মাথাভাঙ্গা মনিটর: হয়তো দক্ষিণ আফ্রিকা আর কখনোই এলো না বাংলাদেশ সফরে। বাংলাদেশরও খেলতে যাওয়া হলো না ইংল্যান্ড কিংবা অস্ট্রেলিয়ায়। নিকট ভবিষ্যতে না হলেও হয়তো একদিন এমনটাই হয়ে যাবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ছবি! হয়তো ফুটবলের পথই অনুসরণ করবে ভবিষ্যতের ক্রিকেট। খেলাটি হয়ে যাবে ক্লাব কেন্দ্রিক। আর বড় টুর্নামেন্ট কেন্দ্রিক হবে আন্তর্জাতিক ম্যাচ।
ক্রিকেটের সাথে সংশ্লিষ্ট অনেকেই এমনটাই মনে করেন। এখন খোদ আইসিসিও দ্বিপক্ষীয় সিরিজ-ভিত্তিক ক্রিকেটের ভবিষ্যত নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলাটা হয়ই মূলত দ্বিপক্ষীয় সিরিজ-ভিত্তিক। ক্রিকেট খেলুড়ে দলগুলো পালাক্রমে এ-দেশ, ও-দেশ সফর করে। সফর-ফিরতি সফর এভাবেই চলে। কিন্তু ২০০৮ সালে ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লিগ বা আইপিএলের উত্থানের পর বদলে যেতে শুরু করেছে ক্রিকেটের ওই প্রথাগত মানচিত্র। ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ফ্র্যাঞ্চাইজি ভিত্তিক ক্রিকেট। আর জনপ্রিয়তা মানেই তো ব্যবসায়িক সফলতা। টি-টোয়েন্টি লিগগুলোর উত্থানের এই প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ডেভ রিচার্ডসন।
ক্রিকইনফোকে দেয়া সাক্ষাৎকারে আইসিসির প্রধান নির্বাহী বাস্তবতা স্বীকার করে বলেছেন, ভীষণ জনপ্রিয়, দীর্ঘ ঐতিহ্যও আছে অ্যাশেজের মতো এমন সিরিজ, ভারত এবং পূর্ণ সদস্যগুলোর মধ্যকার সিরিজ ছাড়া বাকি সব দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হচ্ছে না। বেশির ভাগ সিরিজ, বিশেষ করে টেস্ট ক্রিকেটে দর্শকের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এই সিরিজগুলো থেকে আয়ও বাড়ছে না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের দৃশ্যপট যে বদলে যাচ্ছে, সেটাও উঠে এলো তার কথায়। বললেন, সময়ের সাথে সাথে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের দৃশ্যপট বদলেছে। বিশেষ করে গত কয়েক বছরে আইপিএল, বিগ ব্যাশ, সিপিএলের মতো ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি লিগগুলোর দারুণ সাফল্যের কারণে। আইসিসির জন্যও সুখের খবর দিয়েছে গত কয়েক বছরের চিত্রটা। কিন্তু সেই চিত্রটি বলছে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট এখন বড় টুর্নামেন্টগুলোতেই আর্থিকভাবে সফল। রিচার্ডসন বলেছেন, ‘আইসিসির বড় আয়োজন যেমন বিশ্বকাপ, চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ নিয়ে আগ্রহ ও গুরুত্বও বেড়েছে গত আট বছরে। আইসিসির বড় আয়োজন আর টি-টোয়েন্টি লিগের এ ক্রমবর্ধমান সাফল্য কিন্তু চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিচ্ছে দ্বিপক্ষীয় সিরিজকে।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে এখনই শুধুমাত্র বড় টুর্নামেন্টের মধ্যে রাখার পক্ষে না আইসিসিও। কিন্তু হাতে গোনা কিছু সিরিজ বাদ দিয়ে বেশির ভাগ সিরিজই যখন ‘অর্থহীন’ হয়ে পড়ছে, সেটা তো আইসিসিকে ভাবাবেই। রিচার্ডসন জানিয়েছেন, এ নিয়ে আইসিসি ভাবছেও। বেশ কিছু পরিকল্পনাও করা হয়েছে।
সমস্যা হলো, ক্রিকেট বেশ জনপ্রিয় এমন দেশের সংখ্যা সাত কি আটটি। এর মধ্যে বড় হিসেবে ছয়টি দল অদৃশ্য এক রেখায় নিজেদের আলাদা করে রাখে। এরাই ঘুরে-ফিরে সিরিজ খেলে। একই দল বারবার পরস্পরের মুখোমুখি হলে সেই সিরিজ নিয়েও তো মানুষের আগ্রহে ভাটা পড়বে।
তবে এটা বোধ হয় বাস্তবতাই, ক্রিকেটটা ক্লাব বা ঘরোয়া দল কেন্দ্রিক খেলাই হয়ে যাবে এক সময়। যেমনটা হয়ে গেছে ফুটবল, বেসবল, বাস্কেটবলের মতো জনপ্রিয় খেলাগুলোতে।