টানা বর্ষণে এলাকার শ শ বিঘা পানবরজ বিনষ্ট

দামুড়হুদা উপজেলার অধিকাংশ পানবরজেই দেখা দিয়েছে লতাপচা রোগ

 

বখতিয়ার হোসেন বকুল: দামুড়হুদা উপজেলার অধিকাংশ পানবরজেই দেখা দিয়েছে লতাপচা রোগ। মরসুমি বায়ুর প্রভাব আর টানা বর্ষণে পানবরজে পানি জমে গাছের মূল শেকড় পচে হুমকির মুখে পড়েছে এলাকার শ শ বিঘা পানবরজ। ফলে একদিকে যেমন এলাকার পানচাষিরা বড় ধরনের লোকসানের আশঙ্কা করছেন অন্যদিকে বেকার হয়ে পড়েছে হাজারো বরজ শ্রমিক। অপরিকল্পিতভাবে সেচ না দেয়া, রাসয়নিক সারের পরিবর্তে জৈবসার-কেঁচোসার ব্যবহার এবং বিভিন্ন ছত্রাক নাশক ওষুধ স্প্রে করার পরামর্শ উপজেলা কৃষি বিভাগের।

জানা গেছে, বাঙালির আদি কৃষ্টি-কালচারের মধ্যে একটি ছিলো হুকো টানার রেওয়াজ। আধুনিক সভ্যতার যুগে গ্রাম বাংলায় সময়ের ব্যবধানে সেই হুকো টানার রেওয়াজ বিলুপ্ত হলেও পান খাওয়ার রেওয়াজতো কমেইনি বরং এর ব্যাপকতা ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বব্যাপি। বিয়ে বাড়িসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে খাওয়া দাওয়ার পর এক খিলি পান না খেলে কেমন যেন অতৃপ্তি থেকে যায় প্রতিটি বাঙালীর মনে। তা ছাড়া পান বেশ কয়েকটি রোগের দাওয়ায়ও বটে। ফলে পান এখন দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার প্রতিটি গ্রামেই বেড়ে গেছে পানের আবাদ। বর্তমানে এ উপজেলায় প্রায় এক হাজার বিঘা জমিতে রয়েছে পানবরজ। এরমধ্যে শুধুমাত্র জগন্নাথপুর গ্রামেই প্রায় দেড়শ বিঘা জমিতে করা হয়েছে পানের আবাদ। আর এখানকার প্রায় ৪০ ভাগ মানুষেরই পানবরজে কাজ করে নির্বাহ হয় জীবন-জীবিকা।

জগন্নাথপুর গ্রামের পানচাষি তোফাজ্জেল হোসেন, জাহাঙ্গীর গাজী, গিয়াস উদ্দিন, হারু প্রামানিক ও সাধন প্রামানিকসহ বেশকিছু পানচাষি অভিন্ন সুরে জানান, সম্প্রতি এলাকার প্রতিটি পানবরজেই দেখা দিয়েছে লতাপচা রোগ। চোখে মুখে হতাশার ছাপ নিয়ে পানচাষিরা আরো বলেন, আমাদের ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ থেকে শুরু করে সবকিছুই করতে হয় পান বিক্রির আয় থেকে। ফলে আমরা পানবরজের ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল। এ ছাড়া এই এলাকার প্রায় ৪০ ভাগ মানুষ পানবরজে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। তারাও আজ বেকার হয়ে পড়েছে। দামুড়হুদা উপজেলা সদরের দশমীপাড়ার পানচাষি আক্তার, সরফরাজ ও হোসেনসহ বেশকিছু পানচাষি জানান, চলতি মরসুমে উপজেলার অধিকাংশ পানবরজেই দেখা দিয়েছে লতাপচা রোগ। এ ছাড়াও পানগাছের মূল শেকড়, গেরো ও ফাঁপ পচে পান লালবর্ণ ধারণ করেছে এবং গাছ শুকিয়ে এলাকার শ শ বিঘা পানবরজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ছত্রাকনাশক স্প্রে করা হলেও টানা বর্ষণে কোনো কাজ হচ্ছে না।

এ বিষয়ে দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি অফিসার সুফি মো. রফিকুজ্জামান বলেন, পানচাষ করতে হয় উঁচু জমিতে এবং মাটি হতে হবে দোআশ। যেখানে কখনওই পানি জমবেনা। কিন্ত আমাদের পানছাষিরা অপরিকল্পিতভাবে যেখানে সেখানে পানবরজ গড়ে তোলে। অপরিকল্পিতভাবে পানবরজ তৈরি, মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার প্রয়োগ ও সেচ দেয়ার কারণেই এ সমস্যা দেখা দিয়েছে। আর টানা বর্ষণের ফলে অনেক পানবরজে পানি জমে পানগাছের মূল শেকড় পচে গেছে। পরামর্শ হিসেবে তিনি আরো বলেন, যে সমস্ত পানবরজে এ সমস্যা দেখা দিয়েছে ওই সমস্ত পানগাছের গোড়ায় জীবাণু আছে। বিধায় পুরো পানবরজ পরিষ্কার করে ফেলতে হবে। প্লাবন সেচ না দিয়ে হালকা সেচ দিতে হবে। রাসায়নিক সার ব্যবহার করা যাবে না। রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সার, কেঁচো সার ব্যবহার করতে হবে। পানবরজে কোনো জীবাণু আক্রমণের আগেই তা ধ্বংস করে ফেলতে হবে। বিভিন্ন ছত্রাকনাশক ওষুধ স্প্রে করতে হবে। এ ছাড়া পানবরজে যেকোনো সমস্যা দেখা দেয়া মাত্রই কৃষি বিভাগের সাথে দ্রুত যোগাযোগ করতে হবে। কারণ শুরুতেই রোগ নির্ণয়সহ প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও প্রতিকারের ব্যবস্থা করতে পারলে এ ধরনের সমস্যা থেকে পানচাষিরা মুক্তি পাবে।