহ্নিতকরণ এবং তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান। অপরাধের চরিত্র ও ধরন বুঝতে হবে আগে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাথে বিভিন্ন পর্যায়ে অনেকেই হয়তো জড়িত থাকে; তবে প্রশ্ন প্রণয়ন, ছাপানো ও বিতরণের সাথে যুক্তদের মধ্যে যারা এ অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত তারাই সবচেয়ে বড় অপরাধী। তাদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনা হলে অনেক আগেই এক্ষেত্রে সুফল পাওয়া যেতো।

প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে টিআইবির সুপারিশগুলো প্রণিধানযোগ্য। এসব সুপারিশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য- প্রশ্নপত্র ছাপানো ও বিতরণের কাজ পর্যায়ক্রমে ডিজিটালাইজড করা, সংশ্লিষ্ট আইনে শাস্তির মেয়াদ বাড়ানো, এমসিকিউ প্রশ্ন-ব্যবস্থা ক্রমান্বয়ে তুলে দেয়া এবং প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার জন্য প্রতি বিষয়ে একাধিক প্রশ্নপত্রের সেট রাখা ইত্যাদি। সেই সাথে ইতঃপূর্বে যারা এ ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ছিলো, তাদের বিচারের আওতায় আনা দরকার। কারণ বিচারহীনতাই অনিয়মের জন্ম দেয়। আর অপরাধীদের সাজা হলে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আসে।