নৃশংসতা রোধে কঠোর পদক্ষেপ প্রয়োজন

 

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে, এটি প্রমাণ করার জন্য নতুন কোনো সূচক বা লাল রেখা আর অঙ্কনের প্রয়োজন নেই। এই সেদিন শিশু রাজন হত্যাকাণ্ড সারাদেশের সচেতন মানুষকে প্রতিবাদে সোচ্চার করলো, একে একে পাকড়াও হলো অভিযুক্তরা। গণমাধ্যমের সুবাদে সারাদেশের সাধারণ মানুষও জানলো ঘটনাটি। এরপরও পত্রিকার পাতা ওল্টালে, টিভি খুললে প্রতিদিনই নৃশংসতার নতুন নতুন খবর আমাদের হতবিহ্বল করতে থাকে। রাজনের পর খুলনার শ্রমজীবী শিশু রাকিবকে যে কায়দায় মারা হলো তাকে পাশবিক বললেও কম বলা হয়। আরেক নির্যাতিত শিশুর বাক্সবন্দি ক্ষতবিক্ষত লাশ পাওয়া গেলো গত সোমবার গভীর রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনের রাস্তায়। রাজশাহীতে খুন হলেন এক গৃহবধূ। এসব তো শুধু গণমাধ্যমে আসা খবর। যে কোনো ২৪ ঘণ্টার প্রকৃত হিসাব পাওয়া সম্ভব হলে দেখা যেতো খুনখারাবির চিত্রটি দেশে বহু আগেই ভয়াবহ স্তরে চলে গেছে। বরগুনার তালতলীতে ১১ বছরের রবিউল আউয়াল নামের এক শিশুকে মাছ চুরির অভিযোগে চোখ উপড়িয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার বিকেলে তালতলী উপজেলার ছোট আমখোলা গ্রামের একটি মাছের ঘের থেকে রবিউলের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নাটোরের বড়াইগ্রামে চুরির অপরাধে গাছের সাথে বেঁধে শিশুসহ দুজনকে পিটিয়ে আহত করা হয়েছে। উপজেলার দক্ষিণ মালিপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। রোববার বিকেলে এ ঘটনা ঘটলেও মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে পেটানোর দৃশ্য ছড়িয়ে পড়লে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। ময়মনসিংহের ভালুকায় চুরির অভিযোগ তুলে এক তরুণকে গাছে ঝুলিয়ে মারধরের অভিযোগে মামলা হয়েছে এক যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে। পুলিশ মামলার এক আসামিকে গ্রেফতার করলেও মূল আসামিদের কেউ ধরা পড়েনি। রাজন হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে একাট্টা হয় সবাই; সিলেটে হাজার হাজার মানুষের বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। খুলনার মানুষও রাকিব হত্যার বিচার চেয়ে রাস্তায় নেমে এসেছে; ইন্টারনেটের যোগাযোগ মাধ্যমগুলোও এখন প্রতিবাদে সোচ্চার। শুধু হত্যাকাণ্ড নয়, সব ধরনের অন্যায়, অবিচার, অনাচারের বিরুদ্ধে এ সামাজিক সংহতিটি আজ বড় প্রয়োজন। আমাদের সবাইকে বলতে হবে- ‘এনাফ ইজ এনাফ’ যথেষ্ট হয়েছে, আর নয়। থানা পুলিশের কারো কারো অসাধুতার বিষয়টি নতুন করে প্রমাণের দরকার নেই। তবে সমাজের সচেতন মানুষ একাট্টা হলে, অভিযুক্ত বা সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ধরিয়ে দিতে এগিয়ে এলে থানা-পুলিশ অন্যায় করে পার পায় না- এর উদাহরণ রাজন হত্যা মামলা।

আমাদের বিশ্বাস রাখতে হবে প্রশাসনিক শক্তির ওপরও। সাধারণ মানুষকে প্রতিবাদমুখর করে তুলছে এমন হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রে সহজেই অপরাধীদের আমরা ধরা পড়তে দেখি। গর্ভস্থ শিশুর গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় এমনকি ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী সংগঠনের লোকজনও গ্রেফতার হয়েছে। প্রযুক্তির অনেক বিকাশ হয়েছে। মোবাইলফোন বা সিসি ক্যামেরা অপরাধীদের গ্রেফতারে খুব কাজে দিচ্ছে। যেটার অভাব, তা হচ্ছে পুলিশ প্রশাসনের নিরপেক্ষতা, সততা ও আন্তরিকতা। বিচারহীনতা, কখনো বা বিচারে দীর্ঘসূত্রতা, নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, পরিবারে, স্কুল-কলেজে আদর্শ শিক্ষা না পাওয়া, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন, পুলিশ প্রশাসনের ওপর রাজনৈতিক নেতাদের অযাচিত প্রভাবসহ বিভিন্ন কারণে সমাজে খুনখারাবি বাড়ছে। রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার স্বার্থেই এসব ব্যাধি থেকে সমাজকে মুক্ত করতে হবে।

Leave a comment