স্টাফ রিপোর্টার: রাজধানীতে আবারও কর্মস্থল থেকে ঘরে ফেরার পথে গণধর্ষণের শিকার হলেন এক কিশোরী। তিনি স্বপ্ন সুপার শপের উত্তরা এলাকার একটি কেন্দ্রের বিপণনকর্মী। মাত্র দুমাস হল এ কিশোরী ঢাকায় এসেছেন। বোনের বাসায় থেকে তিনি স্বপ্নে এক মাস ধরে চাকরি করছেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে কর্মস্থল থেকে আজমপুরের বাসায় ফেরার পথে ওই কিশোরী গণধর্ষণের শিকার হন। এ ঘটনায় আরিফ নামে এক সহকর্মীর নাম বলেছেন তিনি। আরিফকে ৱ্যাব আটক করেছে। পাশাপাশি যে ভবনে কিশোরীকে নির্যাতন করার অভিযোগ আনা হয়েছে সে ভবনের নিরাপত্তাকর্মী ও সন্দেহভাজন আরও দুজনকে পুলিশ আটক করেছে। গত ২১ মে কুড়িলে একই কায়দায় গারো তরুণীকে নির্যাতন করা হয়েছিলো।
উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে গণধর্ষণের শিকার ওই কিশোরী উত্তরা পশ্চিম থানায় তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এ মামলায় কিশোরী তার সহকর্মী মোহাম্মদ আরিফের নাম উল্লেখ করেছেন। পাশাপাশি অজ্ঞাত আরও দু ব্যক্তি তাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। তাদেরও অভিযুক্ত করা হয়। কিশোরীর অভিযোগের পর ৱ্যাব শুক্রবার সকালে উত্তরা থেকে আরিফকে আটক করে। পরে থানা পুলিশ দু সন্দেহভাজন ছাড়াও এক নিরাপত্তা প্রহরীকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। কিন্তু নির্যাতিতা কিশোরীর অভিযোগের সাথে ৱ্যাবের হাতে আটক আরিফের তথ্যে গরমিল পাওয়া যাচ্ছে। দুজনের কাছে দু ধরনের তথ্য পান ৱ্যাব কর্মকর্তারা। কিশোরী কিছু তথ্য গোপন করেছেন বলে সন্দেহ করছেন ৱ্যাব ও পুলিশের কর্মকর্তারা। বর্তমানে ওই কিশোরীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করা হয়েছে। সেখান থেকে তাকে তেজগাঁওয়ে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে নেয়া হবে।
সতেরো বছর বয়সী কিশোরীর অভিযোগ, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে তিনি তার কর্মস্থল উত্তরার রাজলক্ষ্মী শপিং কমপ্লেক্স মার্কেটের স্বপ্ন সুপার শপ কেন্দ্র থেকে বের হন। এ সময় রাজলক্ষ্মী কমপ্লেক্সের কাছে তিনজন যুবক তাকে জোর করে একটি পাঁচতলা ভবনের নিচতলায় নিয়ে যায়। সেখানে পালাক্রমে তাকে ধর্ষণ করা হয়। পরে অসুস্থ অবস্থায় তরুণী বোনের বাসায় ফিরে আসেন।
নির্যাতিতা কিশোরীর দুলাভাই জানান, তার শ্যালিকা দু মাস আগে ঢাকা এসে উত্তরার আজমপুরে ১২ নম্বর সেকশনের এক নম্বর রোডে তার বাসায় ওঠে। মাসখানেক ধরে সে স্বপ্ন সুপার শপে বিপণনকর্মী হিসেবে চাকরি করছে। তিনি বলেন, প্রতিদিন সে (কিশোরী) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে কর্মস্থলে যায়। রাত সাড়ে ৮টা-৯টার মধ্যে বাসায় ফিরে আসে। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে তার বাসায় ফিরতে দেরি হচ্ছিলো। তিনি বলেন, সে ঢাকায় নতুন এসেছে তাই খুব চিন্তাও হচ্ছিলো। পরে খোঁজ নিতে আমি তার কর্মস্থলে যাই। কিন্তু কর্মস্থল থেকে বলা হয়েছে সে বাসায় যেতে বের হয়েছে। পরে তাকে না পেয়ে আমি বাসায় ফিরে যাই। থানা পুলিশকে ঘটনাটি জানানোর পরিকল্পনার একপর্যায় রাত সাড়ে ১১টার পর সে বাসায় ফিরে নির্যাতনের ঘটনা খুলে বলে। তারপর রাত ৩টার দিকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
নির্যাতিতা কিশোরী জানান, তাকে নির্যাতনের পর যুবকরা ছেড়ে দেয়। পরে সে একটি রিকশা নিয়ে বোনের বাসায় যান। কিন্তু ৱ্যাবের হাতে আটক কিশোরীর সহকর্মী আরিফ বলছে ভিন্নকথা। যা কিশোরীর বক্তব্যের সাথে মিলছে না। আরিফ বলছে, সে কিছুই করেনি। বের হওয়ার আগে সহকর্মী কিশোরীর সাথে তার ফোনে কথা হয়েছিলো। তারা পাশের একটি নির্মাণাধীন ভবনের সামনে দেখা করে। এ সময় ওই ভবনে দুজন যুবক আসে। তারা তাকে (আরিফ) জিজ্ঞেস করে তোমরা এখানে কেন? তখন ওই যুবকরা তাকে (আরিফ) সেখান থেকে সরে যেতে বলে। একপর্যায়ে দু যুবক কিশোরীকে নিয়ে ভবনের ওপরে চলে যায়।
আরিফ ৱ্যাবকে আরও জানায় যে, সে প্রায় ১৫ মিনিট অপেক্ষার পর তার সহকর্মী নিচে নেমে আসে। পরে সে রিকশা নিয়ে বাসার দিকে চলে যায়। ৱ্যাব কর্মকর্তারা জানান, আরিফের এ কথা অনুযায়ী ১৫ মিনিটের ব্যবধানে গণধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এখন আরিফ না কিশোরী সত্য বলছে তা নিয়ে বিশ্লেষণ চলছে।
ৱ্যাব-১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ বলেন, আমরা উভয়ের তথ্য পর্যালোচনা করছি। আরিফ ও কিশোরীর তথ্য এখনও স্পষ্ট নয়। উত্তরা-পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী হোসেন জানান, তরুণীর বক্তব্যকে প্রাধান্য দিয়েই মামলা দায়ের হয়েছে। এতে আরিফসহ অজ্ঞাত পরিচয়ে আরও তিন যুবককে আসামি করা হয়েছে। তিনি জানান, ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর পুলিশ ধর্ষকদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছে। আজ কিশোরীর ডাক্তারি পরিক্ষা করা হবে বলে জানান তিনি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উত্তরা থানার ওসি (তদন্ত) বিপ্লব কিশোর শীল বলেন, কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাছাড়া আটক আরিফের সাথে কিশোরীর পূর্বপরিচয় ছিলো। এ পরিচয়ের সূত্র ধরে তারা ওই ভবনের সামনে একে অপরের সাথে দেখা করে।
তরুণীর ভাই জানান, তাদের গ্রামের বাড়ি বরিশালের বাবুগঞ্জের কেদারপুরে। তার বোন গ্রামের স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাস করেছে। পারিবারিক অভাব অনটনের কারণে আর পড়ালেখা করতে পারেনি। তাই সংসারের সচ্ছলতার জন্য সে কাজ করতে মাত্র দু মাস আগে ঢাকায় আসে। তিনি এ ঘটনায় দোষীদের গ্রেফতার ও সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।