বিনা চিকিৎসায় আর কতো যন্ত্রণা সহ্য করতে হবে?

দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম মনিরুল ইসলামের করুণ আকুতি মাখা প্রশ্ন

 

স্টাফ রিপোর্টার: ‘মরে গেলেই বাঁচতাম, বিনা চিকিৎসায় অসহনীয় যন্ত্রণায় তো কাতরাতে হতো না’। কষ্টের এ উক্তি- চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের সার্জিক্যাল ওয়ার্ডের এক কোনে অনেকটা বিনা চিকিৎসায় পড়ে থাকা রোগী মনিরুল ইসলামের (৩৫)।

মনিরুল ইসলাম দীর্ঘ প্রায় ৮ বছর ধরে ট্রাক ধোয়া মোছা আর চালকের সহকারী হিসেবে কাজ করার পর বছরখানেক আগে চালক হিসেবে দায়িত্ব পান। পোল্ট্রি ফিড নিয়ে ট্রাক চালিয়ে গন্তব্যে যাওয়ার পথে ঈশ্বরদীতে বিপরীতমু্খি ট্রাক্টরের সাথে ধাক্কা মেরে গুরুতর আহত হন মনিরুল। গত ২ রোজার দিন এ দুর্ঘটনা ঘটে। প্রথমে নেয়া হয় পাবনা সদর হাসপাতালে। পরে নেয়া হয় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে এক মাস ৬ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর সপ্তাখানেক হলো বাড়ি চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার ডুগডুগি হাটাপাড়ার বস্তিতে নেয়া হয়। তীব্র যন্ত্রণা। উপায় না পেয়ে নেয়া হয় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে।

সপ্তাখানেক ধরে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের পুরুষ সার্জিক্যাল ওয়ার্ডের এক কোনে পড়ে আছেন তিনি। কর্তব্যরত চিকিৎসক বলেছেন, দু পা কেটে ফেলের উপক্রম হয়েছে। শরীর থেকে দুটি পা বিছিন্ন করতে হলেও নিতে হবে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে। কর্তব্যরত চিকিৎসকের এ কথা শুনে মনিরুলসহ তার স্ত্রী ও অসহায় মায়ের চোখে মুখে নেমে এসেছে দুশ্চিন্তার ছাপ। দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার পর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার সময় মা আয়েশা খাতুন তার পৈত্রিক ভিটের ১ কাঠা জমি ৩০ হাজার টাকা দিয়ে বিক্রি করেন। ওই টাকা কয়েক দিনের মধ্যেই চিকিৎসার্থে খরচ হয়ে যায়। ছেলেকে সুস্থ করার আশায় আশা এনজিও থেকে ২০ হাজার টাকা ঋণ করেন। তাও শেষ। টাকা না থাকার কারণে রাজশাহী থেকে নেয়া হয় বাড়ি। বাড়িতে ফেলে রেখে চোখের সামনে কতোক্ষণ যন্ত্রণা দেখা যায়? তাই তাকে নেয়া হয়েছে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে। দামুড়হুদার নিজাম মিয়ার ট্রাক চালাতেন মনিরুল। দুর্ঘটনার পর ট্রাক মালিকের তরফে তেমন সহযোগিতা করা হয়নি বলেও অভিযোগ।

শুকুর আলীর ছেলে মনিরুল ডুগডুগি পশুহাটের অদূরবর্তী সরকারি জমিতে কুঁড়েঘর নির্মাণ করে দু সন্তান ও স্ত্রী নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। দুর্ঘটনায় সব স্বপ্ন গুঁড়িয়ে গেছে। দু শিশু সন্তান তাদের অসুস্থ পিতার পাশে বসে অপলোকদৃষ্টিতে তাকিয়ে। কে দেবে পিতার চিকিৎসার টাকা, কীভাবে পিতাকে সুস্থ করবে তারা? এসবের কিছুই জানে না। মনিরুল ইসলামও জানে না আদৌ তিনি চিকিৎসা পেয়ে সুস্থ হয়ে উঠবে কি-না। ফলে দানশীল হৃদয়বানদের দয়ার হাত বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছেন মনিরুল ইসলাম ও তার বৃদ্ধা মা আয়েশা খাতুন।

Leave a comment