বদলে যাচ্ছে সাক্ষ্য গ্রহণের পদ্ধতি : লিপিবদ্ধ হবে কম্পিউটার ও ভয়েস রেকর্ডারে

স্টাফ রিপোর্টার: বদলে যাচ্ছে সাক্ষ্য গ্রহণের পুরনো পদ্ধতি। হাতে লেখার পরিবর্তে এখন থেকে সাক্ষীর সাক্ষ্য লিপিবদ্ধ হবে কম্পিউটারে। ফলে নিম্ন আদালতের বিচারককে নিজ হাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে সাক্ষ্য লিপিবদ্ধ করতে হবে না। এখন থেকে সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শুধু কম্পিউটারে লিপিবদ্ধই নয় পাশাপাশি তা ভয়েস রেকর্ডারে রেকর্ডিংও করা হবে। পরে তা সিডি আকারে সংরক্ষণ করা হবে। বিচার বিভাগকে ডিজিটালাইজ করার যে প্রচেষ্টা তার পাইলট প্রকল্প হিসেবে প্রথমে সিলেট জেলা জজ আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণের এ আধুনিক পদ্ধতি চালু করা হচ্ছে। শিগগিরই এ প্রকল্প উদ্বোধন করবেন প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা। এরপর পর্যায়ক্রমে দেশের সকল জেলা জজ আদালতে এ পদ্ধতি চালু করা হবে।

ফৌজদারি ও দেওয়ানি মামলায় সাক্ষ্য হাতে লিখে লিপিবদ্ধ করেন বিচারকরা। দিনের পর দিন এভাবে তারা সাক্ষ্য গ্রহণ করে থাকেন। সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণের পর চলে জেরা। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা দীর্ঘ সময় ধরে সাক্ষীকে জেরা করে থাকেন। আর এই জেরাও বিচারকদেরকে হাতে লিখে লিপিবদ্ধ করতে হয়। ফলে সাক্ষ্য ও জেরা লিপিবদ্ধ করতে প্রচুর সময় ব্যয় হয়। এছাড়া বাদী বা আসামি পক্ষও নানা সময়ে অভিযোগ করে থাকেন যে যথাযথভাবে সাক্ষ্য গ্রহণ লিপিবদ্ধ হয়নি। এখন কম্পিউটারাইজড পদ্ধতিতে সাক্ষ্য গ্রহণের পাশাপাশি ভয়েস রেকর্ডারে তা লিপিবদ্ধ করা হলে বিচারপ্রার্থীরা পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ করার সুযোগ পাবেন না বলে জানান আইন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, দিনের পর দিন হাতে লিখে সাক্ষ্য লিপিবদ্ধ করতে গিয়ে বিচারকের দক্ষতা কমতে বাধ্য। উপরন্তু এক প্রকার অনীহারও সৃষ্টি হয়। কম্পিউটারে সাক্ষ্য লিপিবদ্ধের পদ্ধতি বিচারিক প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আরো নিশ্চিত হবে।

সিলেট জেলা জাজশিপে ৪৪টি আদালত রয়েছে। এর মধ্যে সিলেটের জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ১৪,৪৯৮টি দেওয়ানি এবং ৩,৬০৮টি ফৌজদারি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এছাড়া জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ও মেট্রোপলিটন সেশন ও বিশেষ আদালতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ২৮,৯৭৮টি। এছাড়া ৫ বছর আগে দায়ের করা হয়েছিলো ৮,১৫৭টি মামলা যা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে।

সূত্র জানায়, সিলেটের ৪৪টি আদালতের মধ্যে ২০টি আদালতে আধুনিক পদ্ধতিতে সাক্ষ্য গ্রহণ ও রেকর্ডিং সিস্টেম চালু হচ্ছে। কারণ এসব আদালতে মামলার জট বেশি ও দক্ষ সহায়ক জনবল রয়েছে। ৩৫ লাখ টাকা খরচ করে কম্পিউটার ও মনিটরসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি স্থাপন করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের সহযোগিতায় জাতিসংঘ উন্নয়ন প্রকল্পের (ইউএনডিপি) অর্থায়নে জুডিসিয়াল স্ট্রেনদেনিং প্রজেক্টের (জাস্ট) আওতায় বিচার বিভাগে এই ডিজিটালাইজেশন কার্যক্রম চালু করা হচ্ছে।

যেভাবে সাক্ষ্য লিপিবদ্ধ করা হবে: যখন কোন সাক্ষী সাক্ষ্য দেবেন তখন একজন স্টোনোগ্রাফার বা স্টোনোটাইপিস্ট তা কম্পিউটারে লিপিবদ্ধ করবেন। কম্পিউটারে লিপিবদ্ধ এ সাক্ষ্য বা জবানবন্দি মনিটরে পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারক, সাক্ষী, বাদী ও বিবাদী পক্ষের আইনজীবীগণ। এজন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক মনিটরও স্থাপন করা হয়েছে। সাক্ষ্য গ্রহণের সময় যদি কোনো ভুল কিছু লিপিবদ্ধ হয় তাহলে সাক্ষী বা তার আইনজীবীর তাত্ক্ষণিক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তা সংশোধনের সুযোগ থাকছে। সাক্ষ্য লিপিবদ্ধ শেষে তা প্রিন্ট করে তাতে সাক্ষীর সাক্ষ্য নেয়া হবে।

সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল জেলা জজ সৈয়দ আমিনুল ইসলাম বলেন, শিগগিরই এ প্রকল্প চালু হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে বিচারকদের আর দিনের পর দিন হাতে লিখে সাক্ষ্য লিপিবদ্ধ করতে হবে না। ফলে সাক্ষ্য গ্রহণে যে দীর্ঘ সময় ব্যয় হতো তার হাত থেকে নিষ্কৃতি পাবেন বিচারক ও বিচারপ্রার্থীরা। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে আধুনিক পদ্ধতিতে সাক্ষ্য গ্রহণ করা হচ্ছে। সেখানে রাষ্ট্রপক্ষ ও সাফাই সাক্ষীর সাক্ষ্য বা জবানবন্দি ও জেরা একজন স্টোনোগ্রাফার কম্পিউটারে লিপিবদ্ধ করেন।

Leave a comment