মানুষ এসব বাহনে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিলো

 

সরকারি নির্দেশনায় মহাসড়কে অটোরিকশা চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সরকারের এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়েছে গত ১ আগস্ট থেকে। মহাসড়কে ধীরগতি ও তিন চাকার সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ করতে প্রথম দিন বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে জরিমানা করা হয়েছে। অন্যদিকে সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করেছে তিন চাকার যানবাহন ও সিএনজি অটোরিকশার মালিক-শ্রমিকরা। কোথাও কোথাও ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে। কোথাও কোথাও অবরোধ ও ধর্মঘট কর্মসূচির প্রস্তুতিও নেয়া হয়েছে। আবার কোনো কোনো মহাসড়কে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চলেছে তিন চাকার ধীরগতির যানবাহন।

দেশের মহাসড়কগুলো থেকে ধীরগতির যানবাহন ও তিন চাকার অটোরিকশা তুলে দেয়ার সরকারি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে দুর্ঘটনা প্রতিরোধের একটি উপায় হিসেবে। এটা ঠিক যে কয়েক বছরের তুলনায় সাম্প্রতিক সময়ে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে গেছে। বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যাও। কোনোভাবেই সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। কিন্তু এটাও ঠিক, তিন চাকার ধীরগতির যানবাহনগুলোই সড়ক দুর্ঘটনার একমাত্র কারণ নয়। এর সাথে এটাও মেনে নিতে হবে, আমাদের দেশের অধিকাংশ যানবাহনের চালকই প্রশিক্ষিত নয়। এমন অনেক ভারী যানবাহনের চালক খুঁজে পাওয়া যাবে যাদের অক্ষরজ্ঞান পর্যন্ত নেই। এ চালকরা কি সড়ক-মহাসড়কের ট্রাফিক বা রোড সাইন বুঝতে সক্ষম? আমাদের দেশে যে সড়ক দুর্ঘটনাগুলো ঘটে তার জন্য প্রধানত দায়ী আমাদের মহাসড়কগুলো। আন্তর্জাতিক মানের মহাসড়ক আমাদের দেশে কমই আছে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে সড়ক ব্যবস্থাপনা। ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট বলতে আক্ষরিক অর্থে যা বোঝায়, তার কতটা আমরা নিশ্চিত করতে পারছি? ট্রাফিক সিগন্যাল ও রোড সাইন বুঝে ওঠার আগেই যেমন একজন চালকের হাতে যানবাহন ছেড়ে দেয়া হচ্ছে, তেমনি কার্যকারিতা না বুঝেই দেশে আমদানি করা হচ্ছে নানা ধরনের যানবাহন। যে থ্রিহুইলার ও অটোরিকশা মহাসড়কে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, এগুলো নিয়ম মেনেই আমদানি করা হয়েছে। এসব যানবাহন বিআরটিএ কিংবা স্থানীয় প্রশাসনের কাছ থেকে লাইসেন্স নিয়ে রাস্তায় চলাচল করছে। এসব যানবাহন স্থানীয়ভাবে অনেক মানুষের যাতায়াত সহজতর করেছিলো। মানুষ এসব বাহনে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিলো। রাস্তায় বড় যানবাহনের অপ্রতুলতায় এসব বাহনকে মেনে নিয়েছিলো মানুষ। হঠাৎ করে এসব যানবাহন বন্ধ করে দিলে মহাসড়কের নিকট পথের যাত্রীদের অসুবিধায় পড়তে হবে। মহাসড়কে তিন চাকার বাহন বন্ধ করে দিলে বড় যানবাহনে যাত্রী হয়রানি হবে না বা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হবে না, এমন নিশ্চয়তা কে দেবে?

মহাসড়কে ধীরগতির যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকাই উচিত। তবে আমাদের মতো দেশে এ ব্যবস্থা নেয়ার আগে দ্বিতীয়বার ভাবতে হবে। মহাসড়কে সহজেই মূল সড়কের পাশে ধীরগতির যানবাহন চলাচলের জন্য রাস্তা করে দেয়া যায়। বনপাড়া-হাটিকুমরুল সড়কের উদাহরণ। আপাতত মহাসড়কে নির্দিষ্ট লেন করে দিলেও ধীরগতির যানবাহন চলতে পারতো। শুধু সড়ক শৃঙ্খলার দিকটি নিশ্চিত করে মহাসড়কে নির্দিষ্ট লেনে ধীরগতির যানবাহন চলাচল করতে দিয়ে ধীরে ধীরে বিকল্প পথ তৈরি করার বিষয়টি ভেবে দেখা যেতে পারে।